শুক্রবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

৬০ শতাংশ পরিবারে বাল্যবিয়ে

শীর্ষে পিরোজপুর, কম নেত্রকোনায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

৬০ শতাংশ পরিবারে বাল্যবিয়ে

বাংলাদেশের ৬০ শতাংশেরও বেশি পরিবারে বাল্যবিয়ে হচ্ছে। অর্থাৎ গত ৫ বছরে এসব পরিবারের যেসব মেয়ের বিয়ে দেওয়া হয়েছে অথবা পুত্রবধূ হিসেবে যারা এসেছে তাদের ৬০ শতাংশেরও বেশি মেয়ের বয়স বিয়ের সময় ১৮ বছরের কম ছিল। গতকাল রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘চাইন্ড ম্যারেজ : ট্রেন্ডস অ্যান্ড কনে’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারপারসন বেগম মেহের আফরোজ এমপি এবং বিশেষ অতিথি মহিলাবিষয়ক অধিদফতরের উপপরিচালক আয়েশা সিদ্দিকা। বেগম মেহের আফরোজ এমপি বলেন, ২১ বছরের বেশি ছেলেরা কেন অল্প বয়সী মেয়েদের বিয়ে করছে। সমাজের কাছে তুলে ধরা উচিত তারাই অপরাধী, আমাদের সমাজের ব্যাকটেরিয়া। এসব ছেলেদের আগে সাবধান করতে হবে। তারা যেন কম বয়সী মেয়ে বিয়ে করতে না পারে। মূল জায়গায় ওষুধ না দিলে সমাধান আসবে না। তিনি আরও বলেন, সবাই শুধু কিশোরী মেয়ে এবং তার বাবা-মাকে জ্ঞান দিচ্ছে। কিন্তু ওই ছেলেটাকে ধরছে না। তাকে ঠিক করতে পারলেই তো সমাধান হয়ে যায়।

ব্র্যাকের ঊর্ধ্বতন পরিচালক কে এ এম মোর্শেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বর্ন টু বি অ্যা ব্রাইড, চাইল্ড ম্যারেজ : ট্রেন্ডস অ্যান্ড কজেস’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন ও আইনি সুরক্ষা কর্মসূচির (সেলপ) প্রধান শাশ্বতী বিপ্লব। তিনি বলেন, বাল্যবিবাহের প্রবণতা ও কারণ জানতে ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন ও আইনি সুরক্ষা কর্মসূচি ২৭টি জেলার প্রায় ৫০ হাজার থানায় এই জরিপ চালিয়েছে। জরিপের তথ্য বলছে, এসব জেলায় ৪৪ দশমিক ৭ শতাংশ মেয়ে ১৮ বছরের আগেই বাল্যবিয়ের শিকার হয়। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে পিরোজপুর। সেখানে বাল্যবিয়ের হার ৭২ দশমিক ৬ শতাংশ। বাল্যবিয়ের হার সবচেয়ে কম নেত্রকোনায় ২৪ দশমিক ১ শতাংশ। গবেষণায় বলা হয়েছে, বাল্যবিয়ের শিকার মেয়েদের ৬ দশমিক ৯ শতাংশের বয়স ১৫ বছরের নিচে। পিরোজপুরের (৭২ দশমিক ৬ শতাংশ) পর বাল্যবিয়ের শীর্ষে থাকা জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ (৬৫ দশমিক ২ শতাংশ), নওগাঁ (৬৫ দশমিক), ঠাকুরগাঁও (৬২ দশমিক ৫ শতাংশ) এবং জয়পুরহাট (৬১ দশমিক ৪ শতাংশ)। ৫৬ শতাংশ বাল্যবিয়ের শিকার মেয়েদের মাধ্যমিক পাস করার আগেই বিয়ে হয়েছে। যোগ্য পাত্র পাওয়ার কারণে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন ৪৪ শতাংশ অভিভাবক। বাল্যবিয়ের কারণ হিসেবে বাকিদের মধ্যে ১৮ শতাংশ দারিদ্র্য, যৌতুক কম বা না চাওয়ার কারণে ১০ শতাংশ, সামাজিক নিরাপত্তার অভাবের কথা বলছেন ৭ শতাংশ, পড়ালেখায় ভালো না হওয়ার কারণে ৬ শতাংশ এবং অন্যান্য কারণের কথা বলেছেন ১৫ শতাংশ। নন-প্রবাবিলিটি পারপাসিত স্যাম্পলিং পদ্ধতিতে অংশগ্রহণকারীদের বেছে নেওয়া হয়েছে। আধা-কাঠামোগত (সেমি-স্ট্রাকচার্ড) সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের কাছ থেকে বাল্যবিয়ে সম্পর্কে তাদের ধারণাগত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠী, জাতিসংঘ, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং গণমাধ্যমকর্মীরা। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন ও আইনি সুরক্ষা কর্মসূচি একটি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যার অংশ হিসেবে বাল্যবিয়ের ঝুঁকিতে থাকা কিশোরীদের নিয়ে গ্রামভিত্তিক স্বপ্নসারথি দল গঠন করেছে ব্র্যাকের সেলপ।

সর্বশেষ খবর