বুধবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা মধ্যরাতে শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক

মা ইলিশ রক্ষায় নদী ও সাগরে সব ধরনের মাছ শিকারে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। আজ মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া এ নিষেধাজ্ঞা চলবে ২ নভেম্বর পর্যন্ত। নিষেধাজ্ঞার কারণে সাগর ও নদী থেকে ট্রলার নিয়ে উপকূলে ফিরতে শুরু করেছেন জেলেরা। ইতোমধ্যে শত শত ট্রলার ভিড়ছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বরগুনার পাথরঘাটার বিএফডিসি ঘাটে।

জানা যায়, আশ্বিনের পূর্ণিমা ইলিশ প্রজননের প্রধান মৌসুম। এ সময় সমুদ্র থেকে ডিম ছাড়ার জন্য মিঠা পানির নদনদীতে চলে আসে মা ইলিশ। আর এই ডিম ছাড়া নির্বিঘ্ন করতে ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। গত ২০ সেপ্টেম্বর ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন-সংক্রান্ত জাতীয় টাস্কফোর্স কমিটির সভায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সময় দেশব্যাপী ইলিশ পরিবহন, কেনাবেচা, মজুদ ও বিনিময়ও নিষিদ্ধ থাকবে। একই সঙ্গে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান বাস্তবায়ন করা হবে। নিষিদ্ধ থাকাকালে ইলিশ আহরণে বিরত থাকা জেলেদের সরকার ভিজিএফের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা দেবে বলেও ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন-সংক্রান্ত জাতীয় টাস্কফোর্স কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইলিশ সম্পদ সংরক্ষণে আইন অমান্যকারী কমপক্ষে এক থেকে সর্বোচ্চ দুই বছর সশ্রম কারাদন্ড অথবা ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট চাঁদপুরের ঊর্ধŸতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আশরাফুল আলম জানান, সম্প্রতি ঢাকা-চট্টগ্রাম-বরিশাল বিভাগের ইলিশের বিভিন্ন অভয়াশ্রমে গবেষণা করা হয়েছে। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে এ গবেষণায় নদী ও সমুদ্রে বিচরণরত ইলিশের মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ডিম ছাড়ার উপযুক্ত হয়েছে বলে তথ্যে উঠে এসেছে। জেলেরা জানান, কয়েক বছর ধরে নদনদীতে তেমন মাছের দেখা মিলছে না। গবেষকেরা যতই গবেষণা করুক যদি নদনদী থেকে ট্রলিং বোট, অবৈধ নিষিদ্ধ জাল, ঘোফ, বেহুন্দি, চরগড়া বন্ধসহ নেট জাল সাগরে ফেলা শতভাগ নিষিদ্ধ না করে তাহলে ইলিশসহ যাবতীয় মাছের বংশ ধ্বংস হয়ে যাবে। এতে আর্থিক সংকটে পড়বে দেশ। মা ইলিশ রক্ষায় উপকূলের জেলেরা শতভাগ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তুত। তবে এই সময়ে যেন ভারতের ট্রলার বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে মাছ শিকার করতে না পারে সে দিকেও খেয়াল রাখতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন জেলেরা। চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় জেলেরা নৌকাসহ মাছ ধরার সরঞ্জামাদি তীরে উঠিয়েছে। নিষেধাজ্ঞাকালীন তারা জাল ও নৌকা মেরামত করে সময় কাটাবেন। চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, নিষেধাজ্ঞাকালীন জেলেদের জন্য ২০ কেজির পরিবর্তে ২৫ কেজি চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্যাহর বরাত দিয়ে ভোলা প্রতিনিধি জানান, মা ইলিশ রক্ষায় জেলা প্রশাসনের সহায়তায় সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে দিন রাত ২৪ ঘণ্টা নদীতে অভিযান চালানো হবে। সরকারের পক্ষ থেকে জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল ইতোমধ্যে বিতরণ শুরু হয়েছে। যারা পায়নি তারা কয়েক দিনের মধ্যে পেয়ে যাবেন।

সর্বশেষ খবর