মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

স্কুলছাত্রীকে অপহরণ চেষ্টায় তুলকালাম

তিনজনকে গণপিটুনি মাইক্রোবাসে আগুন

ফরিদপুর প্রতিনিধি

ফরিদপুর শহরতলির কোমরপুর আবদুল আজিজ ইনস্টিটিউটের দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে অপহরণের চেষ্টাকালে দুই অপহরণকারীসহ তিনজনকে আটক ও গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে স্থানীয়রা।

অপহরণকাজে ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাস এ সময় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী।

আটকদের মধ্যে দুজনকে পুলিশি হেফাজতে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল সকাল পৌনে ১০টার দিকে।

প্রত্যক্ষদর্শী স্কুলশিক্ষার্থীরা জানান, সোমবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে কয়েক দুর্বৃত্ত একটি মাইক্রোবাস নিয়ে স্কুলের সামনে থেকে মাচ্চর ইউনিয়নের বাহিরদিয়া গ্রামের প্রশান্ত কুমার গোস্বামীর কন্যা দশম শ্রেণি পড়ুয়া ছাত্রীকে জোরপূর্বক তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় স্কুলের শিক্ষার্থীরা মিলে ধাওয়া করে মাইক্রোবাস থেকে দুই অপহরণকারী এবং গাড়ির ড্রাইভারকে আটক করে। অপহরণকারীদের মধ্যে প্রধান আসামি বিধান পোদ্দার পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। পরে অপর তিনজনকে বেদম গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী অপহরণকাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অপহরণকারী তিনজনকে উদ্ধার করে। এদের মধ্যে মামুন ও আলমগীরকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। গাড়ির ড্রাইভার সাদ্দামকে কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে তাকে কোতোয়ালি থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। আটক আসামিরা হলো ফরিদপুর সদর উপজেলার ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের ধুলদি জয়দেবপুর গ্রামের ইসমাইলের ছেলে মামুন (৫০) ও শহরের গোয়ালচামট এলাকার বাদশা মোল্লার ছেলে আলমগীর (৫২) এবং গাড়ির ড্রাইভার সাদ্দামের বাড়ি শহরের গোয়ালচামট মোল্ল্যা বাড়ি সড়কে। এ ঘটনার পর স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঘটনায় মূলহোতাকে দ্রুত আটকের পাশাপাশি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত বিধান পোদ্দারের স্বজনেরা জানান, মেয়েটির সঙ্গে বিধানের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মেয়েটির কথামতো স্কুলের সামনে থেকে তাকে আনতে গেলে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়। স্কুলশিক্ষার্থীর পিতা প্রশান্ত কুমার গোস্বামী জানান, তার মেয়ে স্কুলে গেলে আসামি বিধান পোদ্দারের নেতৃত্বে কয়েক যুবক মাইক্রোবাসে জোর পূর্বক তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় স্কুলের শিক্ষার্থীদের বাধার কারণে তার মেয়ে অপহরণকারীদের হাত থেকে বেঁচে যায়। এ বিষয়ে তিনি মামলা করবেন বলে জানান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার মেয়ের সঙ্গে বিধানের কোনো সম্পর্ক ছিল না। কোমরপুর আবদুল আজিজ ইনস্টিটিউট স্কুলের প্রধান শিক্ষক গোপাল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, যে বা যারা আমার স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রীকে অপহরণের চেষ্টা করেছে তাদের দ্রুত গ্রেফতার পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শান্তির দাবি জানাই। কোমরপুর আবদুল আজিজ ইনস্টিটিউট স্কুল কমিটির সভাপতি শেখ মাহতাব আলী মেথু জানান, স্কুলের প্রবেশ পথে এমন ঘটনা সত্যিই দুঃখজনক। এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে, সে ব্যাপারে স্কুল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থ্য নেওয়া হবে। এর সঙ্গে পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি। পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান জানান, স্কুলছাত্রীকে অপহরণের চেষ্টাকালে দুই অপহরণকারীকে আটক করে গণধোলাই দেওয়া হয়।

এরপর পুলিশ খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুজনকে আটক করে। ঘটনার মূল আসামিকে আটকের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

সর্বশেষ খবর