শনিবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত গোপালগঞ্জ ফরিদপুর, নিহত ১

প্রতিদিন ডেস্ক

ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত গোপালগঞ্জ ফরিদপুর, নিহত ১

ফরিদপুরের ভাঙ্গা, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ঘরবাড়িসহ বহু গাছপালা বিধ্বস্ত হয়েছে। ভাঙ্গায় এ সময় ঘর চাপা পড়ে এক গৃহবধূ মারা গেছেন। গত বৃহস্পতিবার ও গতকাল এ ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বৃষ্টির সময় দেয়াল চাপা পড়ে স্বামী-স্ত্রী এবং কোনাবাড়ীতে এক শিশু মারা গেছে। এ ছাড়াও গতকাল হবিগঞ্জ ও ময়মনসিংহে বজ্রপাতে ৪ জন নিহত হয়েছেন। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে ১ মিনিটের টর্নেডোতে ৭০টি বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মুকসুদপুর উপজেলার উজানী ইউনিয়নের চান্দা বিলের প্রত্যন্ত  গ্রাম বাসুদেবপুর, মহাটালী, ডিগ্রিকান্দি ও টিকারডাঙ্গা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। টর্নেডোতে বাড়িঘরের পাশাপাশি গাছপালা উপড়ে পড়ে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ। ১৫ জন আহত হন। তারা স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। বাসুদেবপুর গ্রামের মনোজ বিশ্বাস বলেন, সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ ঝড় ওঠে। এ ঝড় মাত্র ৫০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট স্থায়ী হয়। ঝড়ের তান্ডবে ৪ গ্রামের ৭০টি বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অসহায় পরিবারগুলো বসতঘর হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিবারগুলোকে মানবিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম ইমাম রাজী টুলু বলেন, টর্নেডোতে বাসুদেবপুরসহ ৪টি গ্রামের ৪০টি পরিবারের ৭০টি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে প্রবল ঝড়ে বাড়িঘর ভেঙে পড়ে। গতকাল তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত ও অসহায় পরিবারের মধ্যে ৩০ কেজি করে চাল বিতরণ করেছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে টর্নেডোয় অন্তত ২৫টি কাঁচা টিনশেড ঘর লন্ডভন্ড হয়েছে। গতকাল বিকালে উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের লালমিয়া পাড়ার মেরাতলী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় বেশকিছু কাঠ গাছ উপড়ে যায় ও ভেঙে পড়ে। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। শাহবাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চৌধুরী বাদল জানান, সকাল থেকেই ভারী ও মাঝারি আকারে বৃষ্টিপাত হচ্ছিল। বেলা প্রায় ৩টা ২২ মিনিটে হঠাৎ মেরাতলী মাঠের দিক থেকে প্রচ- বেগে একটি টর্নেডো ধেয়ে আসে। মুহূর্তেই এটি এলাকার অন্তত ২৫টি টিনশেড কাঁচাঘরের ওপর আঘাত করে। আঘাতের ফলে ৭-৮টি বসতঘরসহ অন্তত ১৩টি বিভিন্ন ধরনের দোকানপাট ল-ভ- হয়ে যায়। এর মধ্যে সেলুন, মুদি মালের দোকান, কোমল পানীয়, ভাঙারি দোকান রয়েছে। এ ছাড়া টিনের চালা উড়ে বিদ্যুতের খুঁটির তারের সঙ্গে জড়িয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পাশাপাশি তিনটি গাছ মাটি থেকে উপড়ে পড়াসহ বিভিন্ন গাছের ডালপালা ভেঙে বাড়িঘরের ওপর পড়ে বসতঘর বিধ্বস্ত হয়।

ফরিদপুর : ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার দুটি এবং সালথা উপজেলার একটি গ্রাম ১ মিনিটের টর্নেডোতে লন্ডভন্ড হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে এ টর্নেডোতে শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে,্ উপড়ে গেছে কয়েক হাজার গাছপালা। বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে যাওয়ায় শুক্রবার থেকে বিদ্যুৎ বন্ধ রয়েছে এ তিনটি গ্রামে। টর্নেডোতে বাড়িঘর বিধ্বস্ত হওয়ায় কয়েক শ পরিবারের সদস্য এখন কষ্টের মধ্যে দিনযাপন করছে। অনেকেই খোলা আকাশের নিচে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেছেন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা।

