শুক্রবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

জনপ্রতিনিধি হয়েও মাসে পাচার করতেন ৪৫ লাখ পিস ইয়াবা

নিজস্ব প্রতিবেদক

কক্সবাজারের টেকনাফে পালংখালী ইউপি নির্বাচনে দুই বছর আগে ৯ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার নির্বাচিত হন জাফরুল ইসলাম ওরফে বাবুল। তবে জনপ্রতিনিধিত্বের আড়ালে তিনি মাদক ব্যবসা করতেন। তার নেতৃত্বেই টেকনাফে গড়ে ওঠে শীর্ষ মাদক সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেট মাসে মিয়ানমার থেকে প্রায় ৪০-৪৫ লাখ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট নিয়ে আসত। পরে তা ছড়িয়ে দেওয়া হতো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। শুধু মাদক কারবারিতেই সীমাবদ্ধ না থেকে বাবুল অস্ত্র, স্বর্ণ ও চাঁদাবাজিতেও জড়িয়ে পড়েন। বিভিন্ন থানায় হত্যাকান্ড ছাড়াও তার নামে অন্তত ২০টি মামলা রয়েছে। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, গতকাল ভোরে কক্সবাজারের টেকনাফ থানার কাটাখালী এলাকায় অভিযান চালিয়ে জাফরুল ইসলাম ওরফে বাবুল মেম্বারকে গ্রেফতার করেন র‌্যাব-১৫ এর সদস্যরা। এ সময় তার কাছ থেকে ৫৫ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, একটি বিদেশি পিস্তল, একটি দেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার বাবুল টেকনাফ এলাকার একজন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও শীর্ষ সন্ত্রাসী।

 বাবুল মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এলাকায় ২০-২৫ জনের একটি চক্র গড়ে তোলেন। চোরাচালানের গডফাদার হিসেবে পরিচিত তিনি। মাদক ব্যবসার পাশাপাশি এলাকায় চাঁদাবাজি, স্বর্ণ চোরাচালান, অবৈধ অস্ত্র, জোরপূর্বক বালু উত্তোলন, চোরাই পথে গবাদিপশু পাচার ও পাহাড় কেটে মাটির ব্যবসাসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন তিনি। র‌্যাবের মুখপাত্র মঈন বলেন, বাবুল ২০০৫ সালের পরে টেকনাফ এলাকায় মাদক ও অন্যান্য চোরাচালানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ২০১৭ সালে এলাকার অপর এক মাদক ব্যবসায়ী লুৎফুর রহমানের মাধ্যমে ক্যাম্পের রোহিঙ্গা শীর্ষ সন্ত্রাসী নবী হোসেনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর থেকে বাবুল বৃহৎ আকারে মাদক সিন্ডিকেটে জড়িয়ে পড়েন। তিনি নবী হোসেনের সঙ্গে চুক্তি করে চিংড়ি ব্যবসার আড়ালে নাফ নদী দিয়ে মাদক, অস্ত্র ও স্বর্ণ চোরাচালান করে আসছিলেন। মাদকসহ অন্যান্য চোরাকারবারির সময় তার দলের ২০-২৫ জন সশস্ত্র সদস্য পাহাড়া দিয়ে চালান বাংলাদেশে পৌঁছাত। বাবুল মিয়ানমার থেকে সপ্তাহে চার-পাঁচটি ইয়াবার চালান এনে বালুখালী ক্যাম্প সংলগ্ন তার নিয়ন্ত্রিত কিছু চিংড়ি খামারের ভিতরে রাখতেন। প্রতি চালানে প্রায় ২ লাখ পিস ইয়াবা থাকত; যা দেড় লাখ টাকায় কিনে এনে প্রায় ৩-৪ লাখ টাকায় বিক্রয় করতেন। প্রতি মাসে প্রায় ৪০-৪৫ লাখ পিস ইয়াবা নিয়ে আসত বাবুল সিন্ডিকেট। কমান্ডার মঈন বলেন, বাবুল ২০০১ সালে চট্টগ্রামে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নে ভর্তি হয়ে এক বছর পড়াশোনা করেন। পরে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে ২০০৩ সালে স্থানীয় কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। ২০০৫ সালে পালংখালী এলাকায় জাবু নামের এক ব্যক্তির খুনের দায়ে হওয়া মামলার আসামি হন। এরপর থেকেই অপরাধ জগতে জড়িয়ে পড়েন। অবৈধ অর্থ দিয়ে কক্সবাজারে বিলাসবহুল ফø্যাট, ট্রাক, এলাকায় জমি ও মাছের ঘেরসহ প্রায় ৫০ কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তোলেন।

সর্বশেষ খবর