বুধবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

কবিরাজ সেজে হত্যা তিনজনকে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় একই পরিবারের তিনজনকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় ভুয়া কবিরাজ দম্পতিকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গত সোমবার রাতে গাজীপুরের শফিপুর এলাকা থেকে হত্যাকান্ডে  জড়িত সাগর আলী ও তার স্ত্রী ইশিতা বেগমকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে হত্যাকান্ডের পর নিহত মোক্তারের হাত থেকে লুট করা আংটি উদ্ধার করা হয়। তারা জানায়, প্রথমে অর্থের লোভে কবিরাজ সেজে ওই বাসায় যায় তারা। কিন্তু অর্থ না পেয়ে এই হত্যাকান্ড ঘটায়।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে গতকাল আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার একটি বহুতল ভবনের চতুর্থ তলার একটি ফ্ল্যাটে শিশুসন্তানসহ খুন হন তার পিতা-মাতা। খুনিরা বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে পালিয়ে যায়। এর মধ্যে মৃতদেহের দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে ভবনের অন্য ভাড়াটিয়া বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানান। গত ৩০ সেপ্টেম্বর ওই ফ্ল্যাট থেকে নিহত মোক্তার হোসেন (৫০) ও তার স্ত্রী সাহিদা বেগম (৪০) ও তাদের সন্তান মেহেদী হাসান জয়ের (১২) গলা কাটা অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। জানা যায়, ছেলেটি স্থানীয় একটি স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা করত। তারা বাবা-মা আশুলিয়ার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। মোক্তারের গ্রামের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ থানার লোহাগড়ায়। আর সাহিদার গ্রামের বাড়ি রাজশাহীতে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী মোক্তারের ভাই আইনাল হক বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। একই পরিবারের তিনজনের হত্যাকান্ডের ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের ধরতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়। অবশেষে র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৪ এর সদস্যরা তাদের গ্রেফতার করে। হত্যাকারী সাগর একজন দাগি অপরাধী। প্রায় সাড়ে তিন বছর কারাভোগ করে চলতি বছরের জুনে জামিনে ছাড়া পায় সে। এরপর গাজীপুরের মৌচাক এলাকায় শ্বশুরের ভাড়া বাসায় থাকতে শুরু করে। দীর্ঘদিন জেলহাজতে থাকায় তার আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। সে কারণে রাজমিস্ত্রি, কৃষি শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার আড়ালে ঢাকা, সিলেট ও টাঙ্গাইলে অবস্থান করে চুরি-ছিনতাই করত। জিজ্ঞাসাবাদে সাগর জানায়, গত ২৮ সেপ্টেম্বর সাভার বারইপাড়া এলাকার একটা দোকানে বসে চা খাচ্ছিল সে। এ সময় মোক্তারকে পাশের একটি কবিরাজি ও ভেষজ ওষুধের দোকানে শারীরিক সমস্যা নিয়ে কথা বলতে দেখেন। এরপর মোক্তারের সঙ্গে কৌশলে ভিড়ে যায় সাগর। কথাবার্তা বলে জানতে পারে, কবিরাজি চিকিৎসা বাবদ এরই মধ্যে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ করেও কোনো ফল পাননি। এ সময় ভুক্তভোগীকে সাগর জানায়, তার স্ত্রী একজন ভালো কবিরাজ। সে সব সমস্যার সমাধান করে দেবে। চিকিৎসার জন্য তারা ৯০ হাজার টাকার চুক্তি করে। যোগাযোগের জন্য মোক্তার মোবাইল ফোন নম্বর চাইলে সাগর তার আত্মীয়ের নম্বর দেয়। সাগর ও তার স্ত্রী ভেষজ চিকিৎসার নামে সবাইকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অর্থসহ মূল্যবান সামগ্রী লুটের পরিকল্পনা করে। সে সূত্রেই সাগর ও তার স্ত্রী ইশিতাকে ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে নিজের বাসায় নিয়ে আসেন মোক্তার। তারা বাসায় গিয়ে মোক্তারের স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে। সব শুনে ইসবগুলের শরবতের সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে ভেষজ ওষুধ বলে খাওয়ায়। তারা ঘুমিয়ে পড়লে সাগর ও তার স্ত্রী প্রথমে মোক্তারের কক্ষে গিয়ে তার হাত-পা বাঁধে। পরে তার স্ত্রীর হাত-পা বাঁধে। এরপর তারা মোক্তারের মানিব্যাগ, তার স্ত্রীর পার্স ও বাসার অন্যান্য স্থানে অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রীর জন্য তল্লাশি করে মাত্র ৫ হাজার টাকা পায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বঁটি দিয়ে প্রথমে মোক্তারের গলায় উপর্যুপরি কোপ দিয়ে হত্যা করে। পরে অন্য কক্ষে গিয়ে একই বঁটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে ছেলে ও স্ত্রীকে। সবার মৃত্যু নিশ্চিত করে মোক্তারের হাতে থাকা আংটি নিয়ে চলে যায়। সাগর জানায়, গাজীপুরের মৌচাক এলাকার একটি ফার্মেসি থেকে ঘুমের ওষুধ কেনে। এদিকে হত্যার ঘটনাটি গণমাধ্যমে এবং আশপাশের এলাকায় ব্যাপকভাবে প্রচার হলে তারা আত্মগোপনে চলে যায়। জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, ২০২০ সালে টাঙ্গাইলের মধুপুরে ২০০ টাকার জন্য একই পরিবারের চারজনকে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে একই কায়দায় গলা কেটে হত্যা করে। ইশিতা জানায়, সাগর মাদকাসক্ত।

সর্বশেষ খবর