শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

আবারও বেড়েছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি

জুলাই-আগস্টে ৫৫৬২ কোটি টাকা বিক্রি

শাহেদ আলী ইরশাদ

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-আগস্টে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৪০১ কোটি ২০ লাখ। জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, গত বছরের জুলাইয়ে ৩৯৩ কোটি টাকার বিপরীতে চলতি বছরের জুলাইয়ে ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি হয়েছে। একই ভাবে ২০২২ সালের আগস্টে মাত্র ৮ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হলেও চলতি বছরের আগস্টে বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র। বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটে ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগের পাশাপাশি ব্যাংকের চেয়ে সুদের হার বেশি হওয়ায় সঞ্চয়পত্র বেছে নিয়েছে মানুষ। ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৯ হাজার ৯১৫ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি ইতিবাচক হলেও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩ হাজার ২৯৫ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি নেতিবাচক ছিল। চলমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে সরকার এ সঞ্চয়পত্র থেকে তহবিল ধার করার পরিবর্তে ঋণ পরিশোধের দিকে মনোনিবেশ করায় গত আর্থিক বছরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির হয়েছিল। সুদের হার হ্রাস এবং বিভিন্ন নথি সরবরাহের প্রয়োজনীয়তাও মানুষকে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে নিরুৎসাহ করেছে বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা। ব্যাংক কর্মকর্তাদের মতে, সঞ্চয়পত্র কেনার সময় সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ এবং জাতীয় পরিচয়পত্র, কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) বাধ্যতামূলক করায় বিক্রি আরও কমে গেছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। বাজেটের ঘাটতি অর্থায়নের জন্য সরকার ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশের ব্যাংকব্যবস্থা থেকে অনেক ঋণ নিয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, সরকার ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১ লাখ ২৪ হাজার ১২২ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল, যার মধ্যে ৯৮ হাজার ৮২৬ কোটি টাকা নিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। কয়েক মাস ধরে বেশ কয়েকটি ব্যাংক তারল্য সংকটে ভুগছে। ব্যাংক খাতের বিশাল অঙ্কের খেলাপি ঋণ আর্থিক খাতে তরলতার চাপ বাড়িয়ে তুলেছে। এজন্য তহবিল সংগ্রহে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের দিকে মনোনিবেশ করতে পারে সরকার। চলতি অর্থবছর থেকে ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ থাকলে রিটার্নের সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ ছাড়া গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব রকম সঞ্চয়পত্রের সুদহার ২ শতাংশের মতো কমিয়ে দেয় সরকার। তার আগে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগসীমা কমিয়ে আনা হয়। এ ছাড়া ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে মুনাফার ওপর উৎসে করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। দুর্নীতি বা কালো টাকায় সঞ্চয়পত্র কেনা বন্ধে ক্রেতার তথ্যের একটি ডাটাবেজ তৈরি হয়েছে। বর্তমানে চার ধরনের সঞ্চয়পত্র রয়েছে। পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ দশমিক ৫২, পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশনার সঞ্চয়পত্রে ১১ দশমিক ৭৬, পাঁচ বছর মেয়াদি মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে ১১ দশমিক ২৮, তিন বছর মেয়াদি ও তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ দশমিক ৪ শতাংশ। কয়েক দফায় সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো হলেও এখনো তা ব্যাংকের তুলনায় বেশি।

সর্বশেষ খবর