বিদেশমুখী হয়ে পড়েছেন সিলেটের তরুণরা। স্বপ্নের বিদেশ যাত্রায় বিভোর তারা। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইতালি, রোমানিয়া, লিথুয়ানিয়া, সাইপ্রাস, ক্রোয়েশিয়া, গ্রিস, ফ্রান্স, পর্তুগাল ও মাল্টাসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন তারা। কেউ যাচ্ছেন উচ্চশিক্ষার জন্য, আবার কেউ যাচ্ছেন কাজের ভিসায়। করোনা পরবর্তী সময়ে উন্নত দেশগুলোর ভিসানীতি কিছুটা নমনীয় হওয়ায় সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দেশ ছাড়ছেন তরুণরা। বর্তমানে সিলেটের তরুণদের স্বপ্নের দেশে পরিণত হয়েছে কানাডা। কানাডা সরকার দীর্ঘমেয়াদি ভিজিট ভিসা দেওয়ায় অনেক তরুণ পাড়ি জমাচ্ছেন সেদেশে। তরুণদের এই বিদেশগামিতার কারণে দেশে মেধা সংকটের আশঙ্কা করছেন অনেকে। আবার ভবিষ্যতে তারা রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখার সম্ভাবনার কথাও উঠে আসছে আলোচনায়।

সিলেটকে বলা হয় দ্বিতীয় লন্ডন। যুক্তরাজ্যে সিলেটি প্রবাসীদের আধিক্যের কারণেই এই তকমা। করোনা পরবর্তী সময়ে যুক্তরাজ্যে শিক্ষা ভিসা সহজ করায় গত প্রায় আড়াই বছরে সিলেট থেকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য সেদেশে যান। অনেকেই পরিবার নিয়ে যান যুক্তরাজ্যে। সম্প্রতি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা চালু হওয়ায় সিলেট থেকে বিপুল সংখ্যক তরুণ যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। এক্ষেত্রেও তারা পরিবার (স্ত্রী/স্বামী ও সন্তান) নিয়ে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার সুযোগ পান। এ ছাড়া কাজের ভিসায় ইতালি, ফ্রান্স, পর্তুগাল, রোমানিয়া, লিথুনিয়া, সাইপ্রাস, ক্রোয়েশিয়া, গ্রিস ও মাল্টাসহ বিভিন্ন দেশে যেতে ঝুঁকছেন সিলেটের তরুণরা। বিদেশ যেতে একেকজনের খরচ হচ্ছে ১৫-২০ লাখ টাকা। প্রবাসী আত্মীয়স্বজনদের সহযোগিতা ও দেশের সম্পদ বিক্রি করেও অনেকে পাড়ি জমাচ্ছেন বিভিন্ন দেশে। সম্প্রতি সিলেটে ঝড় উঠেছে কানাডার। কানাডার ভিজিট ভিসা এখন আগের তুলনায় অনেক সহজেই মিলছে বলে জানিয়েছে ভিসা প্রসেসিংকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। এ ছাড়া পাসপোর্টের মেয়াদ পর্যন্ত মিলছে ভিসা। এই সুযোগ কাজে লাগাতে সিলেটের তরুণরা এখন অনেকটা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন কানাডার ভিজিট ভিসা আবেদনে। প্রতিদিনই অনেকের ভিসা ইস্যুও হচ্ছে। সিলেট নগরীর আল-হামরা শপিং সিটিস্থ ভিসা প্রসেসিং প্রতিষ্ঠান ইমিগ্রেশন অ্যান্ড স্টুডেন্ট কনসালটেন্সি (আইএসসি)-এর প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট ফয়জুল হক রানা জানান, এখন কানাডার ভিসা ইস্যুর হার অনেক বেশি। প্রতিদিনই অনেকের ভিসা হচ্ছে। অনেকে পরিবারসহ ভিজিট ভিসা পাচ্ছেন। এর আগে কানাডার ভিজিট ভিসা ইস্যুর হার এত বেশি ছিল না।

সিলেট শিক্ষাবোর্ডের সচিব মো. কবীর আহমদ বলেন, ‘উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ যাওয়ার বিষয়টিকে নেতিবাচক হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। তবে বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা যাতে আমাদের সন্তানদের শিক্ষা থেকে দূরে সরিয়ে না দেয়, সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে।’