বুধবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ঢাকা এখন রেস্টুরেন্টের শহর

সংখ্যা ৪ লাখ ৮১ হাজার, নগরবাসীর বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু, স্বল্প ও মাঝারি মূলধনে কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকায় তরুণরা বিনিয়োগে আগ্রহী

জিন্নাতুন নূর

ঢাকা এখন রেস্টুরেন্টের শহর

রাজধানীর একটি ভবনে সব ফ্লোরেই রেস্টুরেন্ট -জয়ীতা রায়

মেগাসিটি ঢাকা এখন রেস্টুরেন্টের শহর। ভোজনরসিকদের জন্য নতুন ঢাকায় আন্তর্জাতিক চেইন রেস্টুরেন্ট যেমন আছে, তেমন আছে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী মোগল খাবারও। শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে ঢাকাবাসীর সাধ ও সাধ্যের মধ্যে মিল রেখে রাজধানীর বিভিন্ন পাড়ামহল্লা ও অলিগলিতে গড়ে উঠছে নিত্যনতুন রেস্টুরেন্ট। পুরনো খাবার হোটেলের চিরচেনা আদল পাল্টে ঢাকা ক্রমেই পরিণত হচ্ছে রেস্টুরেন্টের শহরে। নগরীর প্রধান সড়কগুলো ছাড়াও পাড়ামহল্লায় পুরনো দোকান উঠিয়ে বা ভাড়া বাড়িতে তৈরি হচ্ছে রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে ও ফাস্টফুড শপ। পেটপূজার পাশাপাশি ঢাকাবাসীর কাছে এখন বিনোদনের অন্যতম স্থান হিসেবে জনপ্রিয়  হয়ে উঠছে চোখজুড়ানো সব রেস্টুরেন্ট। বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির নেতারা বলছেন, জনবহুল এ শহরে এখন খাবার দোকান বা রেস্টুরেন্টের সংখ্যা ৪ লাখ ৮১ হাজার। স্বল্প ও মাঝারি মূলধনে কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকায় তরুণ উদ্যোক্তা অনেকেই খাবারের ব্যবসায় ঝুঁকছেন। আর এ ব্যবসায় সম্ভাবনাও বেশ উজ্জ্বল। তবে এটি ধরে রাখতে হলে সরকারকে এ খাতের ব্যবসায়ীদের নিয়ে পরিকল্পনামাফিক এগিয়ে যেতে হবে। না হলে ব্যবসা বিদেশিদের হাতে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট সার্ভে ২০২১-এর প্রতিবেদন বলছে, গত ১১ বছর সারা দেশের হোটেল ও রেস্টুরেন্টে প্রায় ১১ লাখ ৬৮ হাজার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে মোট হোটেল ও রেস্টুরেন্টের সংখ্যা ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭৪টি। ২০০৯-১০ সালে এ সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৭৫ হাজার। এর বেশির ভাগই বেসরকারি স্থায়ী মালিকানাধীন (৯৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ)। পাঁচ তারকা হোটেল ছাড়াও ঢাকা শহরজুড়ে বিভিন্ন শ্রেণির ভোজনরসিকের কথা মাথায় রেখে তৈরি হয়েছে বুফে রেস্টুরেন্ট। এ ছাড়া খোলা আকাশের নিচে বসে খাবার উপভোগ করার জন্য আছে রুফটপ রেস্টুরেন্ট। এর মধ্যে কিছু রেস্টুরেন্ট আবার দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকে। আছে এলাকাভিত্তিক (মেজবান, চুইগোস্ত) ও উপজাতিদের বিশেষ খাবারের দোকান। নতুনত্ব আনতে এখন হোটেল-রেস্টুরেন্টে রোবট দিয়ে খাবার পরিবেশন ও সেবা দেওয়া হচ্ছে। রেস্টুরেন্টগুলোয় আছে সামুদ্রিক খাবার, বিয়েবাড়ির খাবারসহ টার্কিশ, লেবানিজসহ বিভিন্ন দেশের খাবারের স্বাদ নেওয়ার ব্যবস্থা। ইটালিয়ান, মেক্সিকান খাবারের পাশাপাশি আছে ভাত-ভর্তা খাওয়ার রেস্টুরেন্ট। এসব রেস্টুরেন্ট ছাড়াও রাজধানীর মোহাম্মদপুর, শনিরআখড়া, মিরপুর-২ ও ১০, ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন এলাকায় ভ্যানভিত্তিক খাবারের দোকান বা ফুড কার্ট গড়ে উঠেছে। আবার ভোজনরসিকদের কাছে অনেক আগে থেকেই পুরান ঢাকার নাজিরাবাজারের কাজী আলাউদ্দিন রোড খাবারের জন্য প্রিয় একটি স্থান। আর বৈচিত্র্যময় এতসব খাবারের সমারোহ দেখে এখন বিদেশি ফুড ব্লগাররা বাংলাদেশে এসে ফুড ব্লগিং করছেন। পিছিয়ে নেই দেশি ফুড ব্লগাররাও।

এসব রেস্টুরেন্টে কর্মজীবী মানুষ থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী, পরিবার ও ব্যবসায়ীরা খাবার খেতে আসেন। জীবনযাত্রার পরিবর্তন, ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতির কারণে মূলত মানুষের খাবারের অভ্যাস বদলে যাচ্ছে। অনেকেই খাবারের স্বাদে ভিন্নতা আনতে মাঝেমধ্যে বাড়ির খাবারের পরিবর্তে হোটেল ও রেস্টুরেন্টের খাবার চেখে দেখছেন। বিভিন্ন দিবস, পারিবারিক অনুষ্ঠান, নানান উপলক্ষ ছাড়াও এখন পরিবার নিয়ে মানুষ এসব হোটেল ও রেস্টুরেন্টে ভিন্ন স্বাদের খাবার খেতে পছন্দ করেন। শুধু উচ্চবিত্ত ও পেশাজীবী নয়, সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশাার মানুষের কথা মাথায় রেখেই নগরীতে নতুন নতুন রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতির ফলে এখন রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় জোয়ার এসেছে। বিশেষ করে তরুণ উদ্যোক্তা ও শিক্ষার্থীরা অন্য যে কোনো ব্যবসার চেয়ে ভিন্নধর্মী রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় বিনিয়োগে আগ্রহী।

অবস্থা এমন যে রাজধানীর বাণিজ্যিক এলাকা ছাড়াও আবাসিক এলাকাগুলো এখন খাবার হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও ফাস্ট ফুডের দোকানে সয়লাব। বিশেষ করে বনানী, গুলশান, উত্তরা, খিলগাঁও, ধানমন্ডি, মিরপুর, বনশ্রীসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় অসংখ্য খাবারের দোকান গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে একসঙ্গে অনেক রেস্টুরেন্ট নিয়ে বড় শপিং মলগুলোয় গড়ে উঠেছে ফুড কোর্ট। বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বর্তমানে দেশে খাবার হোটেল ও রেস্টুরেন্টের মোট সংখ্যা ৪ লাখ ৮১ হাজার। কর্মব্যস্ততার কারণে এখন মানুষ চাইলেও দূরে কোথাও বিনোদনের জন্য যেতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে অনেকেই বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে পরিবার ও প্রিয়জনকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে যাচ্ছেন। এ খাতের ভবিষ্যৎ খুবই ভালো। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারকে আমাদের সঙ্গে নিয়ে পরিকল্পনা করে ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে হবে এবং এর বাস্তবায়ন করতে হবে। তা না হলে বিদেশিরা এ বাজার নিয়ে যাবে।’

সর্বশেষ খবর