স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, সন্ধ্যার দিকে সালথা উপজেলার বল্লভদী ইউনিয়নের সোনতুন্দী গ্রামে আঘাত হানে টর্নেডো। ১ মিনিটের এ টর্নেডোতে বিধ্বস্ত হয় ২১টি বসতঘর। সদর ইউনিয়নের বিদ্যাধর গ্রামের ইউপি সদস্য শরিফুল ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে আমাদের ইউনিয়নের তিনটি গ্রামের ২০ থেকে ৩০টি কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ি ও গাছপালা উপড়ে গেছে। আলফাডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহিদুল হাসান জাহিদ বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে দুই উপজেলার ছয়টি গ্রামের শতাধিক কাঁচাপাকা বাড়িঘর ভেঙে ল-ভ- হয়ে গেছে। এ ছাড়া কমপক্ষে তিন শতাধিক গাছপালা উপড়ে পড়েছে। অনেকেই এখন খোলা আকাশের নিচে রয়েছে।

ভাঙ্গা (ফরিদপুর) : বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফরিদপুরের ভাঙ্গায় ঝড়ের সময় ঘরের নিচে চাপা পড়ে ঝর্ণা বেগম (২১) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। তিনি ছোট হামিরদী গ্রামের শাহাবুদ্দিন শেখের স্ত্রী। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, টিনের ঘরে গাছ ভেঙে পড়ায় মৃত্যু হয় ওই গৃহবধূর। ঝড়ে আজিমনগর ইউনিয়নের পুকুরপাড়, কর্ণিকান্দা, তাড়াইল, ঈশ্বরদী গ্রাম, চান্দ্রা ইউনিয়নের পুলিয়া গ্রাম এবং হামিরদী ইউনিয়নের ছোট হামিরদী, বড় হামিরদী গ্রামের শতাধিক বাড়িঘর ল-ভ- হয়েছে। এ সময় কয়েক শ গাছ ভেঙে যায়। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ভাঙ্গা উপজেলার হামিরদী এলাকায় কয়েকটি বড় গাছ ভেঙে পড়ায় মহাসড়কে যানবাহন চলাচলও প্রায় দেড় ঘণ্টা বন্ধ থাকে। পরে ভাঙ্গা দমকল বাহিনীর সদস্যরা চেষ্টা চালিয়ে সড়ক থেকে গাছ সরিয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করে।

