শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
ছিঁড়ে গেছে সাবমেরিন ক্যাবল

২০ দিন ধরে বিদ্যুৎহীন চরাঞ্চল

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

পদ্মা নদীর তলদেশে সাবমেরিন ক্যাবল ছিঁড়ে যাওয়ায় ২০ দিন ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের চরাঞ্চল সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার নদীতীরবর্তী ছয় গ্রাম অন্ধকারে রয়েছে। চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ওই এলাকার মানুষ। জানা গেছে, প্রায় ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার দুটি ইউনিয়নে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয় পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি। সূত্রমতে, সদর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের চাটাইডুবী বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র এলাকার মীরেরচর থেকে বাতাস মোড় পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার এবং বাতাস মোড় থেকে নিশিপাড়া পর্যন্ত পদ্মা নদীর তলদেশ দিয়ে ১৩ দশমিক ৮ কিলোমিটার সাবমেরিন ক্যাবল এবং ১০৭ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে পদ্মা নদীর চরে বিদ্যুৎ সরবরাহের উদ্বোধন করা হয় ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে। এতে দুই উপজেলার ৪ হাজার ২০০ গ্রাহক বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আসে। কিন্তু মাত্র ১৭ মাসের মাথায় ৪০ কিলোমিটার সাবমেরিন ক্যাবলের ৩টি ফেজের মধ্যে ১টি ফেজের সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং ১৩ দশমিক ৮ কিলোমিটার ক্যাবলের দুই দফায় ৩টি ফেজের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় গত ১০ সেপ্টেম্বর। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের চরলক্ষ্মীপুর, দক্ষিণ পাঁকা, নিশিপাড়া চর ও কদমতলা এবং উজিরপুর ইউনিয়নের সেতারাপাড়া। এ ছাড়া সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের সূর্যনারায়ণপুরে বিদ্যুৎসেবা বন্ধ হয়ে যায়। এমন অবস্থায় চরাঞ্চলে মাত্র ২ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় রয়েছে এবং বাকি প্রায় ২ হাজার ২০০ গ্রাহক দুই সপ্তাহেরও বেশি দিন ধরে বিদ্যুৎসেবা বন্ধ থাকায় তারা জমিতে সেচ দিতে পারছেন না। বাড়তি খরচে জ্বালানি তেলে শ্যালো টিউবওয়েলে সেচ দিতে হচ্ছে। এ ছাড়া অনলাইন মোবাইল ব্যাংকিং, মোবাইল ফোনের চার্জ, নেটওয়ার্ক সেবার পাশাপাশি সরিষা, ধান ও গম ভাঙানো মেশিনও বন্ধ রয়েছে। এতে ওই এলাকার মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তারপরও এর সমাধান দিতে অথবা কবে নাগাদ এ সংকট নিরসন হবে তা বলতে পারছে না পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি। তবে সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (টকনিক্যাল) ফিরোজ কবির বলেন, চরের ৬০০ গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে এবং সদর উপজেলার চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। এদিকে পাঁকা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মালেক বলেন, সমস্যার কথা জানানোর পরও পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি কর্তৃপক্ষ সদুত্তর দিতে পারেনি। তিনি আরও বলেন, এ মাসের শুরুর দিক থেকেই সাবমেরিন ক্যাবলের দুটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরও কর্তপক্ষ কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় কয়েকদিনের মধ্যে বাকি দুটি সংযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এতে লোডশেডিংয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তবু এলাকায় কিছু সময়ের জন্য বিদ্যুৎ এলেও মোবাইল ফোনে চার্জসহ অন্য কাজ করা যেত। কিন্তু গত ২০ দিন ধরে চরাঞ্চলে কোনো বিদ্যুৎ নেই। এতে এলাকার মানুষ পদে পদে ভোগান্তিতে পড়েছেন। এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার ছানোয়ার হোসেন বলেন, গত ১০ সেপ্টেম্বর রাতে সাবমেরিন ক্যাবলের তার ছিঁড়ে যাওয়ার খবর পেয়েছি। তাই প্রায় ৭০ কোটি টাকার প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পটি সচল রাখতে কারিগরি সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানের সিংহভাগ জনবল আরেক জায়গায় কাজ করছে। ফলে এখানকার সাবমেরিন ক্যাবলটি মেরামতে সময় লাগতে পারে। আপাতত তাদের কিছুই করার নেই বলেও জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর