বুধবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ইয়াবা পাচারে এবার গাড়ি ফিটিং

লোভে পড়ে ক্যারিয়ার হচ্ছে গাড়ির চালক-হেলপার

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

ইয়াবা পাচারে এবার গাড়ি ফিটিং

ইয়াবার ট্রানজিট পয়েন্ট কক্সবাজার থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাচার করতে নতুন কৌশল নিয়েছে মাদক মাফিয়ারা। বাস, ট্রাকসহ গাড়ির বিভিন্ন জায়গায় আটকে ইয়াবা পাচার করে বলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা নতুন এ কৌশলের নাম দিয়েছে ‘গাড়ি ফিটিং’। ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে চলাচলকারী বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন পরিবহনের চালক ও হেলপারদের সহায়তায় নতুন এ কৌশলে দেশজুড়ে পাচার হচ্ছে ইয়াবা। ‘অল্প পরিশ্রমে’ অধিক আয়ের লোভে পড়ে চালক-হেলপাররাও যুক্ত হচ্ছে ইয়াবা ক্যারিয়ার হিসেবে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের চট্টগ্রাম মেট্রো উত্তর অঞ্চলের উপ-পরিচালক হুমায়ন কবির খোন্দকার বলেন, বর্তমানে কক্সবাজার থেকে ইয়াবা পাচারের জন্য গাড়ির চালক ও হেলপারদের ব্যবহার করছে মাদক কারবারিরা। গাড়ির বিভিন্ন অংশে ফিটিং করে ইয়াবার চালান নিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়। এরই মধ্যে এ ধরনের কিছু চালান জব্দ করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। এ বিষয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে চালাচলকারী একটি পরিবহন সংস্থার চালক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কক্সবাজার থেকে ঢাকায় রাউন্ড ট্রিপে চালক-হেলপার ও গাইডসহ তিনজনকে বেতন দেওয়া হয় সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৮০০ টাকা। অথচ ইয়াবার একটি চালান নিয়ে গেলেই পাওয়া যায় সর্বনিম্ন ২০ হাজার থেকে শুরু করে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত। তাই লোভে পড়ে অনেক চালক ও হেলপার ইয়াবা ক্যারিয়ার হিসেবে কাজ করছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, ইয়াবা পাচারের ট্রানজিট পয়েন্ট খ্যাত কক্সবাজার থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ইয়াবা পাচার করতে ‘গাড়ি ফিটিং’ নামে নতুন এ কৌশল ব্যবহার করছে ইয়াবা মাফিয়ারা। নতুন এ কৌশলে ইয়াবা পাচারের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করছে বিভিন্ন ট্রাক, বাস, প্রাইভেট গাড়ির চালক-হেলপার ও মোটরবাইক চালকরা। নতুন কৌশলে মাদক পাচারের নেপথ্যে রয়েছে ইয়াবার পুরনো মাফিয়ারা। গাড়ির ধরন অনুযায়ী পাচারের কৌশলকে বাস ফিটিং, ট্রাক ফিটিং, কার ফিটিং এবং বাইক ফিটিং নানা নামে আখ্যা দেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য ও মাদক মাফিয়ারা। মূলত গাড়ির তেলের ট্যাংকি, গ্যাস ট্যাংকি, টুল বক্স, ড্যাশ বোর্ড, পাদানি, বাসের বাকেট, এসি বক্স, চালকের সিট, অতিরিক্ত চাকাসহ নানান কৌশলে কক্সবাজার থেকে ইয়াবার চালান নিয়ে যাওয়া হয়। একেকটি চালানে সর্বনিম্ন ২০ হাজার পিস থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২ লাখ পিস পর্যন্ত ইয়াবা পাচার করা হয়। কক্সবাজার থেকে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে গাড়ি চালক-হেলপার প্রতি পিস ইয়াবার জন্য নেন সর্বনিম্ন ১০ টাকা। একেকটি চালান পরিবহনের জন্য চালক-হেলপার পান ২০ হাজার থেকে শুরু করে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত। কক্সবাজার, টেকনাফের বাস স্টেশন ও কিছু নির্ধারিত স্পটে গাড়ির মধ্যে ফিটিং করা হয় ইয়াবার চালান। পরে চট্টগ্রাম হয়ে ইয়াবার চালান চলে যায় ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। গাড়িতে ফিটিং করে কক্সবাজার থেকে ইয়াবার চালান পাচারের সময় কয়েকটি চালান জব্দ করেছে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থানা পুলিশ। এ পদ্ধতি নিয়ে লোহাগাড়া থানার ওসি রাশেদুল ইসলাম বলেন, কক্সবাজার থেকে নিত্যনতুন কৌশলে ইয়াবা আনছে মাদক কারবারিরা। যার মধ্যে রয়েছে গাড়ি ফিটিং পদ্ধতি। এ কৌশলে ইয়াবা পাচারের সময় কিছু চালান জব্দ করেছে পুলিশ।

সর্বশেষ খবর