রবিবার, ১ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

হাজার কোটি টাকা ফেরত অনিশ্চিত

এমটিএফই অ্যাপস কেলেঙ্কারি, তদন্ত করছে বিএফআইইউ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

হাজার কোটি টাকা ফেরত অনিশ্চিত

দুবাইভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ গ্রুপ-এমটিএফই ডিজিটাল প্রতিষ্ঠানের মতো কার্যক্রম পরিচালনা করলেও দেশে এর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো না থাকায় ব্যবস্থা নিতে পারছে না বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এমএলএম কোম্পানির মতো কার্যক্রম পরিচালনা করলেও- নিবন্ধিত না হওয়ায় দায় নিচ্ছে না রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস (আরজেএসসি)। এ পরিস্থিতিতে প্রতারণার বিষয়টি বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) তদন্ত করলেও-এমটিএফইর ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহক, যারা প্রতিষ্ঠানটিতে বিনিয়োগ করেছেন, তাদের অর্থ ফেরত নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। অ্যাপসের মাধ্যমে বিভিন্ন লোভনীয় অফার প্রচার করে হাজার হাজার গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছে দুবাইভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এমটিএফই। শরিয়াসম্মত প্ল্যাটফরম হিসেবে ব্র্যান্ডিং করে এতে বিনিয়োগের মাধ্যমে ক্রিপ্টোকারেন্সি, বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন ও এমএলএম কোম্পানির মতো বিভিন্ন পণ্য কিনে লাভবান হওয়ার প্রলোভন দেখানো হয় সাধারণ মানুষকে। বিনিয়োগকারীরা নতুন গ্রাহক বিনিয়োগে আনতে পারলে অতিরিক্ত বোনাস ও কমিশন দেওয়ারও অফার ছিল। ফলে অ্যাপস থেকে অ্যাপসে নীরবে এর কার্যক্রম রাজশাহী, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ ছাড়াও নাইজেরিয়া ও শ্রীলঙ্কাতেও অসংখ্য মানুষ এই অ্যাপসে বিনিয়োগ করেন। গত ১৭ আগস্ট অ্যাপ্লিকেশনটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের অর্থ আটকে যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএফআইইউর এক কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, আমরা এমটিএফই নিয়ে কাজ করছি। যেহেতু প্রতিষ্ঠানটির দেশে কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছিল না, ফলে ভার্চুয়াল মাধ্যমে সংঘটিত এই প্রতারণায় আর্থিক পরিমাণ সুনির্দিষ্ট করা কঠিন। এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

সূত্রগুলো জানায়, এমটিএফই কেলেঙ্কারি নিয়ে পৃথকভাবে তদন্ত করছে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও। সিআইডির সাইবার ইন্টেলিজেন্স টিম বিষয়টি নজরদারি করছে। এ জন্য ভুক্তভোগী গ্রাহক ও প্রতারক চক্রের তথ্য এবং অভিযোগ জানাতে সিআইডি সাইবার সাপোর্ট সেন্টারে যোগাযোগ করার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। তবে তাতেও অর্থ ফেরতের অনিশ্চয়তা কাটছে না। যেহেতু প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম কোনোভাবেই বৈধ ছিল না। ফলে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীরা আইনি জেরার ভয়ে অর্থ ফেরতের বিষয়ে তথ্য দিচ্ছেন না। ডিজিটাল প্রতারণার বিষয়গুলো দেশের পৃথক পৃথক প্রতিষ্ঠান তদন্ত করলেও ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের অর্থ ফেরতের বিষয়টি সমন্বয় করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল কমার্স সেল। এরই মধ্যে ইভ্যালি, কিউকমসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কয়েক শ কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্তদের ফেরতও দিয়েছে। জানা গেছে, এমটিএফই কেলেঙ্কারির পর ডিজিটাল কমার্স সেল পেপারকাটিংসহ এ বিষয়ে একটি নথি উত্থাপন করে-তা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠান। ওই নথির সূত্র ধরে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জন্য আরজেএসসিতে চিঠিও পাঠানো হয়। আরজেএসসি জানিয়েছে, এমটিএফই নামের কোনো প্রতিষ্ঠানকে তারা নিবন্ধন দেয়নি। ফলে অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তাদের কিছু করার নেই। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ দেশের বাইরে থাকায় এ বিষয়ে তাঁর মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মালেকা খায়রুন্নেছা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, এমটিএফইর নথিটি তাঁর কাছে উপস্থাপন করা হলেও এ বিষয়ে সর্বশেষ অগ্রগতি তাঁর জানা নেই। তিনি বাণিজ্য পরামর্শকের দফতরে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। ওই দফতরের পরিসংখ্যান কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, এমটিএফইর অর্থ ফেরত নিয়ে জাতীয় সংসদ থেকে তাদের কাছে প্রশ্নোত্তর জানতে চাওয়া হয়েছিল; তারা সংসদকে জানিয়েছেন, এমএলএম কোম্পানির লাইসেন্সিং কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে এবং এ বিষয়ে আদালতে মামলা চলমান। ফলে আদালতের নির্দেশনা ছাড়া তারা এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেন না।

সর্বশেষ খবর