শুক্রবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

একই সঙ্গে যান্ত্রিক-অযান্ত্রিক যানবাহন চলায় ধীরগতি

------ ড. মো. হাদিউজ্জামান

একই সঙ্গে যান্ত্রিক-অযান্ত্রিক যানবাহন চলায় ধীরগতি

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ এবং বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান বলেছেন, আমরা সড়কে গতি তুলতে চাই। কিন্তু আমাদের সড়কের ডিজাইন ৫০ কিলোমিটার গতির। সেখানে বাস-প্রাইভেট কারের সামনে ৫ কিলোমিটার গতিতে চলছে রিকশা। গতি উঠবে কীভাবে? একই সড়কে যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক যানবাহন একসঙ্গে চললে গতি ওঠার প্রশ্নই ওঠে না। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঢাকা শহরের যানজটের পেছনে অতিরিক্ত জনসংখ্যাকে দায়ী করা হয়। এ দর্শনটা পুরোপুরি সঠিক না। একটা শহরে জনসংখ্যা বেশি হলেও প্রধান সড়ক বা ধমনি সড়ক বেশি থাকলে গতি ভালো থাকবে। ধমনি সড়কে যানবাহন চলবে বাধাহীন। আমার মতে ঢাকা শহরে একটাও ধমনি সড়ক নেই। এ ছাড়া আমাদের প্রধান সড়কগুলোর ফুটপাত দখল হয়ে গেছে। পথচারীরা বাধ্য হয়ে সড়কে নেমে আসছে। গণপরিবহনগুলো সড়কে বিশৃঙ্খলা করছে। আনফিট যানবাহন চলছে। এসব কারণে সড়কের গতি থমকে যাচ্ছে। ঢাকার চারপাশে নদী আছে, ঢাকার ভিতরে অসংখ্য খাল ছিল, এগুলো নৌপথ হিসেবে ব্যবহার করতে পারলে সড়কে চাপ কমে যেত। এ ক্ষেত্রে ইতালির ভ্যানিস ও নেদারল্যান্ডস বড় উদাহরণ। আমরা ফ্লাইওভার, এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি করে সড়ক অবকাঠামো যতটুকু বাড়াচ্ছি, তার চেয়ে বেশি যানবাহন প্রতিদিন সড়কে নামছে। যানজট কমাতে হলে সামগ্রিক পরিকল্পনা করে পুরো বছরই কাজ করতে হবে। কলকাতায় একসময় ঢাকার চেয়ে বেশি রিকশা ছিল। এখন কমে গেছে। তাদের গণপরিবহনের অনেক সংস্করণ আগে থেকেই ছিল। ওদের ট্রাম আছে। অনেক আগে থেকে মেট্রোরেল আছে, সার্কুলার রেল আছে। তবু গত ১০ বছরে তারা সিটি বাসের পেছনে অনেক বিনিয়োগ করেছে। লন্ডনের মতো সিটি বাস এখন কলকাতায় চলে। সেখানে ৫৪ থেকে ৬০ ভাগ যাত্রী এখন সিটি বাস ব্যবহার করে। ভালো মানের গণপরিবহন হলে রিকশার যাত্রীও গণপরিবহনে চড়বে। ঢাকায় নিবন্ধিত রিকশার চেয়ে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় অন্তত ১০ গুণ অনিবন্ধিত রিকশা চলছে। এগুলো তুলে দিতে হবে।

রিকশাচালকদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিনিয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি নিবন্ধিত রিকশা প্রধান সড়ক থেকে সরিয়ে পার্শ্বসড়কে নামিয়ে দিতে হবে। ট্রাফিক আইনেও সেটা বলা আছে। তবু রিকশা মূল সড়কে চলছে। যান্ত্রিক-অযান্ত্রিক যানবাহন এক রাস্তায় চললে গতি কখনো বাড়বে না। তবে রিকশা তোলার সঙ্গে সঙ্গে গণপরিবহনও বাড়াতে হবে। অন্যথায় মানুষ বিপদে পড়বে। অবকাঠামো তৈরি করে যানজট নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না। কারণ ছোট ছোট যানবাহন বাড়ছে তার চেয়ে বেশি। সড়কের ৬০-৭০ শতাংশ জায়গা দখল করে ৬ শতাংশ যাত্রী পরিবহন করছে ছোট ছোট গাড়ি। সব মেট্রোলাইন চালু হলে মাত্র ১৫ শতাংশ যাত্রী পরিবহন করবে। এখনই বাসগুলো ৪০ ভাগ যাত্রী পরিবহন করে। ভালো মানের বাস দিলে এ হার আরও বাড়বে।

সর্বশেষ খবর