বুধবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

দিল্লিতে সাংবাদিকদের ঘরে ঘরে তল্লাশি, সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা

কলকাতা প্রতিনিধি

ভারতবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে দেশটির অনলাইন গণমাধ্যম ‘নিউজ ক্লিক’-এ কর্মরত একাধিক সাংবাদিক, অন্য কর্মীর বাড়ি ও ঠিকানায় অভিযান চালিয়েছে দিল্লি পুলিশের স্পেশাল টিম। অর্থের বিনিময়ে চীনের হয়ে প্রচার করার অভিযোগ ওঠার পরই সন্ত্রাস দমন আইনে নিউজ পোর্টাল নিউজ ক্লিকের বিরুদ্ধে মামলা করে দিল্লি পুলিশ। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সকাল থেকে ওই অনলাইন মিডিয়া সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত দিল্লির প্রায় ৩০ জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালানো হয়। এ অভিযানে নামানো হয়েছে দিল্লি পুলিশের অন্তত ২০০ কর্মকর্তাকে। চীনা বিনিয়োগের অভিযোগ ওঠার পর কেন্দ্রের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) এবং দিল্লি পুলিশের ইকোনমিক অফেন্স উইং (ইওডব্লিউ) স্ক্যানারে ও রয়েছে নিউজ ক্লিক। গতকাল সকালে নিউজ ক্লিকের বিভিন্ন শাখা অফিস এবং তার কর্মীদের বাড়িতে অভিযান চালায় দিল্লি পুলিশ। জানা গেছে, এ সংস্থার এডিটর-ইন-চিফ প্রবীর পুরকায়স্থ, সিনিয়র জার্নালিস্ট অভিসার শর্মা, উর্মিলেশ, সত্যম তিওয়ারি, অদিতি নিগম ও সুমেধা পালের বাড়িতেও দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেলের কর্মকর্তারা অভিযান চালিয়েছেন। অভিযান চালানো হয়েছে ইতিহাসবিদ সোহেল হাশমি, কমেডিয়ান সঞ্জয় রাজাউরাওয়ের বাসায়ও। পাশাপাশি তল্লাশি অভিযান চালানো হয়েছে সমাজকর্মী তিস্তা শীতলাবাদের বাড়িতেও। মুম্বাইতে তিস্তার বাসায় গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে দিল্লি পুলিশের একটি দল। কারণ নিউজ ক্লিকে তাঁর সংস্থার পক্ষ থেকে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে বলেই এ তল্লাশি। নিউজ ক্লিকের সাংবাদিক সুবোধ বর্মার বাড়িতেও হানা দিয়েছে দিল্লি পুলিশ। নিউজ ক্লিকে কর্মরত একাধিক সাংবাদিককে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জব্দ করা হয়েছে তাঁদের ল্যাপটপ, মোবাইল ফোনও। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। নিউজ ক্লিকের ঘটনায় ভারতের সিপিআইএমের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সিতারাম ইয়েচুরির বাড়িতেও অভিযান চালায় দিল্লি পুলিশের একটি দল। সীতারাম ইয়েচুরি যে বাসায় থাকেন সে বাসভবনেই থাকেন নিউজ ক্লিকে কর্মরত সান্মিত কুমার। আর সে কারণেই সীতারামের বাড়িতে ওই তল্লাশি অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে জব্দ করা হয় ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন। এ বিষয়ে সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘পুলিশ আমার বাসভবনে এসেছিল। কারণ আমার সঙ্গে একজন ব্যক্তি থাকেন তার ছেলে নিউজ ক্লিকে কাজ করেন। পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে এসেছিল।’ যদিও পুলিশের এ তল্লাশি অভিযান নিয়ে সীতারাম বলেন, ‘এসব করে পুলিশ গণমাধ্যমের কণ্ঠ রোধের চেষ্টা করছে। এর আসল কারণ কী, তা দেশের মানুষের জানা দরকার।’ উল্লেখ্য, গত আগস্টে নিউইয়র্ক টাইমস একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, সেখানে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ ক্লিকের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তোলা হয়। ভারতবিরোধী কার্যকলাপ চালাতে এবং প্রতিবেদন প্রকাশ করতে এ সংবাদমাধ্যমে চীন বিনিয়োগ করছে বলেও নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। নিউজ ক্লিকের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, সিংহম নামে এক ব্যক্তি চীনের সরকারি মিডিয়ার সঙ্গে মিশে কাজ করছেন। তাদের প্রচারে অন্তত ২৭৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সিংহম একটি অলাভজনক গ্রুপ এবং শেল কোম্পানির মাধ্যমে দিনের পর দিন এসব কাজ করছেন। এ একই অভিযোগ করেছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকরে। তাঁর অভিযোগ, চীন, নিউজ ক্লিক ও কংগ্রেস এ তিনটেই ভারতবিরোধী কাজে যুক্ত। নিজের সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বজুড়ে চীনের হয়ে প্রচার করছেন সিংহম নামে এক ব্যক্তি। এদিকে এ ঘটনায় বিরোধী দলের জোট ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স (ইন্ডিয়া) নিশানা করেছে বিজেপি সরকারকে। ‘ইন্ডিয়া’র তরফে এক বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, বিজেপি সরকারের এই জবরদস্তিমূলক কর্মকান্ড শুধু তাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয় যারা ক্ষমতার কাছে সত্য কথা বলে। আর যারা ঘৃণা ও বিভেদ ছড়ায় তাদের বিরুদ্ধে নয়। আরও বলা হয়, মিডিয়া সংস্থাগুলোকে দলের মুখপাত্রে রূপান্তরের চেষ্টা করছে বিজেপি।

সর্বশেষ খবর