সোমবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় সার কারখানা ঘোড়াশালে

♦ এ মাসেই উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী ♦ কর্মসংস্থান হবে ৩০ হাজার মানুষের ♦ বছরে উৎপাদন ৯ লাখ ২৪ হাজার টন ইউরিয়া ♦ আমদানি বাবদ সাশ্রয় হবে ৭৬০০ কোটি টাকা

শাহেদ আলী ইরশাদ

দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানায় পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি মাসের শেষের দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই সার কারখানা উদ্বোধন করবেন। সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্প চালু হলে বছরে ৯ লাখ ২৪ হাজার টন ইউরিয়া সার উৎপাদন হবে। সার আমদানি বাবদ বছরে সাশ্রয় হবে ৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। দেশি-বিদেশি অর্থায়নে নির্মিত এই কারখানায় কর্মসংস্থান হবে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের। 

নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলায় ঘোড়াশাল পৌর এলাকায় ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি লিমিটেড (ইউএফএফএল) এবং পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি লিমিটেড (পিইউএফএফএল) নামে দুটি সার কারখানা ছিল। ওই দুটি কারখানা একীভূত করে ঘোড়াশাল পলাশ ফার্টিলাইজার পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি (জিপিএফপিএলসি) গঠন করা হয়। এই সার কারখানায় পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়েছে গত ১৩ অক্টোবর বিকালে। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় এই সার কারখানাটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ১০ মার্চ। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তিন মাস আগেই কারখানাটির নির্মাণের সব কাজ শেষ হয়েছে। সম্প্রতি শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনের নেতৃত্বে মন্ত্রণালয়ের একটি দল প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছেন। ওই সময় শিল্পমন্ত্রী বলেন, পরিবেশবান্ধব এই কারখানার পরীক্ষামূলক উৎপাদন আমরা উদ্বোধন করলাম। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন। এ মাসের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী যখন সময় দেবেন তখনই উদ্বোধন করা হবে।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কারখানাটিতে পুরোদমে উৎপাদন শুরু হলে প্রতিদিন পাওয়া যাবে ২ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার। আর বছরে পাওয়া যাবে ৯ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া। বার্ষিক চাহিদার প্রায় ৩৬ ভাগ সার আমদানি কম হলে সরকারের সাশ্রয় হবে বছরে ৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকার চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৬৮ লাখ ৪২ হাজার ৫০০ টন সারের চাহিদা নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে ইউরিয়া সারের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৭ লাখ টন। আধুনিক আর পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে নির্মিত কারখানাটিতে খরচ হয়েছে ১৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জাপানের মিৎসুবিশি হেবি ইন্ডাস্ট্রিজ ও চায়না প্রতিষ্ঠান সিসি সেভেন ঋণ দিয়েছে ৮ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা। বাকি অর্থ ব্যয় করেছে সরকার। এতে কর্মসংস্থান হবে দেশি এবং বিদেশি মিলিয়ে একসঙ্গে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের। এদের মধ্যে স্থায়ীভাবে নিয়োজিত রয়েছেন ৯৬৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সার কারখানাটি নির্মাণে বিশ্বের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এটিই বাংলাদেশের প্রথম সার কারখানা, যেখানে দূষিত গ্যাসগুলো আকাশে ছেড়ে না দিয়ে তা ধরে প্রজেক্ট প্রসেসের মধ্যে এনে অতিরিক্ত ১০ ভাগ ইউরিয়া সার উৎপাদন করা হবে। সম্মিলিতভাবে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করার কারণেই প্রতিদিন ২ হাজার ৮০০ টন সার উৎপাদন করা যাবে। আগে যেখানে (ফিল) ইউরিয়া অর্থাৎ ছোট ছোট দানা ব্যবহার করা হতো, এখন বড় বড় দানা ব্যবহার করা হবে। কারণ বড় দানার ইউরিয়া সার পরিবেশবান্ধব। ছোটগুলো এখন আর পৃথিবীতে নেই। এ বিষয়ে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি করপোরেশনের (বিসিআইসি) চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা সর্বাধুনিক ও পরিবেশবান্ধব। পুরোদমে উৎপাদন শুরু হলে প্রতিদিন ২ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার পাওয়া যাবে। বছরে ৯ লাখ ২৪ হাজার টন ইউরিয়া এখান থেকে উৎপাদন হবে। এতে কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে জাপানের মিৎসুবিশি ও চীনের সিসি সেভেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঘোড়াশাল পলাশ ফার্টিলাইজার পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির (জিপিএফপিএলসি) প্রকল্প পরিচালক রাজিউর রহমান মল্লিক গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ১৩ অক্টোবর বিকাল থেকে ইউরিয়া সার উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের পর পুরোদমে শুরু হবে উৎপাদন।

 

সর্বশেষ খবর