সোমবার, ২ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

রাজপথ না ছাড়ার ঘোষণা

ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ বিএনপির রোডমার্চ

প্রতিদিন ডেস্ক

রাজপথ না ছাড়ার ঘোষণা

বিএনপির রোডমার্চে নেতা-কর্মী সমর্থকরা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

সরকার পতনের এক দফা দাবিতে গতকাল ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ অভিমুখে রোডমার্চ কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। সকাল সাড়ে ১১টায় ময়মনসিংহের ত্রিশাল বগারবাজার থেকে উদ্বোধনী সমাবেশের পর রোডমার্চ শুরু হয়। রাত ৮টার দিকে রোডমার্চ কিশোরগঞ্জে পৌঁছে। এ সময় নেতারা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ না ছাড়ার ঘোষণা দেন।

এ কর্মসূচিতে ছিল ১১৪ কিলোমিটার পথে ময়মনসিংহের চুরখাই বাজার, স¤ভুগঞ্জ চায়না মোড়, ঈশ্বরগঞ্জ, ময়মনসিংহ উত্তরসহ কয়েকটি স্থানে পথসভা। কর্মসূচিকে কেন্দ্র মহাসড়কে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয় এবং এতে করে মানুষ সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েন। রোডমার্চের সময় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে মারধরের ঘটনা ছাড়াও কিছু স্থানে অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

কিশোরগঞ্জ : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ না ছাড়ার ঘোষণা দেন। সরকারের পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্ত করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তির লক্ষ্যে এক দফা দাবিতে ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ অভিমুখে শুরু হওয়া তারুণ্যের রোডমার্চ শেষে সমাপনী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ ঘোষণা দেন। গতকাল বিকালে কিশোরগঞ্জের লতিবাবাদ চক্ষু হাসপাতাল সংলগ্ন বালুর মাঠে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। অতিথি ছিলেন- কেন্দ্রীয় কমিটির ময়মনসিংহ বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহসাংগঠনিক সম্পাদক শাহ ওয়ারেস আলী মামুন, নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ মুজিবুর রহমান ইকবাল ও লায়লা বেগম। এতে সভাপতিত্ব করেন কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলম। সমাবেশ পরিচালনা করেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম।

ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহের ত্রিশাল থেকে কিশোরগঞ্জ অভিমুখে রোডমার্চ শুরুর আগে ত্রিশালের আমিরাবাড়ি ইউনিয়নের একটি পেট্রলপাম্পে দুপুর ১২টার দিকে এক পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুুল মঈন খান বলেন, ‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়া মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত এবং এ সরকার পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরা আর রাজপথ ছাড়ছি না। বিগত এক বছর ধরেই আমরা কোটি কোটি মানুষকে সম্পৃক্ত করে রাজপথে সমাবেশ করছি, মিছিল করছি, মিটিং করছি। এসব কর্মসূচিতে আমরা দেখেছি এ সরকারের প্রতি বাংলাদেশের মানুষ অনাস্থা দিয়েছে। কাজেই এ ভোটবিহীন সরকারের ক্ষমতায় থাকার আর কোনো অধিকার নেই।’ ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডা. মাহবুর রহমান লিটনের সভাপতিত্বে এ সময় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, যুগ্মমহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাত, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স প্রমুখ। পথসভা শেষে রোডমার্চের গাড়িবহর বগারবাজার থেকে রওনা হয়ে চুরখাই বাজার, দীঘারকান্দা বাইপাস মোড়, কেওয়াটখালী, শম্ভুগঞ্জ ব্রিজ, চায়না মোড়, শম্ভুগঞ্জ বাজার, গৌরীপুর, ঈশ্বরগঞ্জ ও নান্দাইল হয়ে কিশোরগঞ্জে শেষ হয়। ১১৪ কিলোমিটার যাত্রাপথে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির উদ্যোগে বগারবাজার ও চুরখাই বাজার, ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপি চায়নামোড়, ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপি ঈশ্বরগঞ্জ এবং কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি কিশোরগঞ্জ বাইপাসে লতিফাবাদে গণসমাবেশের আয়োজন করে। বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর মাহমুদ আলম, মহানগর সিনিয়র যুগ্মআহ্বায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দ, অধ্যাপক শেখ আমদাজ আলী, অ্যাডভোকেট এম এ হান্নান খান, এ কে এম মাহবুবুল আলম, শামীম আজাদ, উত্তর জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার, সদস্য ইয়াসের খান চৌধুরী, ফুলবাড়িয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আক্তারুল আলম ফারুকসহ বিএনপির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। প্রতীকী কারাগারে শিশু লুবাবা : খোলা পিকআপ ভ্যান। সেখানে বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয় কারাগার। কালো রঙের কারাগারের ভিতর গোলাপি শাড়ি পরা ছয় বছর বয়সী শাহ রুফায়দা লুবাবা। ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’ স্লোগান লেখা কারাগারের ভিতর থেকে কখনো চেয়ারে বসে কখনো দাঁড়িয়ে হাত নাড়িয়ে উৎসুক মানুষকে শান্ত করার চেষ্টা করে শিশুটি। হাতে ধানের ছড়া, চোখে কালো চশমা পরা লুবাবাকে প্রতীকী খালেদা জিয়া সাজানো হয়। বাকৃবি এলাকায় মারধর : বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে বিএনপি সমর্থকদের মারধর ও টি-শার্ট পোড়ানোর ঘটনা ঘটেছে। দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুুল জব্বার মোড় ও কেআর মার্কেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।  প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, রোডমার্চে অংশগ্রহণের জন্য বিএনপি সমর্থকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ রাস্তা ব্যবহার করে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ আগে থেকেই অবস্থান নেয় সেই সমর্থকদের বিরুদ্ধে। বিএনপি সমর্থক সন্দেহ হলেই শুরু করে মারধর। মহাসড়কে যানজট, মানুষের ভোগান্তি : রোডমার্চকে ঘিরে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রচ- রোদ আর অসহনীয় গরমে এ যানজটে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েন বিভিন্ন যানবাহনের চালক ও সাধারণ যাত্রীরা। নেত্রকোনা : নেত্রকোনার কেন্দুয়া থেকে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী যোগ দেন রোডমার্চ কর্মসূচিতে। সকাল থেকেই নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া দুলালের নেতৃত্বে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী প্রস্তুত ছিলেন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া থেকে রোডমার্চে নেতৃত্ব দেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডাক্তার মো. আনোয়ারুল হক, সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম হেলালীসহ অনেকে।

সর্বশেষ খবর