শিরোনাম
সোমবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

জুম তোলার ধুম

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

জুম তোলার ধুম

রাঙামাটির সবুজ পাহাড়জুড়ে সোনালি হাসি হাসছে ঐতিহ্যের ফসল জুম। পাহাড়ের ঢালজুড়ে জুমের সঙ্গে ঝুলছে হরেক রকম মিশ্র ফসলও। সবমিলে মুগ্ধ কিষান-কিষানিরা। এরই মধ্যে জুম তোলার ধুম পড়ে গেছে। ঐতিহ্য অনুযায়ী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা এজন্য সাংস্কৃতিক কর্মযজ্ঞেও নেমেছেন।  তাদের মতে, গান গেয়ে ধান তোলা তাদের সংস্কৃতির অংশ। তাই এখন পাহাড়ের মাচাং ঘরে চলছে জুমের গানের আসর। ‘হিল্লো মিলেবো জুমত যায় দে, জুমত যায় দে, যাদে যাদে পধত্তুন পিছ্যা ফিরি রিনি চায়, শস্য ফুলুন  দেঘিনে বুক্কো তার জুড়ায়।’ জুমের পাকা ধানের সোনালি ফসল তুলতে গিয়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরাও এই গান গেয়ে থাকে। সবাই এখন গানের সুরে সুরে মাতিয়ে তুলেছেন পাহাড়।

কৃষি বিভাগ বলছে, পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবিকার প্রধান আয়ের উৎস জুম চাষ। বাংলাদেশের মধ্যে শুধু তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ পাহাড়ি ঢালে বিশেষ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে পারদর্শী। জুম চাষি

সোনামনি চাকমা বলেন, জুমিয়াদের চোখে-  মুখে এখন আনন্দের উচ্ছ্বাস। সবেমাত্র শুরু হয়েছে জুম কাটার উৎসব। সবাই উৎফুল্ল মনে জুমের পাকা ধান সংগ্রহ করছে। এবার জুম পাহাড়ে ধান ছাড়াও উৎপাদন হয়েছে- মরিচ, হলুদ, আদা, মারফা, বেগুন, ধানি মরিচ, ঢেঁড়শ, কাকরোল, কুমড়াসহ নানা জাতের মিশ্র ফসল। রাঙামাটি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার বিশ্বাস বলেন, বছর শেষে অর্থাৎ পৌষ-মাঘ মাসে পাহাড়ের ঢালে গাছ-পালা-বন-জঙ্গল কেটে আগুনে পুড়িয়ে পরিষ্কার করার পর জুম চাষে উপযোগী করে তোলা হয় স্থানটি। এরপর বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে পোড়া জুমের মাটিতে গর্ত খুঁড়ে একসঙ্গে বিভিন্ন রকম বীজ বপন করে থাকেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর চাষিরা। ধান পাকে ভাদ্র-আশ্বিন মাসে। সব শেষে কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে তোলা হয় তুলা, তিল ও যব। তবে একটি স্থানে একবারই জুম চাষ করা হয়। পরে বছরে চাষ করার জন্য নতুন পাহাড় খুঁজে নেন জুম চাষিরা। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষিদের মাঠ পর্যায়ে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হয়, যাতে তারা ফলন ভালো পান। রাঙামাটি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, কৃষি বিভাগের অধীনে চলতি বছর শুধু জেলায় জুম চাষ হয়েছে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে, উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। আশা করি এ বছর খাদ্য সংকট হবে না জুম চাষিদের।

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর