মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে গাজীপুর কতদূর

♦ রাজধানীকে বাইপাস করে আশুলিয়া, যাত্রাবাড়ী ও গাজীপুর যাতায়াত সহজ হবে ♦ চাপ কমবে ঢাকার ওপর ♦ সহজ হবে ৩০ জেলার যোগাযোগ ♦ জিডিপি বাড়বে শূন্য দশমিক ২১ শতাংশ ♦ দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ বিশেষজ্ঞদের

হাসান ইমন

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে গাজীপুর কতদূর

নির্মাণ হচ্ছে আশুলিয়া থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত ৪৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। প্রকল্পটির উদ্দেশ্য রাজধানীকে বাইপাস করে রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়ার সড়ক পরিবহন যেন দ্রুত ও সহজে চট্টগ্রাম মহাসড়কে যাতায়ত করতে পারে। শিল্পাঞ্চল হিসেবে গড়ে ওঠায় গাজীপুর এলাকাটি যানজটপ্রবণ হয়ে উঠছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কটি চলে গেছে গাজীপুরের ওপর দিয়ে। ফলে এ রুটে চলাচলকারী ময়মনসিংহ, শেরপুর, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইলসহ আশপাশ জেলার পরিবহনও গাজীপুর ও টঙ্গীতে এসে যানজটে আটকা পড়ছে। এ যানজট এড়াতে গাজীপুর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেওয়ে সম্প্রসারণের তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

জানা যায়, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি প্রধানত দুটি অংশে ভাগ করা হয়েছে। একটি অংশ ঢাকা-আশুলিয়া। অন্যটি ঢাকা-যাত্রাবাড়ী। এরই মধ্যে ঢাকা-যাত্রাবাড়ী অংশে বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত চালু হয়েছে। বাকি অংশের কাজ চলমান রয়েছে। আশুলিয়া-যাত্রাবাড়ী এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটিতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য ছিল ঢাকার বাইরে বিশেষ করে উত্তরবঙ্গ থেকে যে গাড়িগুলো অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য নিয়ে আসে, সেগুলো যেন ঢাকাকে বাইপাস করে চট্টগ্রাম মহাসড়কে নেমে যেতে পারে। পরবর্তীতে যানজট নিরসনের জন্য ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে গাড়ি ওঠা ও নামার বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা শহরের যানজট অনেকাংশে কমে যাবে। একই সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার সহজীকরণ, আধুনিকায়ন হলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে। একই কারণে বিশেষজ্ঞরা আরও নাগরিক, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সুবিধা পেতে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের আবদুল্লাহপুর টার্নিং থেকে গাজীপুর পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে সম্প্রসারণ করার তাগিদ দিয়েছেন।

এ বিষয়ে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আদিল মোহাম্মদ খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গাজীপুর শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠায় ট্রাফিক বেড়েছে। এ চাপ সামলাতে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) করিডোর নির্মাণ হচ্ছে। গাড়ির পরিসংখ্যান বিবেচনায় গাজীপুর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা যেতে পারে। তবে আগে সম্ভাব্যতা যাছাই   করতে হবে। পরবর্তীতে বিবেচনা করে নেওয়া যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের যানজটকে প্রশমিত করার জন্য এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা প্রয়োজন। এতে গাজীপুর, ময়মনসিংহসহ আশপাশ জেলা-উপজেলার পণ্য এবং সাধারণ পরিবহনগুলো এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে দ্রুত গন্তব্যে যেতে পারবে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ২০টি ও উত্তর-পূর্ব দু-তিনটি এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পাঁচ-ছয়টি জেলার মানুষ দ্রুততার সঙ্গে ঢাকায় প্রবেশ করতে ও বের হতে পারবে। এ এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে দেশের ৩০ জেলার মানুষ দ্রুত ও সহজে রাজধানীতে প্রবেশ ও বের হতে পারবে। এর মাধ্যমে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি ০ দশমিক ২১ শতাংশ বাড়বে বলেও আশা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে অংশের সঙ্গে গাজীপুর পর্যন্ত সংযুক্ত করলে ভালো হতো। কিন্তু ঢাকা থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বিআরটি প্রকল্প থাকায় আপাতত সম্ভব হচ্ছে না। পরবর্তীতে সরকার বিবেচনা করলে নেওয়া যেতে পারে। তবে কামারপাড়ায় একটা র‌্যাম্প রাখা হয়েছে সেখান থেকে এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে চট্টগ্রাম সড়কে যাতায়ত করতে পারবে। পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সামছুল হক বলেন, ঢাকা থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বিআরটি হচ্ছে। এই বিআরটির পরে হতে পারে মেট্রোরেল (এমআরটি)। যেখানে বিআরটি ও এমআরটি হয়, সেখানে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রয়োজন হয় না। আর আবদুল্লাহপুরে বিআরটি প্রকল্পের অনেক র‌্যাম্প রয়েছে। এরই মধ্যে আবদুল্লাহপুরের অনেক জায়গা কিন্তু চলে গেছে। সেটা যদি উন্নত কোনো দেশ হতো তাহলে সেখানে পৃথক পৃথক উন্নয়ন না করে কমন পিলার নির্মাণ করত। যেন একটি পিলারে এলিভেটেড, মেট্রোরেল ও বিআরটি প্রকল্প নেওয়া যেত। এতে সামগ্রিকভাবে লাভবান হতো। এর জন্য দরকার সঠিক পরিকল্পনা। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, উড়ালসড়ক বাস্তবায়নের পর ঢাকার উত্তর-দক্ষিণে বিকল্প সড়ক সৃষ্টি হবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি আশুলিয়া-বিমানবন্দর হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দীর্ঘ ৪৪ কিলোমিটার সরাসরি সংযোগ স্থাপন করবে। এ পথ যেতে লাগবে এক ঘণ্টারও কম। উড়ালসড়ক শুধু বিমানবন্দর ও যাত্রাবাড়ী রুটের যাত্রীদেরই স্বস্তি দেবে না, একই সঙ্গে চট্টগ্রাম, সিলেটসহ পূর্বাঞ্চল ও পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যানবাহন ঢাকায় প্রবেশ না করে সরাসরি উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে প্রবেশ করতে সহায়তা করবে। উত্তরাঞ্চল থেকে আসা যানবাহনগুলো ঢাকাকে বাইপাস করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সরাসরি যাতায়াত করতে পারবে। এতে রাজধানীর ওপর চাপ অনেকটা কমে যাবে। আর ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী অংশে নিরসন হবে যানজট।

সর্বশেষ খবর