হামিরদী গ্রামের বাসিন্দা সায়েম মিয়া (৪৫) বৃহস্পতিবার রাতে বলেন, দুপুর থেকে ভারী বর্ষণ হচ্ছিল। সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ ৩ মিনিটের ঘূর্ণিঝড়ে দুই গ্রামের ৫০টির অধিক বাড়িঘর ও কয়েক শ গাছপালা ভেঙে যায়। আজিমনগর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান হাওলাদার বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ১ মিনিটের ঝড়ে আমার ইউনিয়নের চারটি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে কর্ণিকান্দা গ্রামে ক্ষতির পরিমাণ বেশি। ঝড়ে টিউবওয়েল উঠিয়ে নিয়েছে। টিনের ঘরের চাল উড়ে গেছে। গাছ উপড়ে পড়েছে। ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিমউদ্দিন বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তুলকদার গতকাল দুপুর ১২টার দিকে আজিমনগর ইউনিয়নের ৩০টি পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল, ২ কেজি করে ডাল, ১ লিটার কওে তেল বিতরণ করেছেন। তিনি বাকিদেরও সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। পরে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে টিনও বিতরণ করা হবে। কালিয়াকৈর (গাজীপুর) : কালিয়াকৈরে মাটির ঘরের দেয়াল ধসে চাপা পড়ে ঘুমন্ত বৃদ্ধ স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার রতনপুর নলিপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। গতকাল সকালে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে নিহতদের লাশ উদ্ধার করেন এলাকাবাসী। নিহতরা হলেন- কালিয়াকৈর উপজেলার রতনপুর নলিপাড়া এলাকার মৃত হাসেন আলীর ছেলে এমারত হোসেন (৬০) ও তার স্ত্রী ফালানি বেগম ওরফে আছিয়া (৫৪)। এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এমারত হোসেন উপজেলার সফিপুর বাজারে চালের ব্যবসা করতেন। তাদের সংসারে এক ছেলে ফারুক হোসেন ও মেয়ে আমেনা বেগম থাকলেও বিয়ে হয়েছে। বাড়িতে দুটি ঘরের মধ্যে একটিতে থাকেন ছেলে, ছেলের বউ ও তাদের সন্তানরা। অপর মাটির ঘরে থাকেন ওই বৃদ্ধ এমারত হোসেন ও তার স্ত্রী। বৃহস্পতিবার রাতেও প্রতিদিনের মতো খাবার খেয়ে ওই মাটির ঘরে ঘুমাতে যান স্বামী-স্ত্রী। কিন্তু মুষলধারে বৃষ্টির কারণে রাতের কোনো এক সময় ঘুমন্ত অবস্থায় মাটির ঘরের দেয়াল ধসে পড়ে। এ সময় দেয়ালের নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই স্বামী-স্ত্রী মারা যান। সারা রাত দেয়াল চাপা থাকার পরের দিন গতকাল সকালে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন এলাকাবাসী। তবে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে নিহতদের লাশ উদ্ধার করেন এলাকাবাসী। এদিকে দেয়াল চাপা পড়ে বৃদ্ধ স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যুর খবর পেয়ে দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজওয়ার আকরাম ইবনে সাজ্জাদ। গাজীপুর : গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী থানাধীন বাইমাইল পশ্চিমপাড়া এলাকায় দেয়াল ধসে ফরিদুল ইসলাম (৮) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সে কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর থানার ওমান্দ জামেদ জারগা গ্রামের মতি মিয়ার ছেলে। সে বাবা-মার সঙ্গে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী বাইমাইল পশ্চিমপাড়া হাফেজ মোল্লার বাসায় ভাড়া থাকত। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) কোনাবাড়ী থানার ওসি কে এম আশরাফ উদ্দিন জানান, ভারী বৃষ্টির কারণে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় দিকে দেয়াল ধসে পড়লে গুরুতর আহত হয় ফরিদুল। পরে তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়। হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় ধান খেতে কাজ করার সময় বজ্রপাতে সাদির আলী (৪৫) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বিকালে উপজেলার পানিউমদা ইউনিয়নের রোকনপুর গ্রামের পার্শ্ববর্তী হাওরে এ ঘটনা ঘটে। মৃত সাদির আলী রোকনপুর গ্রামের মৃত গোল মোহাম্মদের ছেলে। জানা গেছে, টানা বৃষ্টির মধ্যে রোকনপুর গ্রামের পার্শ্ববর্তী হাওরে নিজের ফসলি জমিতে কাজ করছিলেন কৃষক সাদির আলী। এ সময় হঠাৎ বজ্রাঘাতে কৃষক সাদির আলী ঘটনাস্থলে নিহত হন। নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপম দাস অনুপ বলেন, বজ্রপাতে এক কৃষক মারা গেছেন। তার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে পুকুরের পানি নিষ্কাশনের সময় বজ্রপাতে চাচা-ভাতিজার মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকালে উপজেলার পাগলা থানা এলাকার লংগাইর ইউনিয়নের সতেরোবাড়ী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- ওই গ্রামের মৃত আবদুুর রাজ্জাক মন্ডলের ছেলে সোহেল মন্ডল (৪০) ও আকবর আলী মন্ডলের ছেলে রাজিব মন্ডল (৩৫)। লংগাইর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল আমিন বিপ্লব বলেন, বৃষ্টির পানিতে পুকুর তলিয়ে মাছ ভেসে যাচ্ছিল। তা দেখে সোহেল মন্ডল ও রাজিব মন্ডল পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে যান। এ সময় বজ্রপাতে সোহেল ও রাজিব গুরুতর আহত হন। তাদের উদ্ধার করে গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুজনকেই মৃত ঘোষণা করেন।

সর্বশেষ খবর