রবিবার, ১ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

কর্ণফুলীতে চোরাই তেলের শত কোটি টাকার বাণিজ্য

♦ সক্রিয় অর্ধশত তেল চোর চক্র ♦ সরকার হারাচ্ছে বিপুল রাজস্ব

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

কর্ণফুলী নদীতে সক্রিয় অর্ধশত তেল চোর চক্র। চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারী দেশি-বিদেশি জাহাজ থেকে এ চক্রের সদস্যরা প্রতি মাসে লোপাট করছে শত শত কোটি টাকার জ্বালানি তেল। এ চক্রের তেল চুরির কারণে একদিকে যেমন জাহাজ মালিক কর্তৃপক্ষ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, অন্যদিকে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। চট্টগ্রামের সদরঘাট নৌ-থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একরাম উল্লাহ বলেন, ‘তেল চোর চক্রের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে নৌ-পুলিশ। প্রতি মাসে দুই থেকে তিনটি মামলাও দায়ের হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি তেল চোরদের নিয়ন্ত্রণ করতে।’ জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য আসে বিভিন্ন ধরনের জাহাজ। বিশে^র বিভিন্ন দেশ থেকে আসা এসব জাহাজ নিজেদের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি জ্বালানি তেল নিয়ে আসে। অতিরিক্ত তেল স্থানীয় চোর চক্রের সদস্যদের কাছে কম দামে বিক্রি করে দেয়। চোরাই ভাবে এ তেল দেশে প্রবেশের কারণে সরকারকে শুল্ক পরিশোধ করতে হয় না। তাই অনেক কম দামে চোরাই তেল খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে। সূত্রমতে, প্রতিদিন কর্ণফুলী নদীতে ৫০ থেকে ৮০ হাজার লিটার চোরাই তেলের ব্যবসা হয়। এসব তেলের মূল বিক্রেতা বিদেশি জাহাজ, দেশি কার্গো ভ্যাসেল, সরকারি বিভিন্ন সংস্থার জাহাজ, ব্যক্তিমালিকানাধীন ফিশিং ট্রলার ও নৌকা। তেল চোর চক্রের সদস্যরা জাহাজ থেকে প্রতি লিটার তেল ৪৩ থেকে ৪৫ টাকায় কেনেন। পরে সেই তেল পাইকারদের কাছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা লিটার দরে বিক্রি করেন। তাদের কাছ থেকে একশ্রেণির ডিপো মালিক ৬৮ থেকে ৭০ টাকায় লিটার দরে কিনে নেন। সূত্র আরও জানান, জাহাজ থেকে চোরাই তেল কেনার পর তা কর্ণফুলী নদীর কমপক্ষে ১৫ পয়েন্টে খালাস হয়। এর মধ্যে ১৫ নম্বর মেরিন একাডেমি ঘাট, ১৪ নম্বর কালুমাঝির ঘাট, ১৩ নম্বর ঘাট, ১২ নম্বর টেইগ্যার ঘাট, ১১ নম্বর মাতব্বর ঘাট, বাংলাবাজার ঘাট, অভয় মিত্র ঘাট, সদরঘাট ও ফিশারিঘাট অন্যতম। কর্ণফুলী নদীতে তেল চোর চক্রে রয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তাসহ কমপক্ষে অর্ধশত ব্যক্তি। এ চক্রের নেতৃত্বে রয়েছেন কর্ণফুলী থানার জুলধা ইউনিয়নের তেল শুক্কুর, পতেঙ্গার বার্মা ইউসুফ, চরপাথরঘাটার খোরশেদ ও আলী, শিকলবাহার নুরুচ্ছফা, রফিক, জাফর ইকবাল, জিয়া, জসিম, মহিউদ্দিন, তৈয়ব, বেলাল, হোসেন, নতুন ব্রিজ এলাকার সিসা হারুন, বেনসন নাছির, আনছার হাজি, মাঝিরঘাট এলাকার আমির, কাদের, বাংলাবাজার এলাকার রফিক এবং পতেঙ্গা সৈকত এলাকার এক যুবলীগ নেতা। এ চোরাই তেল ঘিরে কর্ণফুলী ও আশপাশ এলাকায় গড়ে উঠেছে বেশ কিছু অবৈধ ডিপো। জাহাজ থেকে চোরাই এসব তেল চলে আসে চক্রের ডিপোয়। পরে এসব তেল স্থানীয় বিভিন্ন পেট্রোল পাম্প ও জাহাজে বাংকারিং করা হয়।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের একাধিক সূত্র জানান, দেশে জ্বালানি তেল আমদানি ও বিক্রির নিয়ন্ত্রণ পুরোটাই সরকারিভাবে করা হয়। পাশাপাশি নিজেদের তেল বিপণন কোম্পানির মাধ্যমে বাজারজাত করে। প্রচলিত আইনে জ্বালানি তেল আমদানি বা বাজারজাতের সুযোগ নেই। অথচ আইন ভঙ্গ করে চোরচক্র দেশি-বিদেশি জাহাজ থেকে অবৈধভাবে তেল এনে বাজারজাত করছে। এতে সরকার প্রতি বছর শত শত কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর