রবিবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভোটের আগে আরও দুই স্তরে পদোন্নতি

এবার হবে উপসচিব পদে, প্রজ্ঞাপন যে কোনো সময় ♦ ম ১৮ ব্যাচ থেকে হবে অতিরিক্ত সচিব

ওয়াজেদ হীরা

আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ভোট। প্রশাসনে পড়েছে পদোন্নতির হিড়িক। কিছুদিন আগে সিনিয়র সহকারী সচিব ও যুগ্মসচিব হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এবার সরকার চূড়ান্ত করেছে উপসচিবদের পদোন্নতির তালিকা। পদোন্নতির সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে যে কোনো সময়ই জারি হবে প্রজ্ঞাপন। প্রায় আড়াই শ কর্মকর্তা উপসচিব পদোন্নতি পেতে যাচ্ছেন। এ ছাড়া চলতি মাসে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদোন্নতির বিষয়েও আলোচনা রয়েছে সচিবালয়ে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গতকাল ছুটির দিনেও সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি)-এর বৈঠকে চূড়ান্ত করা হয় উপসচিবদের পদোন্নতির তালিকা। এ জন্য চলতি মাসে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করেছে এসএসবি। উপসচিব হিসেবে পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের প্রথমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা করা হবে, পরে যে যেখানে দায়িত্ব পালন করছিলেন অর্থাৎ আগের পদেই পদায়ন করা হবে বলে জানা গেছে। ২৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী বেলজিয়াম সফরে যাওয়ার আগেই পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারির প্রত্যাশা করছেন উপসচিবরা।

জানা যায়, ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও প্রয়োজনীয় সংখ্যক পদ না থাকলেও প্রশাসনের তিন স্তরে অর্থাৎ উপসচিব, যুগ্মসচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। সংবিধান অনুযায়ী নভেম্বরের মাঝামাঝিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফষিল ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরপর ইসির পরামর্শ ছাড়া প্রশাসনে পদোন্নতি দেওয়া যাবে না। তাই তফসিল ঘোষণার আগেই তড়িঘড়ি করে চলছে পদোন্নতি ও পদায়নসহ অন্যান্য কার্যক্রম। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে- পদোন্নতির সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ভোটের কারণে পদোন্নতি দেওয়ার কোনো চাপ নেই। পদোন্নতির ক্ষেত্রে আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে কোনো ধরনের তাড়াহুড়ো নেই। যারা যোগ্য বা যোগ্যতা অর্জন করেছেন তাদের পদোন্নতির জন্য বিচেনায় আনা হচ্ছে, এটা রুটিনওয়ার্ক। পদোন্নতির জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে যে শক্তিশালী সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড রয়েছে, ওই বোর্ডই যাচাই-বাছাই করে পদোন্নতির জন্য তালিকা করে। এর আগে যুগ্মসচিবদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এরা আরও অনেক আগেই যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন। এবার যারা পাবেন তারাও অনেক দিন ধরেই যোগ্যতা অর্জন করেছেন। আমাদের ১৮তম ব্যাচ নিয়েও আলোচনা আছে, দেখি কতটুকু কাজ করা যায়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের নভেম্বরে ২৮তম ব্যাচের ২৫৯ জন কর্মকর্তাকে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। এবার বিসিএস ২৯ ব্যাচে আছেন ২০৯ জন। এর মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারের ১৭৭ এবং বিলুপ্ত ইকোনমিক ক্যাডার থেকে একীভূত হয়েছেন আরও ৩২ জন। ২৯ ব্যাচের সঙ্গে অন্যান্য ক্যাডার ও লেফট আউট হিসেবে পূর্বের বাদ পড়া তালিকা থেকে বিভিন্ন কর্মকর্তা মিলিয়ে উপসচিব হওয়ার জন্য সাড়ে ৫ শতাধিকের বেশি কর্মকর্তা যোগ্য রয়েছেন।

আশায় বুক বেঁধেছে ১৮ ব্যাচ : চলতি বছর ১২ মে নিয়মিত ১৭ ব্যাচ ও বঞ্চিত কর্মকর্তাসহ ১১৪ জনকে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ওই পদোন্নতির পর কর্মকর্তারা ধরেই নিয়েছিলেন, অতিরিক্ত সচিব পদে নির্বাচনের আগে আর কোনো পদোন্নতি হবে না। তবে তারা জানতে পেরেছেন, সিনিয়ররা তাদের নিয়ে ভেবেছেন। এতেই আশাবাদী হয়ে উঠেছেন ১৮ ব্যাচের কর্মকর্তারাও। তাই আশায় বুক বেঁধেছেন তারা। তাদের পদোন্নতির জন্য ইতোমধ্যে এসএসবি তথ্য সংগ্রহ করছে। জানা গেছে, অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসনের নিয়মিত ১৮ ব্যাচকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এই ব্যাচে প্রশাসনের ১০০ জন এবং ইকোনমিক ক্যাডার থেকে আছেন আরও ২৫ জন। এ ছাড়া আগের বঞ্চিত কর্মকর্তাসহ আড়াই শ কর্মকর্তাকে পদোন্নতির জন্য বিবেচনায় আনা হয়েছে। ১৮ ব্যাচের এক যুগ্মসচিব বলেন, মে মাসে প্রমোশনের পর আমরা ধরে নিয়েছিলাম নির্বাচনের কারণে বুঝি আটকে গেলাম।

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত কয়েক বছরে নির্বাচনের আগ পর্যাপ্ত পদ ছাড়া কর্মকর্তাদের ঢালাও পদোন্নতিতে জনপ্রশাসনের আদর্শ কাঠামো ভেঙে গেছে। কারণ বেশির ভাগ কর্মকর্তা পদোন্নতি পাওয়া পদে চাকরি করতে পারছেন না। বরং কোথাও কোথও এক বা দুই স্তর নিচের পদে কাজ করতে হচ্ছে। এতে ব্যক্তি লাভবান হলেও জনপ্রশাসনের লাভ হচ্ছে না।

সর্বশেষ খবর