শুক্রবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা পাহাড় ধসের শঙ্কা চট্টগ্রামে

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা পাহাড় ধসের শঙ্কা চট্টগ্রামে

চট্টগ্রাম নগরে অল্প বৃষ্টিতেই জমে যায় পানি। সঙ্গে দেখা দেয় পাহাড় ধসের শঙ্কা। জলাবদ্ধতায় নগরবাসীকে পোহাতে হয় দুর্ভোগ। পাহাড় ধসে মৃত্যু হয় মানুষের। দীর্ঘদিন এভাবে দুর্ভোগ আর আতঙ্কে চললেও মিলছে না প্রতিকার। প্রতি বর্ষা মৌসুমেই পাহাড় ধসে প্রাণহানি ঘটছে। তাছাড়া, জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকায় তিন সংস্থা চারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।

মৌসুমি বায়ু সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থার প্রভাবে গত বুধবার রাত থেকে হালকা থেকে মাঝারি এবং গতকাল মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে। সারাদিন অব্যাহত ছিল এমন বৃষ্টিপাত। গতকাল মুষলধারে বৃষ্টিতে পানি জমে যায় নগরের অনেক এলাকায়। অভিযোগ আছে, চট্টগ্রামে প্রতিনিয়তই কাটা হয় পাহাড়। রাতের আঁধারে, দিনের আলোতে, দিনের বেলায় প্লাস্টিকের ঘেরাও দিয়ে এবং বৃষ্টির সময় নির্বিচারে কাটা হচ্ছে পাহাড়। নিয়মিত কাটা হলেও পাহাড়ের মালিকরাই উদাসীন। পাহাড়গুলোর কান্না কোনো মতেই থামছে না। প্রভাবশালী মহল দিন-রাত সমানেই কাটছে পাহাড়। ফলে বৃষ্টি নামলেই তৈরি হয় পাহাড় ধসের শঙ্কা, আতঙ্ক। গত ১৫ বছরে পাহাড় ধসে মারা যান অন্তত ৩৫০ জন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহ বলেন, পাহাড় কাটলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটবেই। প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হবে। অবশ্য এর নেতিবাচক খেসারত ইতোমধ্যেই প্রত্যক্ষ করছি। তাই পাহাড় কাটা রোধ করতে নীতিগত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক এবং স্থানীয়দের কঠোর অবস্থান নিতে হবে। চট্টগ্রাম খাল-নদী রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান বলেন, পাহাড়গুলো রক্ষার কোনো বিকল্প নেই। যে হারে পাহাড় কাটা হচ্ছে তাতে বিপর্যয় হলে একসঙ্গে বহু মানুষের প্রাণহানির শঙ্কা আছে। তাই জরুরি ভিত্তিতে পাহাড় কাটা বন্ধ, ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের জরিপ করে প্রয়োজনীয় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ এবং নতুন করে বসতি স্থাপন বন্ধ করতে হবে। কারণ গত ৪০ বছরে চট্টগ্রাম নগর থেকে ৬০ শতাংশ পাহাড় বিলীন হয়ে গেছে। পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবদুল মালেক বলেন, ইতোমধ্যে এ কমিটির ২৩টি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করবে সংশ্লিষ্ট পাহাড়ের মালিক। মালিকরাই এ ব্যাপারে উদাসীন। তবে জেলা প্রশাসন বিষয়টি নিয়মিত তদারকি করে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ তালিকা অনুযায়ী, চট্টগ্রাম মহানগরীতে ২৮টি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় আছে। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি ১৭টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে ৮৩৫ পরিবার বসবাস করে।

 অন্যদিকে, ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে গত ১৫ বছরে মারা যান প্রায় ৩৫০ জন। ২০০৭ সালে এক দিনেই পাহাড় ধসে নারী, শিশুসহ মারা যান ১২৭ জন। ২০০৮ সালের ১৮ আগস্ট লালখানবাজার মতি ঝর্ণা এলাকায় পাহাড় ধসে চার পরিবারের ১২ জনের মৃত্যু হয়। ২০১১ সালের ১ জুলাই টাইগার পাস এলাকার বাটালি হিলের ঢালে পাহাড় ও প্রতিরক্ষা দেয়াল ধসে মারা যান ১৭ জন। ২০১২ সালের ২৬-২৭ জুন পাহাড় ধসে মারা যান ২৪ জন। ২০১৩ সালে মতি ঝর্ণায় দেয়াল ধসে মারা যান দুজন। ২০১৫ সালের ১৮ জুলাই বায়েজিদ এলাকার আমিন কলোনিতে পাহাড় ধসে মারা যান তিনজন, একই বছর ২১ সেপ্টেম্বর বায়েজিদ থানার মাঝিরঘোনা এলাকায় পাহাড় ধসে মা-মেয়ের মৃত্যু হয়। ২০১৭ সালের ১২ ও ১৩ জুন রাঙামাটিসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের পাঁচ জেলায় পাহাড় ধসে প্রাণ হারান ১৫৮ জন। ২০১৮ সালের ১৪ অক্টোবর নগরীর আকবরশাহ থানাধীন ফিরোজশাহ কলোনিতে পাহাড় ধসে মারা যান চারজন। ২০১৯ সালে কুসুমবাগ এলাকায় পাহাড় ধসে এক শিশুর মৃত্যু হয়।

জানা যায়, নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে তিনটি সংস্থা ১১ হাজার ২৩৮ কোটি টাকার পৃথক চারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে সিডিএ বাস্তবায়ন করছে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার একটি ও ২ হাজার ৭৪৬ কোটি ৩৯ লাখ ৪৭ হাজার টাকা ব্যয়ে ‘কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল’ শীর্ষক প্রকল্প। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন বহদ্দার হাট বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত ১ হাজার ২৫৬ কোটি টাকায় একটি নতুন খাল খনন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ‘চট্টগ্রাম মহানগরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ জলাবদ্ধতা নিষ্কাশন উন্নয়ন’ শীর্ষক ১ হাজার ৬২০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

সর্বশেষ খবর