রবিবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

আলুর দাম নিয়ন্ত্রণ করছে হিমাগার এজেন্ট

♦ মোবাইল ফোন মেসেজে প্রতিদিনের দর জানিয়ে দেওয়া হয় ♦ কৃষকদের কৃষিঋণও তুলে নেয় নিয়োগকৃত এজেন্ট ♦ এজেন্টদের স্থানীয় প্রভাবের কারণে কৃষক হিমাগারে আলু রাখতে পারে না

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

আলুর দাম নিয়ন্ত্রণ করছে হিমাগার এজেন্ট

হিমাগার এজেন্টরা সরাসরি আলুর দর নিয়ন্ত্রণ করছে। বেপারীরা এ এজেন্টদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে আলু বিক্রি করেন। হিমাগারে আলু রাখতে গেলেও এজেন্টের সহায়তা লাগে- এদের সহায়তা ছাড়া কেউ বিক্রি করতেও পারে না। আর সম্পূর্ণ দরদাম নির্ধারিত হয় মোবাইল ফোনে ও মেসেজ আদান-প্রদানের মাধ্যমে।  

সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আলু সিন্ডিকেট নিয়ে এসব তথ্য তুলে ধরেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে ৫০ টাকা কেজি দরে যে আলু বিক্রি হচ্ছে- কৃষকের কাছ থেকে সেটি ১০ থেকে ১২ টাকা কেজি দরে কিনে হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয়। গত মাসে তিন কৃষিপণ্য আলু, পিঁয়াজ এবং ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তাতে আলুর সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য প্রতি কেজি ৩৫-৩৬ টাকা বিক্রির নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে সরকারের সেই নির্দেশনা গত এক মাসেও কার্যকর হয়নি। উপরন্তু কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি আলু। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বলছে, উৎপাদন, পরিবহন, সংরক্ষণসহ সব খরচ ধরে হিমাগার পর্যন্ত প্রতি কেজি আলুর সর্বোচ্চ খরচ পড়ে ২০ থেকে ২২ টাকা, যা গত জুলাই পর্যন্ত খুচরা পর্যায়ে ৩০ টাকা কেজির নিচে বিক্রি হয়েছে। সরবরাহ ও মজুদ পর্যাপ্ত থাকার পরও আগস্ট থেকে এ কৃষিপণ্যটির দাম বাড়তে থাকে।  

প্রতিবেদনে দাম বাড়ার পেছনে বেশকিছু পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে বলা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- বরাদ্দ কৃষিঋণ প্রকৃত কৃষক পাচ্ছেন না; হিমাগার মালিকরা এজেন্টের মাধ্যমে অনৈতিকভাবে ব্যাংক থেকে সেই ঋণ তুলে নিচ্ছেন; নিজস্ব এজেন্টের মাধ্যমে দাদনপ্রথার মতো কৃষকদের স্বল্পমূল্যে আলু বিক্রি করতে বাধ্য করেন; অনেক সময় কৃষকদের অগ্রিম ঋণ দিয়ে জমি থেকেই আলু বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়; হিমাগার কর্তৃপক্ষের নিয়োগকৃত এজেন্টদের স্থানীয় প্রভাবের কারণে সাধারণ কৃষকরা চাইলেও হিমাগারে আলু রাখতে পারেন না; প্রত্যেক হিমাগারে কিছুসংখ্যক বেপারি এজেন্টদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে আলু বিক্রি করেন; এই বেপারিদের সহায়তা ছাড়া কেউ সরাসরি হিমাগার থেকে আলু কিনতে পারেন না।

উৎপাদন এলাকা পরিদর্শন করে এসে প্রতিবেদনটি তৈরি করেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি জানান, আলুর বাজার হিমাগার মালিক ও তাদের নিয়োগকৃত এজেন্টের কাছে জিম্মি। এদের কয়েকজনকে ধরে তিনি জরিমানা ও শাস্তির সুপারিশ করলেও স্থানীয় প্রশাসনের ঢিলেঢালা অবস্থানের কারণে বাজারে সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকর করা যাচ্ছে না। এ জন্য তিনি প্রতিবেদনে সীমিত আকারে আলু আমদানির সুপারিশ করেছেন। 

আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে প্রকৃত কৃষকদের সহায়তার পাশাপাশি সিন্ডিকেট প্রতিরোধে অধিদফতরের প্রতিবেদনে উল্লেখযোগ্য যেসব সুপারিশ করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে- প্রান্তিক কৃষকদের কৃষিঋণ প্রাপ্তি সহজীকরণ এবং প্রকৃত কৃষকদের হাতে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে কৃষিঋণ প্রাপ্তি নিশ্চিত করা; হিমাগারে আলু সংরক্ষণে কৃষকদের অগ্রাধিকার দেওয়া; সংরক্ষণকারীদের নাম-ঠিকানাসহ পূর্ণ তথ্য রেজিস্ট্রার বইয়ে রাখা; কৃষিপণ্য পরিবহনকালে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ; ন্যয্যমূল্যে কৃষকদের বীজ আলু, সার ও কীটনাশক সরবরাহ করা; হিমাগারের সামনে সরকার নির্ধারিত মূল্যতালিকা টানানো; কৃষিপণ্যের পাইকারি ও খুচরা বাজারে নজরদারি বৃদ্ধি করা এবং সরকার  নির্ধারিত দাম কার্যকর করতে হিমাগার, এজেন্ট, বেপারি, আড়ত, পাইকার এবং খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

সর্বশেষ খবর