শনিবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে স্থবির এলডিপির তৎপরতা ভাটা অলির দুর্গেও

ইমরান এমি, চট্টগ্রাম

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ড. অলি আহমদের নিজ এলাকা চট্টগ্রামে স্থবির হয়ে পড়েছে দলটির সাংগঠনিক তৎপরতা। ‘বীরবিক্রম’ খেতাবধারী সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল এবং বিএনপির সাবেক এই নেতার চট্টগ্রামে রয়েছে আলাদা জনপ্রিয়তা। তার দল এলডিপি কিন্তু সেভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি। ফলে ধীরে ধীরে জন্মস্থান চন্দনাইশেও তার এলডিপির কার্যক্রমে ভাটা পড়েছে। অনেক নেতা দলত্যাগ করে চলে গেছেন ভিন্ন দলে। তবে তার অনুসারীদের বিশ্বাস সুষ্ঠু নির্বাচন হলে নিজ এলাকায় ব্যাপক ভোটে বিজয়ী হবেন অলি আহমদ।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা এলডিপির সভাপতি অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন বলেন, সাংগঠনিকভাবে আমাদের সব উপজেলায় কমিটি আছে এবং সেগুলো সক্রিয়। এখন মিটিং-মিছিল কিছু করা যাচ্ছে না, করলেই মামলা দেওয়া হচ্ছে। ২০১২ সালে আমাদের দলীয় কার্যালয়ে বোমা পেয়েছে বলে একটি মামলা হয়েছিল। এক দশক ধরে তা চালাতে চালাতে ক্লান্ত। আমরা তো বিএনপির মতো এত বেশি মামলা চালাতে পারব না। তবে কেন্দ্রীয়ভাবে নির্দেশনা পেলে বড় ধরনের শোডাউন করার মতো সক্ষমতা আছে আমাদের। দল ছেড়ে যাওয়া বিষয়ে তিনি বলেন, যারা দল ছেড়ে চলে গেছেন তারা যে আমাদের শত্রু তা নয়। তারা আমাদের সঙ্গে লিয়াজোঁ করেন। কেউ চেয়ার টিকিয়ে রাখার জন্য দল ছেড়েছেন আবার কেউ নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য দল ছেড়েছেন। তবে সবার সঙ্গে যোগাযোগ আছে, তারাও যোগাযোগ করেন আমাদের সঙ্গে। সামনে আমাদের ভয় ভেঙে রাজপথে নামতে হবে। জানা যায়, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) প্রতিষ্ঠা করেন বিএনপির তৎকালীন স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য অলি আহমদ। সে সময়ে চট্টগ্রামের বিএনপির অনেক নেতাও বিএনপি ছেড়ে যোগ দিয়েছিলেন এলডিপিতে। চট্টগ্রামের তিন সাংগঠনিক জেলায় এলডিপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা এলডিপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা এলডিপির সভাপতি কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুল আলম তালুকদার ও মহানগর এলডিপির সমন্বয়কারী হিসেবে আছেন এম নাসিমুল হুদা। এলডিপির অঙ্গ সংগঠন থাকলেও সেসব দলের চোখে পড়ার মতো কোনো কার্যক্রম নেই। সর্বশেষ গত বছর রমজানে নগরীর কাজীর দেউড়ির একটি কমিউনিটি সেন্টারে ইফতার পার্টি ছিল দলটির চট্টগ্রামে সর্বশেষ রাজনৈতিক সভা। এরপর থেকে আর কোনো সমাবেশ হয়েছে বলে বলতে পারছেন না দলটির নেতারা। এ ছাড়াও কর্নেল অলির নিজ এলাকা চন্দনাইশেও সেভাবে কোনো ধরনের কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়নি দলটিকে। তবে সময়ের পরিক্রমায় তারা ফের ফিরে এসেছেন বিএনপিতে।

জানা যায়, চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা এলডিপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় এলডিপির সদস্য ছিলেন অ্যাডভোকেট ফৌজুল আমিন চৌধুরী। বিএনপি ছেড়ে এলডিপিতে গিয়ে ফের ভিড়েছেন বিএনপিতে। বিএনপিতে এসেই উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হয়েছেন। এ ছাড়াও কর্নেল অলির নিজ নির্বাচনী এলাকা চন্দনাইশ উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুর জব্বার ছিলেন এলডিপির যুব সংগঠন গণতান্ত্রিক যুবদলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহসভাপতি। এলডিপির সমর্থনে প্রথমবার ও দ্বিতীয়বার উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছেন তিনি। তৃতীয়বার নির্বাচনের আগে এলডিপি ত্যাগ করে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। তবে এখনো কোনো পদ পাননি আওয়ামী লীগে। একইভাবে লোহাগাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল ছিলেন উপজেলা এলডিপির সভাপতি। তিনিও এখন এলডিপিতে নেই, দল ত্যাগ করে আওয়ামী রাজনীতিতে সক্রিয় তিনি। এ তিন উপজেলায় এলডিপির সভাপতি কর্নেল অলির জনপ্রিয়তা রয়েছে। তবে সময়ের পরিক্রমায় তার দল ছাড়ছেন নেতা-কর্মীরা। ফলে আগামীতে আরও অনেক নেতা এলডিপি ছেড়ে বিএনপিসহ অন্য দলে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী নির্বাচনে এলডিপি অংশ নিলে দলটির চেয়ারম্যান অলি আহমদ চন্দনাইশ আসনে প্রার্থী হবেন। পাশাপাশি চট্টগ্রাম-১৫ সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসন থেকেও নির্বাচন করতে পারেন। এ ছাড়াও চট্টগ্রাম-১৬ বাঁশখালী আসনে অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন, রাঙ্গুনিয়া আসনে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক এমপি নুরুল আলম, পটিয়া আসনে এলডিপির কেন্দ্রীয় নেতা ইয়াকুব আলী নির্বাচন করার সম্ভাবনা।

 

সর্বশেষ খবর