সোমবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

নিরাপদ খাদ্যের কঠিন চ্যালেঞ্জ

বিশ্ব খাদ্য দিবস আজ

ওয়াজেদ হীরা

আজ বিশ্ব খাদ্য দিবস। প্রতি বছর ১৬ অক্টোবর বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়। ১৯৪৫ সালে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা প্রতিষ্ঠার স্মরণে দিবসটি পালিত হয়। খাদ্য নিরাপত্তা ও দারিদ্র্যবিমোচনে নিয়োজিত জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যা ও আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল দিবসটি ব্যাপকভাবে উদযাপন করে।

বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও ‘বিশ্ব খাদ্য দিবস-২০২৩’ উদযাপন করছে। ‘পানিই জীবন, পানিই খাদ্য, কেউ থাকবে না পিছিয়ে’ প্রাতিপাদ্য নিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আজ নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।

বিশ্বের পরিসংখ্যান বলছে, প্রধান খাদ্যশস্য ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয়। সবজি উৎপাদনেও তৃতীয়, আম ও আলু উৎপাদনে সপ্তম, পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম স্থানে রয়েছে। এ ছাড়া মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান এখন বিশ্বে তৃতীয়। ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রথম। ছাগল উৎপাদনেও অবস্থান চতুর্থ। সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানও বলছে, স্বাধীনতা পরবর্তী বছরে খাদ্য উৎপাদন ছিল ১ কোটি ১০ লাখ টন, সেখানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট দানাদার শস্যে (চাল, গম ও ভুট্টা) উৎপাদন হয়েছে ৪ কোটি ৭৮ লাখ ৩৯ হাজার টন। এর মধ্যে শুধু চালের উৎপাদন ৪ কোটি ১ লাখ ৭৬ হাজার টন। অর্থাৎ কৃষিতে গত কয়েক বছরে উৎপাদনের এক নীরব বিপ্লব ঘটে গেছে। অনেক ফসলের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে শীর্ষ ১০ দেশের একটি। তারপরও খাদ্য কতটুকু নিরাপদ সে প্রশ্ন রয়ে গেছে। সরকারের সামনে এখন চ্যালেঞ্জ নিরাপদ খাদ্য নিয়ে। উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যন্ত কীভাবে নিরাপদ খাদ্য দেওয়া যায় সে বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ শুরু করেছে সরকার। কাজটি চ্যালেঞ্জিং হলেও সরকার নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে চায়। এ জন্য ২০১৩ সালে সরকার নিরাপদ খাদ্য আইন ও ২০১৫ সালে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গঠন করেছে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে খাদ্য কর্তৃপক্ষ বাজার থেকে সংগ্রহ করে ৪৭ ধরনের খাদ্যপণ্য পরীক্ষা করে ১৫ ধরনের খাদ্যপণ্যে বিরূপ ফলাফল পেয়েছেন। একই অর্থবছরে ১৬৫টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ১৩৬ জনকে মামলা এবং ১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। সচেতনতার জন্য স্কুলের শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইয়ে নিরাপদ খাদ্যবিষয়ক কনটেন্ট যুক্ত করার কার্যক্রম চলমান। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অনিরাপদ খাদ্য শুধু মানুষের স্বাস্থ্য নয়, বরং অর্থনীতির জন্যও ক্ষতিকর। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের হলেও উৎপাদক ও ভোক্তাদের এখানে দায়িত্ব রয়েছে বলে মনে করেন পুষ্টিবিদরা। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সদস্য (জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি) মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদ বলেন, নিরাপদ খাদ্যে যেসব দেশ একটা মানে পৌঁছেছে, সেসব দেশের অর্থনীতি এবং অন্যান্য বৃদ্ধি একটা মানে পৌঁছেছে। আমাদের দেশের অর্থনীতিসহ অন্য সব গ্রোথ লেবেল যখন একটা সম্মানজনক মানে যাবে, তখন আমরাও নিরাপদ খাদ্য পাব। কারণ জনগণকে ক্রয়ক্ষমতায় সীমিত রেখে, ফুটপাত থাকবে, ফুটপাতে খাবার থাকবে, নিম্নমানের রেস্টুরেন্ট থাকবে, কম দামের খাবারের চাহিদা থাকবে- এমন পরিস্থিতিতে ওই মানের নিরাপদ খাদ্যে যাওয়া যাবে না। সবই আইন ও তদারকি করে স¤ভব নয়। সচেতনতা দরকার, সামাজিক আন্দোলনও দরকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতি বছর প্রায় ৬০ কোটি মানুষ দূষিত খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়। যার থেকে প্রতি বছর মারা যায় ৪ লাখ ৪২ হাজার মানুষ। এ ছাড়া পাঁচ বছরের চেয়ে কম বয়সী শিশুদের ৪৩ শতাংশই খাবারজনিত রোগে আক্রান্ত হয়, যার থেকে প্রতি বছর প্রাণ হারায় ১ লাখ ২৫ হাজার শিশু। গবেষকদের তথ্যমতে, শুধু ভেজাল খাদ্য গ্রহণের কারণে দেশে প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। এ ছাড়া কিডনি ও ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গর্ভবতী মায়ের শারীরিক জটিলতাসহ গর্ভজাত বিকলাঙ্গ শিশুর সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাংলাদেশে খাদ্য সরবরাহ থাকলেও অনিরাপদ খাদ্যের ঝুঁকি প্রবল। যদিও সরকারের নানা উদ্যোগ রয়েছে। নিরাপদ সবজির জন্য ‘কৃষক বাজার’ করেছে। পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা একটি প্রকল্পও বাস্তবায়ন করছে। পূর্বাচলে আন্তর্জাতিক মানের প্যাকিং হাউস ও ল্যাব স্থাপনের কাজ চলছে। এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক মো. তাজুল ইসলাম পাটোয়ারী বলেন, খাদ্য নিরাপত্তায় আমরা সফল। এখন নিরাপদ খাদ্য নিয়ে কাজ করছি। আমাদের এসডিজির সব লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০-এর মধ্যে অর্জন করতে পারব। এর মধ্যে নিরাপদ খাদ্যও আছে। কৃষিবিদ ড. মো. মেহেদি মাসুদ বলেন, নিরাপদ খাদ্য বিষয়টি চ্যালেঞ্জিং, কারণ আবহাওয়া পরিবর্তন হচ্ছে, বিভিন্ন পোকামাকড়ও বাড়ছে। তবে আমরা এসব বিষয় নিয়ে কাজ করছি। নিরাপদ ফল নিয়ে আমি কাজ করি। আমার টিমসহ বছরব্যাপী নানা কার্যক্রম চালাচ্ছি।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর