সোমবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

উচ্চ মূল্যস্ফীতিই মূল কাঁটা

অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের মূল্যায়ন

মানিক মুনতাসির

উচ্চ মূল্যস্ফীতিই মূল কাঁটা

রিজার্ভ সংকট, রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে খরা, রাজস্ব আদায়ে ধীরগতির চেয়েও উচ্চ মূল্যস্ফীতিকে দেশের অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় সংকট বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। অব্যাহত চড়া মূল্যস্ফীতির চাপকে অর্থনীতির জন্য কাঁটা হিসেবেও আখ্যা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনীতি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদন ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ এ এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। একই সঙ্গে আইএমএফের একটি মিশন ৪ অক্টোবর থেকে ঢাকা সফর করছে। এই সফরে তারা বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর ও অর্থবিভাগের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে মূল্যস্ফীতির চাপ কমিয়ে আনার বিষয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখে জ্বালানির দাম না কমালে মূল্যস্ফীতি কমবে না বলেও মনে করে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ। এ জন্য জ্বালানির মূল্য কমানোরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বাংলাদেশে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১১ বছরের সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। যা দুই অঙ্কের ঘর ছুঁইছুঁই করছে। মূল্যস্ফীতির এই চাপের কারণে সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি সংকটে রয়েছে। এ ছাড়া বিপুল পরিমাণ আমদানি ব্যয় মেটাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৮ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গেছে। অবশ্য রেমিট্যান্স ও প্রবাসী আয়েও চলছে ধীরগতি। এ জন্য ২০২৪ অর্থবছরেও দেশের অর্থনীতি চাপের মুখে থাকবে এবং মধ্য মেয়াদে এটি ধীরে ধীরে উন্নত হবে। ২০২৫ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়াতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এদিকে ব্যালেন্স অব পেমেন্ট বা লেনদেনের ভারসাম্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এক্ষেত্রে আমদানি পণ্যের দাম পরিশোধ, বিদেশি ঋণ পরিশোধসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে যে অর্থ বেরিয়ে যায় এবং এর বিপরীতে রপ্তানি আয়, অনুদান, ঋণ ও রেমিট্যান্স হিসেবে যে পরিমাণ অর্থ দেশে প্রবেশ করে- তার পার্থক্যই হচ্ছে ব্যালেন্স অব পেমেন্ট। বিশ্বব্যাংক বলছে,  ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক মুদ্রানীতিতে কঠোরতা এই ব্যালেন্স অব পেমেন্ট ঘাটতি বাড়াচ্ছে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে কমিয়ে দিচ্ছে। এ অবস্থা  থেকে বেরোতে হলে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয় বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ বলছে, জ্বালানির দাম বৃদ্ধি এবং মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে মুদ্রাস্ফীতি আরও বেড়েছে। মুদ্রাস্ফীতি কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছে। তবে সুদের হার নির্ধারিত করে দেওয়ার কারণে সেটি খুব একটা কাজ করেনি। তবে আশা করা হচ্ছে আমদানি কমিয়ে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাড়াতে পারলে মধ্য মেয়াদে মুদ্রাস্ফীতিও ধীরে ধীরে কমে আসবে। তবে স্বল্প মেয়াদে জ্বালানির অতিরিক্ত দাম এবং অন্য খাতে এর প্রভাব, টাকার একটানা অবমূল্যায়ন, আমদানির ওপর চলমান কঠোরতা, ব্যাংকগুলোতে মার্কিন ডলারের ঘাটতিসহ নানা কারণে ২০২৪ অর্থবছরেও মুদ্রাস্ফীতি বাড়তিই থাকবে। যা দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির অগ্রগতির জন্য বড় বাধা হিসেবে দেখা দিয়েছে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মূল্যস্ফীতির চাপ কমানোর কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। মুদ্রানীতিতে নেওয়া পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। যার ফলে মূল্যস্ফীতির চাপ অব্যাহতভাবে বাড়ছে বলে তিনি মনে করেন।

সর্বশেষ খবর