শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

শক্তিশালী অবস্থানে আওয়ামী লীগ দুর্গ ভাঙতে মরিয়া বিএনপি

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

শক্তিশালী অবস্থানে আওয়ামী লীগ দুর্গ ভাঙতে মরিয়া বিএনপি

ধনবাড়ী ও মধুপুর উপজেলা নিয়ে টাঙ্গাইল-১ সংসদীয় আসন। জেলার রাজনীতিতে আসনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সম্ভাব্য প্রার্থীরা এলাকায় গণসংযোগ করছেন। বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও সামাজিক কর্মকান্ডে তারা অংশগ্রহণ করছেন।

মনোনয়নপ্রত্যাশীরা পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন টাঙিয়ে মধুপুর ও ধনবাড়ী উপজেলাবাসীকে শুভেচ্ছা জানানোর মাধ্যমে আলোচনায় আসার চেষ্টা করছেন। দলীয় মনোনয়ন পেতে জোর লবিং করছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে।

১৯৭৩ সালে দেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৩ আসন পেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলেও মধুপুর-ধনবাড়ীর এ আসনটি হাতছাড়া হয়ে যায়। তখন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহেন্দ্র লাল বর্মণকে পরাজিত করেন জাসদ প্রার্থী আবদুস সাত্তার। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক এই আসনে বিজয়ী হওয়ার পর থেকে আসনটি আওয়ামী লীগের শক্তিশালী দুর্গ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। তিনি এ আসন থেকে টানা চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। আগামী নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হবেন। ড. আবদুর রাজ্জাকের আবারও দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত। তিনি নিয়মিত নির্বাচনী এলাকায় যাচ্ছেন এবং দলীয় কর্মকান্ডে অংশ নিচ্ছেন। ড. রাজ্জাক এলাকায় অনেক উন্নয়ন করেছেন। নিয়মিতই তিনি সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন।

শোনা যাচ্ছে, এ আসনে আরও কয়েকজন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইতে পারেন। তারা হলেন, মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মধুপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ছরোয়ার আলম খান আবু, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা, টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্সের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার তারেকুল ইসলাম তারেক, কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম হিরণ।

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জানান, ড. আবদুর রাজ্জাক এবারও নৌকার মনোনয়ন পাবেন এবং নির্বাচনে তিনিই বিজয়ী হবেন। এক্ষেত্রে তার সময়ে মধুপুর-ধনবাড়ীতে ব্যাপক উন্নয়নের কথা তারা উল্লেখ করেন।

জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক জানান, বিগত নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তার নির্বাচনী এলাকা ধনবাড়ী ও মধুপুরে ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে। ধনবাড়ীতে মডেল উপজেলা ভবন, ৫০ শয্যার হাসপাতাল, থানা ভবন, ফায়ার সার্ভিস, প্রাণিসম্পদ হাসপাতাল, বিদ্যুৎ, সড়ক নির্মাণ, মধুপুরে ৭২ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন অত্যাধুনিক সাইলো নির্মাণ, মধুপুর অডিটরিয়ামসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ও অবকাঠামো খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। ধনবাড়ী ও মধুপুর উপজেলার প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। মধুপুর-ধনবাড়ী উপজেলা এখন উন্নয়নের রোল মডেল। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের দুর্গ ভাঙতে বিএনপি মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছে। তারা তাদের ভোট ব্যাংক ও আওয়ামী লীগ বিরোধী ভোটারদের ভোট নিয়ে হিসাব-নিকাশ কষতে শুরু করেছেন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনের পাশাপাশি কৌশলে তারা নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। স্থানীয়রা জানান, মধুপুর ও ধনবাড়ী উপজেলার সব পর্যায়ের কমিটি গঠন করে সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করেছে বিএনপি। সংগঠনটি নিজস্ব ভোটব্যাংকের সঙ্গে আওয়ামী লীগ বিরোধী মানুষের ভোট যুক্ত করে আসন পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন নিয়ে কাজ করছে।

বিএনপি থেকে এবারও মনোয়নন পেতে পারেন গত দুই নির্বাচনে মনোনীত প্রার্থী বিএনপির কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্য ফকির মাহবুব আনাম স্বপন। তবে নির্বাচনের মাঠে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় আছেন বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা। তারা হলেন, ডাকসুর সাবেক সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার আনোয়ারুল হক, বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আলী, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের সহ-সভাপতি আনোয়ারা খন্দকার লিলি।

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ফকির মাহবুব আনাম স্বপন জানান, দলের হাই কমান্ডের নির্দেশনা মেনে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। মানুষ অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারলে এ আসনে বিএনপি প্রার্থী অবশ্যই জয়ী হবে।

এ ছাড়া জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন মধুপুর উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি সার্জেন্ট (অব.) মোহাম্মদ আলী। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মধুপুর উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি মাওলানা জহিরুল ইসলাম দলের মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।

সর্বশেষ খবর