রবিবার, ১ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

সাগর উত্তাল পর্যটক আটকা সেন্টমার্টিনে

টেকনাফ, কক্সবাজার ও বাগেরহাট প্রতিনিধি

লঘুচাপের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। এ কারণে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত জারি করা হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ, স্পিডবোট, সার্ভিস ট্রলারসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এর ফলে সেন্টমার্টিন দ্বীপে অবস্থান করা ৩ শতাধিক পর্যটক আটকা পড়েছেন। একই সঙ্গে সাগরে ইলিশ আহরণও বন্ধ রাখা হয়েছে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে গতকাল দুপুরের পর থেকে কক্সবাজারে বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। সাগর উত্তাল থাকায় টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে নৌযান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আবহাওয়া অধিদফতর থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত এই পথে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে দ্বীপে আটকা পড়া পর্যটকদের যাতে কোনো ধরনের অসুবিধা না হয়, তা নিয়ে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আটকা পড়া পর্যটকদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমভি বারো আউলিয়া জাহাজের একজন টিকিট বিক্রেতা জানান, শুক্রবার সকালে টেকনাফের দমদমিয়া জেটিঘাট থেকে এমভি বারো আউলিয়া জাহাজে করে ৮৫২ জন পর্যটক সেন্টমার্টিনে বেড়াতে যান। দুপুরের পর থেকে জাহাজটিতে প্রায় ৬০০ পর্যটক টেকনাফে ফিরে এলেও অন্যরা রাতযাপনের জন্য দ্বীপে অবস্থান করছেন। সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, বৃহস্পতি ও শুক্রবার সেন্টমার্টিনে বেড়াতে আসা কয়েক শ পর্যটক দ্বীপে আটকা পড়েছেন। সেন্টমার্টিন থেকে টেকনাফে পারিবারিক কাজে যাওয়া দেড় শতাধিক স্থানীয় বাসিন্দাও টেকনাফে আটকা আছেন। হঠাৎ করে সাগরে লঘুচাপের প্রভাবে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে উত্তাল সাগরে টিকতে না পেরে ইলিশ আহরণ বন্ধ করে সুন্দরবনসহ উপকূলের মৎস্য বন্দরগুলোতে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে হাজার হাজার ফিশিং ট্রলার। বন্ধ হয়ে গেছে সাগরে ইলিশ আহরণ। এ ছাড়া বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলা, আলোরকোল ও চরখালী এলাকার বনের ওপর দিয়ে ৪ ফুট উচ্চতায় জোয়ারের পানি প্রবাহিত হচ্ছে। উপকূলজুড়ে দুই দিন ধরে বৈরী আবহাওয়ায় বাগেরহাটসহ সুন্দরবনের ওপর দিয়ে থেমে থেমে ভারী বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। এদিকে বৈরী আবহাওয়া ও পূর্ণিমার প্রভাবে স্বাভাবিকের তুলনায় ৩ থেকে ৪ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে সুন্দরবনের কটকা, কচিখালী করমজল পর্যটন কেন্দ্র। উপকূলের নিম্নাঞ্চলও প্লাবিত হয়েছে। সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলা জেলেপল্লী টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ জানান, বঙ্গোপসাগরের গভীর থেকে বড় বড় ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে সুন্দরবনের দুবলার চর ও আলোরকোলে। সুন্দরবনে ভারী বৃষ্টির পাশাপাশি ঝড়ও বয়ে যাচ্ছে। স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৪ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে সুন্দরবন। বনরক্ষীরা সবাই সাইক্লোন শেল্টারে অবস্থান করছেন।

কটকা অভয়ারণ্য এলাকা, অফিস এলাকা তুলনামূলক উঁচু হলেও সেখানেও জোয়ারের পানিতে অফিস চত্বর ও বন তলিয়ে গেছে। সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাওলাদার আজাদ কবির জানান, স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ ফুট উচ্চতার পানিতে প্লাবিত হয়েছে করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রটি। তবে এই কেন্দ্রের বন্যপ্রাণী এখনো নিরাপদ রয়েছে। সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) শেখ মাহাবুব হোসেন জানান, বৈরী আবহাওয়ায় সাগর অশান্ত হয়ে ওঠায় শত শত ফিশিং ট্রলার সুন্দরবনের বিভিন্ন খালে আশ্রয় নিয়েছে। এসব ফিশিং ট্রলারে থাকা জেলেদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার বনরক্ষীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

 

সর্বশেষ খবর