শিরোনাম
রবিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

সবজির বাজারে নেই স্বস্তি

রাশেদ হোসাইন

সবজির বাজারে নেই স্বস্তি

গত বছরে একই সময়ে ১০০ টাকা দিয়ে দুই থেকে তিন আইটেমের সবজি ক্রয় করা যেত। বছরের ব্যবধানে এখন এক আইটেম ক্রয় করাই কঠিন হয়ে পড়ছে। সবজির বাজার গরিবের হাতের নাগালে আর নেই। গ্রামের ফ্রি কচুরমুখিও এখন রাজধানীতে ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। সংক্ষুব্ধ এক ক্রেতা বলেন, প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে কিন্তু বাড়ছে না বেতন।

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ আসছে না বাজার। খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, সরকার তিন পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিলেও ক্রেতারা এর সুফল পায়নি। কারণ বেশি দামে কিনে বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি করা যায় না। ক্রেতাদের অভিযোগ, দাম নির্ধারণের পর দফায় দফায় দাম আরও বাড়িয়েছে বিক্রেতারা। এদিকে বাজারে সিন্ডিকেটসহ যে কোনো অপতৎপরতা বন্ধে পুলিশ তৎপর রয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার। এক মাস আগে (১৪ সেপ্টেম্বর) সরকার আলু, দেশি পিঁয়াজ ও ডিম এই তিন পণ্যের দাম বেঁধে দিয়েছিল। সরকারের বেঁধে দেওয়া মূল্য অনুযায়ী প্রতি কেজি পিঁয়াজ ৬৫, আলু ৩৬ এবং প্রতি পিস ডিম ১২ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। তবে ওই ঘোষণার পর এক দিনের জন্য নির্ধারিত দামে এসব পণ্য কিনতে পারেননি ক্রেতারা। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের অভিযানসহ সরকারের নানামুখী তৎপরতার পরও এই এক মাসে আলুর দাম যেখানে ছিল, সেখানেই আছে। উল্টো বেড়েছে ডিম ও পিঁয়াজের দাম। সরকার শুধু দেশি পিঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে দিলেও এ সময়ের  মধ্যে দেশি পিঁয়াজের সঙ্গে আমদানি করা পিঁয়াজের দামও বেড়েছে। এদিকে বাজারে ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারায় তিন ধাপে মোট ১৫ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। তারপরেও সুফল পায়নি ক্রেতারা। প্রথম দিকে দাম কিছটা কমলেও এখন আগের থেকে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বিক্রেতারা। প্রতি ডজন ডিম ১৬০ টাকার নিচে মিলছে না। দাম না কমলে আলুও আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার।

এসব পণ্যের সঙ্গে কিছুতেই লাগাম টানা যাচ্ছে না অন্যান্য সবজির দামের। রামপুরা, মালিবাগ, রায়েরবাগ বাজারে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পিঁয়াজ ১০০ টাকা। কাঁচামরিচ পাইকারি বাজারে ১৬০ টাকায় বিক্রি হলেও অন্যান্য বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকার ওপরে। মালিবাগ বাজার ঘুরে দেখা যায়, ফুলকপি-বাঁধাকপি ৬০ টাকা, শালগম ৮০ টাকা কেজি, গাজর ১২০ টাকা, শিম ২০০, বেগুন ৯০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা ও শসা ৭০ টাকা এবং পেঁপে কেজি প্রতি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। করলা ৮০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৬০ থেকে ১০০ টাকা, গোল বেগুন প্রতি কেজি ১২০ টাকা, কচুরছড়া ১০০ টাকা কেজি, কাকরোল ৮০ টাকা কেজি, পটোল ৭০ টাকা কেজি, লতি ৮০ টাকা কেজি, ঢেঁড়স ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মাছের বাজারেও আগের মতোই চড়া দাম অব্যাহত আছে। কোনো ধরনের মাছ ২০০ টাকার নিচে মিলছে না। এমনকি গরিবের পাঙ্গাশ মাছও ২০০ টাকার নিচে না। এদিকে নিষেধাজ্ঞার কারণে বাজারে ইলিশ মাছ বিক্রি বন্ধ রয়েছে। বাজারে মাঝারি আকারের রুইয়ের কেজি বিক্রি হয়েছে ৪৫০ টাকা, বড় কাতল ৫০০, বড় পাঙ্গাশ আড়াই শ, চাষের কই (ছোট) ৩৭০, তেলাপিয়া ৩০০ ও শিং মাছ ৬০০ টাকা, শোল মাছ ৮০০, পাবদা ৬০০ থেকে ৭০০, ট্যাংরা মাছের কেজি আকার ভেদে ৮০০ থেকে ১ হাজার, মলা মাছ ৬০০, বাইলা ১ হাজার, পোয়া মাছ ৪০০, মাঝারি আকারে বোয়াল ৭০০ থেকে ৮০০, গুঁড়ামাছ ৪০০, ছোট চিংড়ি ৫০০, গলদা ৭০০ এবং বাগদা ৮০০ থেকে ৯০০ ও রূপচাঁদা ১ হাজার টাকা দরে।

অন্যদিকে প্রায় ২ মাস ধরে স্থিতিশীল থাকা মুরগির বাজার গত সপ্তাহ ধরে কিছুটা বাড়তির দিকে রয়েছে। এদিকে সোনালি মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৩৩০, ব্রয়লার বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ২১০ দরে এবং লেয়ার বিক্রি হয়েছে ৩৫০ টাকা দরে। তবে কিছুটা কমে গরুর মাংস প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৭৫০ টাকায়।

মালিবাগ বাজারের ক্রেতা আকতারুজ্জামান বলেন, আমরা মধ্যবিত্তরা বিপদে আছি, দিন দিন সবজিসহ সব নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছেই। আগে আমি মুলা খেতাম না, সেই মুলা এখন ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আমাদের গ্রামের বাড়িতে কচুরমুখি এমনিতে পাওয়া যায়, সেই কচুরমুখি রাজধানীতে ১০০ টাকা কেজিতে কিনতে হচ্ছে। সবজির বাজার গরিবের হাতের নাগালে আর নেই। প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে কিন্তু আমাদের বেতন বাড়ছে না।

সর্বশেষ খবর