শিরোনাম
শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

সমাধান হয় না জলাবদ্ধতার

রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকা

হাসান ইমন

সমাধান হয় না জলাবদ্ধতার

রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে জটিলতা দেখা দিয়েছে। এই এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য পিলখানার ভিতর দিয়ে দুটি লাইন বুড়িগঙ্গায় পড়েছিল, সে লাইনগুলো ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়। গত ২১ সেপ্টেম্বর ভারী বর্ষণ হলে নিউমার্কেট ও পিলখানায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। যদিও গত জুলাইয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি আয়োজিত আন্তসংস্থার সমন্বয় সভায় পানি নিষ্কাশন লাইন বন্ধ হওয়ার বিষয়টি উঠে আসে। তারপরও সমাধানের কোনো পথ বের করেনি সংস্থাটি।

কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, পিলখানার ভিতর দিয়ে বুড়িগঙ্গা পর্যন্ত পানি নিষ্কাশনের একটি বৃহৎ অবকাঠামো ছিল। ২০০৯ সালের পিলখানা ট্র্যাজেডির পর থেকে অনেকগুলো মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রাইফেলস স্কয়ার থেকে সীমান্ত স্কয়ার নিয়ে ধানমন্ডি খালের সঙ্গে সংযোগ ছিল। নায়েম রোড দিয়ে নর্দমার যে অবকাঠামো ছিল সেটা পিলখানার ভিতর দিয়ে বুড়িগঙ্গা পর্যন্ত বিস্তৃত। এই দুটো মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টি বাড়লেই সীমান্ত মার্কেট তলিয়ে যায়। নায়েম রোডে সামান্য বৃষ্টি বা সাধারণ মানুষের ব্যবহার্য পানিতেই তলিয়ে যায়। ধানমন্ডি-২ নম্বর রাইফেলস স্কয়ার ও সীমান্ত স্কয়ারের দেয়ালের মাঝখানে একটি রাস্তার জায়গা আছে। নিউমার্কেট ৩ নম্বর গেট দিয়ে বের হয়ে হাতের বামের গলি, যা বের হওয়ার কথা সাত মসজিদ সড়কে। সীমান্ত ও রাইফেলস ক্লাব অবকাঠামো হয়ে যাওয়াতে পানি প্রবাহের জায়গা বন্ধ হয়ে যায়। গত ১০ জুলাই ঢাকা মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে আন্তসমন্বয় সভায় এ বিষয়গুলো উঠে আসে। সভায় ২ নম্বর গেট থেকে বুড়িগঙ্গা পর্যন্ত যদি বড় করে নর্দমা লাইন দেওয়া যায় নায়েম ও সীমান্ত স্কয়ারের জলাবদ্ধতা কমে যাবে বলে পরামর্শ আসে। সভায় এক সপ্তাহের মধ্যে ঢাকা ওয়াসা, বিজিবি ও ডিএসসিসির প্রতিনিধিরা পরিদর্শন করে বিকল্প পানি নিষ্কাশন লাইনের ব্যবস্থা করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরই মধ্যে প্রায় তিন মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো সমাধানের পথ বের করতে পারেনি সংস্থাগুলো। এরই মধ্যে গত ২১ সেপ্টেম্বরের ভারী বর্ষণে রাজধানীবাসীর বিভীষিকাময় এক রাত ছিল। ওই দিন ঢাকায় টানা ছয় ঘণ্টায় বৃষ্টি হয় ১২২ মিলিমিটার। এতে অনেক সড়ক ঘণ্টার পর ঘণ্টা জলাবদ্ধ হয়ে থাকে। কোমর সমান পানি পেরিয়ে বাসায় ফেরেন অনেকে। কয়েক কিলোমিটার পথ পেরিয়ে ঘরে ফিরতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলে যায় কারও কারও। এই জলাবদ্ধতা অধিকাংশ এলাকায় ১২ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ হলেও নিউমার্কেটে ২৪ ঘণ্টায়ও পানি নিষ্কাশন করতে পারেনি সিটি করপোরেশন।         

এ বিষয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) পূর্ত সার্কেলের পরিচালক লে. কর্নেল মো. আরিফুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিজিবি এলাকায় একটু ভারী বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এ সমস্যা সমাধানের জন্য ডিএসসিসি মেয়রসহ সভা করেছি। এখন সমস্যা সমাধানে আমরা যৌথভাবে কাজ করছি। সম্প্রতি বৃষ্টিতে যে জলাবদ্ধতা হয়েছে, সেখানে সিটি করপোরেশনসহ যৌথভাবে ময়লা পরিষ্কার করা হয়েছে। আশা করি এই সমস্যা দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।

জানতে চাইলে ঢাকা ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, নিউমার্কেট ও বিজিবি এলাকায় জলাবদ্ধতা সমাধানে সভা হয়েছে। এগুলো সমাধানে প্রক্রিয়া চলছে। আশা করি শিগগিরই এই সমস্যা সমাধান হবে।

এদিকে গ্রিন রোড, কাঁঠালবাগান, কলাবাগান, তল্লাবাগ, শুক্রাবাদ, পরীবাগ, হাতিরপুল এলাকা ও ধানমন্ডির কিছু অংশের নর্দমার পানি বক্সকালভার্ট হয়ে হাতিরঝিলে যায়। কিন্তু বৃষ্টির সময়েও হাতিরঝিল এলাকার স্লুইস গেট বন্ধ থাকে। রাজউক কর্তৃপক্ষ কাজ না করায় এসব এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। একই সঙ্গে হাতিরঝিলের কিছু অংশ ভরাট করার ফলে পানিপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয়। সভায় এ বিষয়গুলো উঠে আসে। সভায় এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, পিলখানার ভিতর দিয়ে দুটি পানি নিষ্কাশন লাইন ছিল যেগুলো বুড়িগঙ্গা নদীতে পড়েছে। কিন্তু ২০০৯ সালের পর থেকে সেটা বন্ধ হয়ে যায়। যেগুলো সমাধানে ডিএসসিসি, বিজিবি ও ঢাকা ওয়াসা পরিদর্শন শেষে মতামত দিতে নির্দেশনা দেন।

সর্বশেষ খবর