বুধবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

শেষের পথে পাতালরেলের ভূমি অধিগ্রহণ

► অতিরিক্ত ৩৯ একর জমি অধিগ্রহণ করতে চায় প্রকল্প কর্তৃপক্ষ ► ২ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব ► ১৮ একরের অনুমোদন দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

শেষের পথে পাতালরেলের ভূমি অধিগ্রহণ

রাজধানী ঢাকার বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত প্রস্তাবিত পাতালরেল (এমআরটি লাইন-১) প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম শেষের পথে। প্রকল্পটিতে প্রথম দফায় প্রায় ৯৭ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব ছিল। কর্মকর্তারা জানান, পিতলগঞ্জ ডিপো ও ডিপো এক্সেস করিডরের জন্য ৯৭ দশমিক ৯৭ একর ভূমি অধিগ্রহণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ প্রকল্পটির জন্য অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।

এমআরটি-১ প্রকল্পে নিয়োজিত কর্মকর্তারা বলছেন, পূর্ণাঙ্গ প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি)-এ প্রথম দফায় ৩৯ দশমিক ৩৩ হেক্টর বা ৯৭ দশমিক ১৪ একর ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব ছিল। শুধু ডিপো এলাকায় অতিরিক্ত করিডরের জন্য এই পুরো জমির প্রয়োজন পড়ছে। এখন বাড্ডা রিসিভিং সাবস্টেশন এবং নর্দা, নতুন বাজার ও উত্তর বাড্ডায় তিনটি পাতাল মেট্রোরেল স্টেশনের ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম চলছে। অন্যান্য স্টেশনগুলোর জন্য অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রথম দফার ডিপিপি সংশোধন করে ৯৭ একরের স্থলে ১৩৬ দশমিক ৩১ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়। ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ প্রথম পর্যায়ে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা। সংশোধিত ডিপিপিতে এ বাবদ ব্যয় বাড়িয়ে ৪ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, অতিরিক্ত প্রায় ৩৯ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রকল্পটির ব্যয় আরও ২ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এমআরটি-১ এর প্রকল্প পরিচালক আবুল কাসেম ভুঁঞা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা যে পরিমাণ ভূমি অধিগ্রহণের সংশোধিত প্রস্তাব দিয়েছিলাম, তা পুরোপুরি অনুমোদন হয়নি। ১৮ দশমিক ১৭ একর জমি অধিগ্রহণে সম্মতি দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ। ফলে  সংশোধিত ডিপিপিতে ভূমি অধিগ্রহণে অতিরিক্ত যে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছিল-তা কিছুটা কমবে।

ইউটিলিটি পুনর্¯’াপনে অনুমোদন ঢাকা উত্তর সিটির : পাতাল রেললাইন স্থাপনকালে বিভিন্ন সেবামূলক সংস্থার লাইন একটি কমন করিডরের মাধ্যমে পুনর্¯’াপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে এমআরটি লাইন-১ প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। এ জন্য ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের অনুমোদন প্রয়োজন। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন অনুমোদন দিলেও এখনো ঢাকা দক্ষিণ সিটির অনুমোদন মেলেনি। গত মাসে এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কিত এক বৈঠকে এ বিষয়টি তুলে ধরা হয়। সভার কার্যবিবরণীতে দেখা গেছে, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লি.-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং এমআরটি লাইন-১ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি এম এ এন ছিদ্দিক বিষয়টি সমন্বয় করে দ্রুত অনুমোদন নেওয়ার তাগিদ দেন। প্রকল্প পরিচালক আবুল কাসেম ভুঁঞা এ বিষয়ে জানান, তারা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। খুব শিগগিরই অনুমোদন পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২ ফেব্রুয়ারি এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পটি উদ্বোধন করেন। এমআরটি লাইন-১ এর আওতায় যে দুটি অংশ থাকবে। এর একটি বিমানবন্দর-কমলাপুর রুট ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার, যার পুরোটাই মাটির নিচ দিয়ে যাবে। এই রুটে মোট পাতাল স্টেশন থাকবে ১২টি। এ ছাড়া নতুন বাজার থেকে পিতলগঞ্জ ডিপো পর্যন্ত ১১ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার হবে উড়ালসড়ক। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিমানবন্দর-কমলাপুর রুটই হবে দেশের প্রথম পাতাল রেলপথ। মেট্রোরেলের যে অংশ মাটির নিচ দিয়ে চলবে  সেটিই পাতালরেল বা সাবওয়ে নামে পরিচিতি পাচ্ছে। সরকারের সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এই প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কার্যক্রম শেষ করার কথা রয়েছে। গত সেপ্টেম্বর শেষে প্রকল্পটির ভূমি উন্নয়ন কাজের অগ্রগতি ২৭ শতাংশ। ১২টি প্যাকেজে এই পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। এমআরটি লাইন-১ বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩৯ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা অর্থ সহায়তা দেবে জাপান। আর বাকি খরচ মেটানো হবে সরকারি তহবিল থেকে।

সর্বশেষ খবর