বুধবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

৫.৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস বিশ্বব্যাংকের

নিজস্ব প্রতিবেদক

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ বলে পূর্বাভাস বিশ্বব্যাংকের। গতকাল সংস্থাটির ঢাকা কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে প্রকাশিত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট প্রতিবেদনে এ পূর্বাভাস দেয় বিশ্বব্যাংক। অবশ্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে সরকার সাড়ে ৭ শতাংশের প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। গত অর্থবছর ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল। প্রতিবেদনটির বিস্তারিত তথ্য সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন বাংলাদেশ ও ভুটানে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুল্লায়ে সেক। প্রতিবেদনে বলা হয়, মুদ্রাস্ফীতি মোকাবিলায় মুদ্রা ও রাজস্ব নীতির মাধ্যমে সংস্কার করা, সেই সঙ্গে আর্থিক খাতের দুর্বলতাগুলো সংস্কার দেশের প্রবৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য হ্রাসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে। একটি একক বাজার-ভিত্তিক বিনিময় হার আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহকে আকর্ষণ করতে হবে। এর ফলে অর্থ প্রদানের ভারসাম্য এবং রিজার্ভ জমাতে সহায়তা করবে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশে জীবনযাত্রার অবস্থার উন্নতি করেছে। ২০২২ সালে চরম দারিদ্র্য ৫ শতাংশ হয়েছে যা ২০১৬ সালে ছিল ৯ শতাংশ, এটি লাতিন আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে তুলনীয়। আঞ্চলিক প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ায় ২০২৪ এবং ২০২৫ সালে গড় প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়। প্রবৃদ্ধি কমার জন্য আর্থিক সংকীর্ণতা, রাজস্ব ঘাটতি এবং বৈশ্বিক চাহিদা কমে যাওয়া অন্যতম দায়ী। ভঙ্গুর রাজস্ব আহরণের কারণে নানা ঝুঁকি রয়েছে। ২০২২ সালে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে সরকারি ঋণ গড় ছিল জিডিপির ৮৬ শতাংশ। ঋণ খেলাপির ঝুঁকি, ঋণ নেওয়ার খরচ বৃদ্ধি এবং ব্যক্তিগত খাতে ঋণ নেওয়ার সংকট তৈরি হয়েছে। চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধীরগতি, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ তীব্র হওয়ায় অঞ্চলটি প্রভাবিত হবে। বিশ্বব্যাংক মনে করে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ অর্থনীতির অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। আগামী দিনেও উচ্চ মূল্যস্ফীতির ধারা অব্যাহত থাকতে পারে বলে মনে করছে তারা। সংস্থাটি বলছে, মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি নির্ভর করবে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্য কেমন থাকে তার ওপর। মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে পারলে এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক করা সম্ভব হলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়ে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে। আবদুল্লায়ে সেক বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং টাকার অবমূল্যায়নের কারণে মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়ছে। মানুষের ভোগও চাপের মুখে পড়েছে। এ ছাড়া মজুরি বৃদ্ধির তুলনায় খাবারের দাম বেড়েছে। মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে মুদ্রানীতির কার্যকর ব্যবহারের ওপর জোর দেন তিনি। মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে সুদের হারের সীমা পর্যায়ক্রমে তুলে দিতে হবে। এ ছাড়া ব্যাংক খাতের কার্যকর তদারকির মাধ্যমে আর্থিক খাতের ঝুঁকি কমানোর উদ্যোগ নেওয়া উচিত। অর্থনৈতিক বিপর্যয় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বিশ্বব্যাংক অর্থনীতিতে কিছু সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছে। বিশেষ করে বিনিময় হারকে ধরাবাঁধার বাইরে রাখা, মুদ্রানীতি আধুনিক করা এবং রাজস্ব খাতের সংস্কারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অর্থনীতিতে এখন বিভিন্ন ধরনের বাধা কাজ করছে। ফলে ঝুঁকিও ক্রমশ বাড়ছে বলে মনে করে সংস্থাটি।

সর্বশেষ খবর