শুক্রবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

সরকারি-বেসরকারি সাইট থেকে এনআইডি তথ্য ফাঁস

নাগরিক তথ্য বেহাত

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারি-বেসরকারি সাইট থেকে এনআইডি তথ্য ফাঁস

সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়সহ বেশ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট থেকেই এনআইডি তথ্য ফাঁস হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসি কর্মকর্তারা। সেই তথ্যই পাওয়া যাচ্ছিল টেলিগ্রামে। ইসি বলছে, টেলিগ্রামের যে চ্যানেলে এনআইডির তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল, বুধবার মধ্যরাতে সেই চ্যানেল বন্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া সরকারের যে মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে এই তথ্য ফাঁস হওয়ার সন্দেহ করা হচ্ছে। গতকাল নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে এনআইডি সেবা দেওয়া বন্ধ করেছে। তাদের চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে তথ্য ফাঁসের বিষয় তদন্ত করে ইসিকে জানাতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনও দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এদিকে টেলিগ্রামে তথ্য ফাঁসের ঘটনায় মোবাইল অপারেটরসহ ১৭৪টি পার্টনার সার্ভিসকে নজরদারিতে রেখেছে ইসি। যাদের বিরুদ্ধে তথ্য ফাঁসের প্রমাণ মিলবে তাদের ব্ল্যাক লিস্টেড করা হবে, যাতে তারা বাংলাদেশে কাজ না করতে পারে। উল্লেখ্য, বেশ কয়েকদিন থেকেই যোগাযোগ অ্যাপস টেলিগ্রামের একটি চ্যানেলে নাগরিকের স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, জন্ম সাল ও জন্ম মাস ও তারিখ দিয়ে ব্যক্তিগত সব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন নাগরিকরা।

এ বিষয়ে              গতকাল জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (এনআইডি) অনুবিভাগের মহাপরিচালক (ডিজি) এ কে এম হুমায়ুন কবীর সাংবাদিকদের বলেন, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আমার (ইসির) কাছে সেবা নিচ্ছে এমন প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য গেছে। যাদের কাছ থেকে তথ্য গেছে বলে সন্দেহ হয়েছে সবার সার্ভিস দেওয়া বন্ধ আছে। কত প্রতিষ্ঠান সেটা এই মুহূর্তে বলা যাবে না। তদন্তের পর বলা যাবে। তিনি বলেন, বুধবার রাত ১টার সময় সেবা বন্ধ করেছি। তিনি বলেন, ইসির কোনো দুর্বলতা নেই। ইসি থেকে হ্যাক হয়নি কারণ, তাদের ইসির টেকনিক্যাল দিকটা খুব স্ট্রং। তারা সব সময় এটা মনিটর করে। তিনি বলেন, ইন্টারনেটের যুগে সবকিছু সম্ভব। নানা জনের কাছে আমাদের নানা তথ্য আছে। সব জায়গা থেকে ডেটা নিয়ে এগুলো করতে পারে। এর-ওর কাছে তথ্য আছে। সব এক জায়গায় জড়ো করা হচ্ছে। কত জনের তথ্য ফাঁস হয়েছে, জানতে চাইলে ডিজি বলেন, আমাদের এখান থেকে তো যায়নি। আমরা তো বলতে পারব না। একটি মন্ত্রণালয়ে এর আগে যে তথ্য দিয়ে এনআইডি পাওয়া গেছে এবারও তাই হচ্ছে। বিষয়টি উত্থাপন করা হলে এনআইডি অনুবিভাগের ডিজি বলেন, আমরা তদন্ত করে দেখি। তারপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর সবাইকে সব তথ্য শেয়ার করা হয় না। পুলিশের কাছে দশ-বারোটা তথ্য আছে। ব্যাংকগুলোর কাছে নাম, বাবার নাম ও ঠিকানা আছে, এ রকম। ১৭৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কেউ কি করেছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আমাদের এখান থেকে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে দুই সিস্টেম ম্যানেজারকে নিয়ে। তারা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিলে বলতে পারব। মোবাইল নম্বর পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু সেটি তো হওয়ার কথা নয়, প্রশ্ন করলে এ কে এম হুমায়ুন কবীর বলেন, মোবাইল কোম্পানি হয়তো নম্বর দিয়ে দিচ্ছে। আমি তো বলছি, পাঁচজনের কাছ থেকে পাঁচ রকম তথ্য নিচ্ছে। এই চক্রটা হচ্ছে... পৃথিবীতে আন ইথিক্যাল চক্র। এটাই আমরা বের করতে চাচ্ছি। এই চক্রটা কারা। মোবাইল নম্বর, স্পাউজ নেম এগুলো তো পার্টনার সার্ভিসের কাছে যাওয়ার কথা নয়। কিন্তু তথ্য ফাঁসকারীরা সেগুলোও নিচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, মোবাইল কোম্পানির কাছে নম্বর আছে না? আমদের ডেটা নিচ্ছে না তারা? মোবাইল অপারেটরও কেউ জড়িত থাকতে পারে। আমরা সেটিই তদন্ত করে দেখছি। প্রাইভেসি সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে এ কে এম হুমায়ূন কবীর বলেন, যখন পাবলিক সার্ভিস কমিশনে আবেদন করেন তখন প্রাইভেসি থাকে নাকি? যখন নিকাহ নিবন্ধন করেন তখন থাকে? তারপর ব্যাংকে, পাসপোর্টে তথ্য দিচ্ছেন তখন কি দেখে না ওরা? প্রাইভেসি বলতে পৃথিবীতে টেকনোলজির যুগে কিছু থাকে না। টেকনোলজির যুগে আপনার প্রাইভেসি, আপনার তথ্য সবকিছু পাবলিক হয়ে যায়। ইন্টারনেট আমাকে খোঁজেন, পেয়ে যাবেন। আমরা তো লিক করিনি। আপনার তথ্য যদি উনাকে দিয়ে দিতাম তাহলে বলতে পারতেন। প্রাইভেসি নেই এই কথা আমি বলিনি। সার্ভিস পার্টনার যার কাছ থেকেই যাক, তার সঙ্গে যে চুক্তি আছে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। উল্লেখ্য, দেশের স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্রধারী নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য একটি টেলিগ্রাম চ্যানেলে ফাঁস হয়েছে। বিষয়টি স্বীকার করেছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তারা। সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এনআইডি সার্ভারে ১২ কোটি নাগরিকের তথ্য আছে। তাদের মধ্যে সাড়ে পাঁচ কোটি নাগরিকের স্মার্ট এনআইডি আছে।

সর্বশেষ খবর