মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ঝুলে গেছে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পদোন্নতি

মাহবুব মমতাজী

প্রশাসনিক নানা জটিলতায় পুলিশের গ্রেড-১ থেকে শুরু করে পুলিশ সুপার পর্যন্ত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ঝুলে গেছে। নির্বাচনের আগে এসব কর্মকর্তার পদোন্নতি অনেকটা অনিশ্চিত। এ নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।

পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ বিভাগে ৭২০ জন শীর্ষপদস্থ কর্মকর্তার ইন-সিটু প্রমোশন (একই পদে অধিষ্ঠিত এবং পদোন্নতির পরে একই দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা) প্রস্তাব দেওয়া হয়। ওই প্রস্তাবে গ্রেড-১ এর ১৭টি অতিরিক্ত আইজিপি, গ্রেড-২ এর পদ ৩৪টি, ডিআইজি ১৫৭টি, অতিরিক্ত ডিআইজি ২৬১টি এবং এসপি ২৫৩টি পদ চাওয়া হয়েছিল। পুলিশ সদর দফতর থেকে এমন প্রস্তাব পাওয়ার পর তা মূল্যায়নে একটি কমিটি গঠন করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রস্তাবটি কাটছাঁট করে এসপি পদ ১৫০টি, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৪০টি, ডিআইজি ৫০টি ও গ্রেড-২ এর পদ দুটি অনুমোদন দিয়ে ফের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। অতিরিক্ত আইজিপির গ্রেড-১ এর ১৭টি পদের বিপরীতে একটিরও অনুমোদন পায়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, বিসিএস (পুলিশ) ২৭, ২৮ ও ২৯ ব্যাচের অতিরিক্ত এসপি পদের কর্মকর্তাদের ১৫০ জনকে সুপারনিউমারি এসপি পদে পদোন্নতি দিতে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গত মাসের প্রথম সপ্তাহে তা অনুমোদন দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরপর আর্থিক বরাদ্দ পেতে সেই ফাইল অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে সেখানে গিয়ে আটকে যায়। অর্থ মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুপারনিউমারি এসপি এবং অতিরিক্ত ডিআইজি পদের পদোন্নতি ফাইল ছাড়তে তারা প্রস্তুত। কিন্তু এই পদ ছাড়াও সুপারনিউমারি ডিআইজি এবং অতিরিক্ত আইজি পদের পৃথক পদোন্নতির প্রস্তাবনা পাঠায় পুলিশ সদর দফতর। এই দুই পদের প্রস্তাবনা কাটছাঁট করে তা কমিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কিন্তু পদ বাড়িয়ে তা পুনর্বিবেচনার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই দুই পদের ফাইলের সঙ্গে এসপি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদের ফাইল অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ছাড়তে অনুরোধ করেছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। যে কারণে সুপারনিউমারি এসপি এবং অতিরিক্ত ডিআইজি পদের পদোন্নতির ফাইলটি আটকে আছে।

এ বিষয়ে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা জেলার এসপি আসাদুজ্জামান এ প্রতিবেদককে বলেন, এই পদোন্নতি কার্যক্রম আটকে থাকায় পুলিশের অনেক কর্মকর্তার মধ্যে এক ধরনের হতাশা কাজ করছে। আমরা আমাদের প্রস্তাবনায় যা চেয়েছি, আর যা দেওয়া হয়েছে তা বাস্তবতার নিরিখে খুবই অপ্রতুল। ডিআইজি এবং অতিরিক্ত আইজি পদে প্রস্তাবনায় যা চাওয়া হয়েছে তা দেওয়া হয়নি। আর অতিরিক্ত আইজিপি গ্রেড-১ পদে একটিও দেওয়া হয়নি। আমাদের এই দুই পদের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আবারও ফাইল পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেটি সেখানেই এখনো আটকে আছে। আর অর্থ মন্ত্রণালয়ে দুটি পদের পদোন্নতির ফাইল আটকে আছে। এটি যতই বিলম্ব হচ্ছে ততই হতাশা বাড়ছে।

 সূত্র জনায়, পুলিশ সদর দফতরের প্রস্তাব অনুযায়ী ১৫তম বিসিএস ব্যাচ থেকে ১৭ জন অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শককে (গ্রেড-২) অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) পদে পদোন্নতি চাওয়া হয়। এটি অনুমোদিত হলে অতিরিক্ত আইজিপি পদমর্যাদার ছয়জন কর্মকর্তা পুলিশ সদর দফতরে এবং অতিরিক্ত আইজিপি পদমর্যাদার ১০ জন কর্মকর্তাকে সিআইডি, পুলিশ টেলিকম, রেলওয়ে ও হাইওয়ে পুলিশ, পিবিআই, শিল্প পুলিশ, সন্ত্রাসবিরোধী ইউনিট (এটিইউ), সারদা পুলিশ একাডেমি, পুলিশ স্টাফ কলেজ ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে নিয়োগ দেওয়া হবে। এ ছাড়া ১৭তম বিসিএস ব্যাচ থেকে ৩৪ জন ডিআইজিকে অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২), ২০, ২১ ও ২২তম ব্যাচের ১৫৭ জন অতিরিক্ত ডিআইজিকে ডিআইজি পদে, ২৪তম ব্যাচের ২৬৬ জন এসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত ডিআইজি এবং ২৮ ও ২৯তম ব্যাচ থেকে ২৪৭ জন অতিরিক্ত এসপিকে এসপি হিসেবে পদোন্নতি দিতে প্রস্তাব করা হয়। প্রস্তাবে আরও বলা হয়, পুলিশে বর্তমানে ক্যাডার কর্মকর্তার মধ্যে আইজিপির পদ একটি, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) দুটি, অতিরিক্ত আইজি (গ্রেড-২) ২০টি, ডিআইজি (গ্রেড-৩) ৮৬টি, অতিরিক্ত ডিআইজি (গ্রেড-৪) ২০০টি, এসপি (গ্রেড-৫) ৫৯৪টি, অতিরিক্ত এসপি (গ্রেড-৬) ১ হাজার দুটি ও এএসপি (গ্রেড-৯) ১ হাজার ২২২টি পদ রয়েছে। শুধু অবসর বা মৃত্যুজনিত শূন্য পদের বিপরীতে পদোন্নতি দেওয়া হলে বহু কর্মকর্তা পদোন্নতি বঞ্চিত হবেন। ২০৩০ সাল পর্যন্ত পুলিশ বাহিনীতে অবসরজনিত শূন্য পদের একটি হিসাব তুলে ধরা হয়। পুলিশের ২৮ ব্যাচের ১৮০ জনের মধ্যে মাত্র ২৫ জন এসপি হয়েছেন।

সর্বশেষ খবর