শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

বিয়ের ১৪ বছর পর স্বামী জানলেন স্ত্রী অবৈধ!

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

দুই পরিবারের মতেই বিয়ে। দুই সন্তানও রয়েছে। কিন্তু নিজের স্ত্রী যে একজন অবৈধ অনুপ্রবেশকারী সেটা জানলেন বিয়ের ১৪ বছর পর। এরপরই স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা ঠুকলেন পেশায় ব্যবসায়ী এক ভারতীয় নাগরিক। আদালতের কাছে তার আরজি- দুই সন্তানকে উদ্ধার করে তাদের বাবার কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হোক, সেই সঙ্গে ভারতীয় আইন অনুযায়ী অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হোক। স্বামীর দাবি, তাকে ব্যবহার করেই ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার লোভেই ওই নারী নিজের আসল পরিচয় গোপন করে তাকে বিয়ে করেছিলেন। জানা গেছে, পেশায় লেদার ব্যবসায়ী পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলের বাসিন্দা ৩৭ বছর বয়সী তাবিশ এহসানের সঙ্গে এক বিয়ে বাড়িতে পরিচয় হয় নাজিয়া আমব্রিন কুরেশি (নাজিয়া কুরেশি) নামে এক নারীর। নাজিয়া সেসময় নিজেকে ভারতের উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা বলে পরিচয় দেন। এরপর দুই পরিবারের মতে, ২০০৯ সালে তাদের বিয়ে হয়। ২০২২ সাল পর্যন্ত সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল। যদিও ওই বছরের নভেম্বর মাসেই জানতে পারেন স্ত্রী ভারতীয় নয় বাংলাদেশি। এ বিষয়ে গত বুধবার সরব ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের একটি প্রতিবেদনে তাবিশ এহসানের বরাত দিয়ে একটি খবর প্রকাশ হয়। তাতে তাবিশ উল্লেখ করেন, ‘একটি বিয়ে বাড়িতে আমাদের দুজনের পরিচয় হয়েছিল। পরে দুই পরিবারের সম্মতিতে ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর আমরা বিয়ে করি। বিয়ের সময় নাজিয়া আমাকে জানিয়েছিল সে উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা, উত্তরপ্রদেশেই বড় হয়েছেন। সেখানকার দেউড়িয়া নামক জায়গায় থেকে দশম শ্রেণি এবং দ্বাদশ শ্রেণির স্কুলের সনদ দেখান। ওটা দেখেই আমি বিয়ে করি। স্বাভাবিকভাবেই তার কথাবার্তায় এবং তার নাগরিকত্ব নিয়ে আমার কোনোদিন সন্দেহ হয়নি। কিন্তু তাদের দ্বিতীয় সন্তান জন্মের সময় তার অস্বাভাবিক ব্যবহার দেখেই সন্দেহ হয়।’ তাবিশ আরও উল্লেখ করেছেন, ‘আমাদের দ্বিতীয় সন্তান জন্মের আগে হঠাৎ করে সে উত্তরপ্রদেশে বাপের বাড়িতে চলে যায়। সেখান থেকে ফোনে জানায়, সে আর আমার সঙ্গে সংসার করবে না। এমনকি আমাকে হুমকিও দেয়। পরে আমার বিরুদ্ধে ভারতীয় আইনের ৪৯৮এ ধারায় বধূ নির্যাতনের মামলা করে। সেই মামলায় কলকাতার আলিপুর আদালত থেকে জামিন পাই। আর ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে আমি জানতে পারি নাজিয়া ভারতীয় নাগরিক নন, তিনি একজন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী।’ গত বুধবার আলিপুর আদালতে এ সম্পর্কিত একটি মামলায় শুনানিতে হাজির হয়ে তাবিশ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন ‘আমি যখন আমার এক আত্মীয়ের কাছ থেকে সে (নাজিরা) নাগরিকত্বের বিষয়টি জানতে পারলাম তখন খুব অবাক হয়েছিলাম। আরও জঘন্য বিষয় যে, এর আগে ২০০২-০৩ সালে বাংলাদেশে মমিনুল নামে এক শিক্ষককে বিয়ে করেছিলেন নাজিরা। সেখানেও আগের স্বামীর বিরুদ্ধে ভুয়া মামলা করে, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তাকে বিবাহবিচ্ছেদ দিতে একপ্রকার বাধ্য করেন। এরপরই গোটা পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে কোনোরকম বৈধ পাসপোর্ট বা ট্রাভেল ভিসা না নিয়েই নাজিয়ার পরিবার ভারতে চলে আসে। আর ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে আমাকে ব্যবহার করেছে তার পরিবার।’ উল্লেখ্য, গোটা বিষয়টি সামনে আসার পরই কলকাতার তিলজোলা থানায় নাজিয়া কুরেশি এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন তাবিশ। ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০বি, ৪৬৫, ৪৬৭, ৪৭১, ৩৬৩ এবং বিদেশি নাগরিক আইনের ১৪এ(বি) ধারা, পাসপোর্ট আইনের ১৭ ধারায় মামলা করা হয়েছে। মামলাটি এখন বিচারাধীন। কিন্তু অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সব নথি আলামত জমা দেওয়ার পরেও পুলিশের ভূমিকায় এক প্রকার হতাশ অভিযোগকারী তাবিশ। তার অভিযোগ, পুলিশ সবকিছু জেনেও কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

 

সর্বশেষ খবর