সোমবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ডলারের চাহিদা বাড়ছে ব্যাংকগুলোর

উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই, বলছে বাংলাদেশ ব্যাংক

শাহেদ আলী ইরশাদ

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা ডলার বিক্রি বাড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে প্রতি মাসে ১০০ কোটি ডলারের কম পরিমাণ মার্কিন মুদ্রা বিক্রি করেছে। কিন্তু জুলাই মাসের শুরু থেকে বিক্রির পরিমাণ ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। তবে ডলার সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ, অগ্রিম ডলার কেনাবেচার পাশাপাশি রপ্তানিকারকের রিটেনশন কোটা (ইআরকিউ) হিসাবে জমাকৃত বৈদেশিক মুদ্রার সীমা অর্ধেক করে দিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুসারে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে রেকর্ড ১ হাজার ৩৫৭ কোটি ডলার বিক্রি করেছে। যা ডলার সংকটের মধ্যেও ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক লেনদেন মেটাতে সাহায্য করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ডলার বিক্রির ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। জুলাই মাসে ১১৪ কোটি ডলার, আগস্ট মাসে ১১৫ কোটি ডলার এবং সেপ্টেম্বর মাসে রেকর্ড ৯৭ কোটি ডলার বিক্রি করেছে। সেপ্টেম্বর মাসে ৯৭ কোটি ডলার বিক্রি সম্পর্কে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেছেন, সাপ্তাহিক ছুটির পাশাপাশি ওই মাসে দুটি সরকারি ছুটি ছিল। ছুটির দিনগুলোতে ডলার বিক্রি হয়নি। সে জন্য সেপ্টেম্বরে ডলার বিক্রির পরিমাণ ১০০ কোটি ডলারের কম ছিল। অন্যথায়, এটি আগস্টের সংখ্যা ছাড়িয়ে যেতে পারত।

তিনি বলেন, ক্রমবর্ধমান ডলার বিক্রি রিজার্ভের ওপর অনেক চাপ সৃষ্টি করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, জুলাই মাস শেষে মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৯৭৩ কোটি ডলার। এটি আগস্টে নেমে আসে ২ হাজার ৭২৬ কোটি ডলারে এবং সেপ্টেম্বরের শেষে আরও নেমে আসে ২ হাজার ৬৯৩ কোটি ডলারে। আর ৫ অক্টোবর পর্যন্ত রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৬৮৬ কোটি ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকাররা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক খাদ্যদ্রব্য, রাসায়নিক এবং পেট্রোলিয়াম পণ্য আমদানির জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা মেটাতে ডলার বিক্রি করছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, দেশে মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে ২৬ বিলিয়ন ডলার। রিজার্ভ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। আমাদের আশপাশের অনেক দেশ আমাদের চেয়ে কম রিজার্ভ দিয়ে চালাচ্ছে। তবে শক্তিশালী অর্থনীতি বিবেচনায় নিয়ে আমাদের রিজার্ভ অবশ্যই সমন্বয় করতে হবে। অর্থাৎ রিজার্ভ বৃদ্ধির জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। এই সমন্বয়ের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী রাখতে আমাদের সব চেষ্টা আছে।

জানা গেছে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ডলারের চাহিদা মেটানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। রেমিট্যান্স  এবং রপ্তানি আয়ে ধীরগতির কারণে ব্যাংকগুলো নিজেদের ডলারে চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পরই বিশ্বব্যাপী আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি থেকে আয়ের প্রত্যাশিত মাত্রা কম। যার প্রভাবে ২০২২-২৩ অর্থবছরের শুরু থেকে বৈদেশিক মুদ্রা চাপের মধ্যে পড়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। তারপর থেকে বাজারে হস্তক্ষেপের অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা মেটাতে সাহায্য করার জন্য ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি জোরদার করেছে। তবে আমদানি নিয়ন্ত্রণ ও আমদানি করা পণ্যের দাম যাচাইয়ের কাজটি নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি ভালোভাবে করছে বলে মনে করেন বাণিজ্যিক ব্যাংকের এমডিরা। এ ছাড়া বাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক রপ্তানিকারকের রিটেনশন কোটা (ইআরকিউ) হিসাবে জমাকৃত বৈদেশিক মুদ্রার সীমা অর্ধেক করে দিয়েছে। ফলে রপ্তানি আয়ের বড় অংশই এখন থেকে নগদায়ন করে ফেলতে হবে। এ কারণে ব্যবসায়ীরা নিজেদের হিসাবে ডলার কম রাখতে পারবেন। এ ছাড়া চালু করেছে অগ্রিম ডলার কেনাবেচার সুবিধাও। এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, অগ্রিম ডলার কেনা ও বিক্রির সুবিধা আগে এক বছর মেয়াদি ছিল না, এখন চালু করা হলো। এটা ভালো উদ্যোগ।

সর্বশেষ খবর