বুধবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

আমদানিতেও কাটেনি স্যালাইন সংকট

কয়েক গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে স্যালাইন ♦ হিমশিমে ডেঙ্গু রোগীরা

জয়শ্রী ভাদুড়ী

আমদানিতেও কাটেনি স্যালাইন সংকট

দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় তৈরি হয়েছে স্যালাইনের সংকট। কয়েক গুণ বেশি দামে স্যালাইন কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। পরিস্থিতি সামলাতে স্যালাইন আমদানি করছে সরকার। কিন্তু তাতেও সমাধান মিলছে না। এখনো বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে স্যালাইন। চিকিৎসা ও পথ্য খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীরা।

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের স্যালাইন ইউনিটটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এই ইউনিটের উৎপাদনক্ষমতা দৈনিক ১২ হাজার ব্যাগ। এই ইউনিট চালু হলে স্যালাইন আমদানির ঝামেলায় পড়তে হতো না বলে মতামত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘করোনার সময় থেকে আমরা জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের স্যালাইন ইউনিটটি চালু করার দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু দেশের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা আত্মনির্ভরশীলতায় আগ্রহী নন। তারা আমদানির প্রতি বেশি আগ্রহী। কারণ আমদানিতে কমিশন-বাণিজ্যের সুযোগ থাকে।’ সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন ফার্মেসি ঘুরে দেখা যায়, ডেক্সট্রোজ স্যালাইন, ডিএনএস স্যালাইন, সাধারণ স্যালাইন, হেমোডাইলোসিস ফ্লুইড, হার্টসম্যান স্যালাইন সবকিছুর দামই কয়েকগুণ বেড়েছে। সাধারণ ৬০-৭০ টাকা দামের স্যালাইন বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৭০ টাকায়। ডিএনএস স্যালাইনের স্বাভাবিক বাজারদর ৯৭ টাকা হলেও বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। অধিকাংশ দোকানেই মিলছে না হার্টসম্যান স্যালাইন। মিটফোর্ডের সেবা ফার্মার বিক্রয় কর্মী সহিদুর বলেন, ওষুধ কোম্পানির কাছে চাহিদা দিলে বলছে স্যালাইন নেই। ১০০ পিস চাহিদা জানালে পাঁচ পিস দিচ্ছে। বাজারে স্যালাইনের দামও বেশি।

কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির পরিচালক জাকির হোসেন রনি বলেন, স্যালাইন সংকট নিরসন, ‘ওষুধ-স্যালাইনের দাম নিয়ন্ত্রণ, ভেজাল ওষুধ ঠেকাতে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর, স্বাস্থ্যসেবা অধিদফতর, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং কেমিস্ট ও ড্রাগিস্ট সমিতির সমন্বয়ে একটা টাস্ক ফোর্স গঠন করা প্রয়োজন।’   

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, দেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে            ভর্তি ও বাড়িতে থাকা রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকলে দেখা দেয় স্যালাইনের সংকট। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্যালাইন আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। প্রাথমিকভাবে ভারত থেকে ৭ লাখ ব্যাগ স্যালাইন আমদানির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছিল স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। তবে ডেঙ্গু পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ায় সরকার আরও ২০ লাখ ব্যাগ স্যালাইন আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর প্রতি ব্যাগের দাম ধরা হয়েছে ১৪৬ টাকা। অথচ রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত এক ব্যাগ স্যালাইন (৫০০ মিলি) বিক্রি করা হতো ২৫ টাকায় এবং প্রতি ব্যাগ ১০০০ মিলি স্যালাইন ৪২ টাকায়। ইতোমধ্যে স্যালাইনের কয়েক চালান দেশে এসে পৌঁছেছে। জানা যায়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বিশেষ ব্যয় খাতের বরাদ্দ অর্থ থেকে এ ব্যয় বহন করা হবে। প্রস্তাবিত ২০ লাখ পিস স্যালাইন কেনার আনুষঙ্গিক খরচসহ সম্ভাব্য মূল্য ধরা হয়েছে ২৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা। প্রতিটি স্যালাইনের দাম পড়বে ১৪৫ টাকা ৯৫ পয়সা।

সর্বশেষ খবর