সোমবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বোমা হামলায় নিশ্চিহ্ন হচ্ছে সবই

ইসরায়েলের লাগাতার আক্রমণে হতাহত বাড়ছে ধ্বংস হচ্ছে বাড়ি মসজিদসহ নানা স্থাপনা

প্রতিদিন ডেস্ক

বোমা হামলায় নিশ্চিহ্ন হচ্ছে সবই

ইসরায়েলি বিমান বহর ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজাসহ বিভিন্ন এলাকায় লাগাতার বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে গতকাল সকালে অধিকৃত পশ্চিম তীরে একটি মসজিদের ওপর বোমা বর্ষণ করে এটি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। একই সময় দক্ষিণ গাজার শহর খান ইউনিসে বোমা বর্ষণ করে ১১ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া আগের রাতে বিভিন্ন স্থানে লাগাতার বোমা বর্ষণসহ সবকটি হামলা মিলিয়ে ২৪ ঘণ্টায় আড়াই শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, আল জাজিরা, এএফপি, আনাদোলু এজেন্সি, ইরনা।

একটি খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বিমান পশ্চিম তীরের আল-আনসার মসজিদের ওপর বোমা হামলা চালালে সেটি ধ্বংস হয়ে গেছে। হামলার পর ইসরায়েল দাবি করেছে, মসজিদের নিচের অংশে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র যোদ্ধারা সংগঠিত হচ্ছিল। ইসরায়েল বলছে, মসজিদের আন্ডারগ্রাউন্ডের অংশটি ‘সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য’ ব্যবহার করে আসছিল হামাস ও ফিলিস্তিন ইসলামিক জিহাদ। সেখানে সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে তথ্য পেয়েছিল গোয়েন্দারা। আসন্ন একটি হামলার ব্যাপারে তারা সংগঠিত হচ্ছিল, সেই চেষ্টা নস্যাৎ করা হয়েছে।

হামলার পর মসজিদটির নিচের ধ্বংসাবশেষের ছবি প্রকাশ করেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। এতে একটি বাঙ্কারের প্রবেশপথ দেখা গেছে। সেখানে অস্ত্র মজুদ করার একটি ছবিও তারা দেখিয়েছে। ছবিতে দেখা যায়, মসজিদের বাইরের দেয়ালে একটিতে ফাঁকা গর্ত, তার চারপাশে ছড়িয়ে আছে ধ্বংসাবশেষ। ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস জানিয়েছে, এই বোমা হামলায় এক ফিলিস্তিনি নিহত ও তিনজন আহত হয়েছেন। খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, ১০ দিনের ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ২৬টি মসজিদ ধ্বংস হয়েছে। গাজাভিত্তিক ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েলি বিমান হামলায় আরও বেশ কিছু মসজিদ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সদর দফতর, কোরআন রেডিও  স্টেশন ও একটি গির্জা ধ্বংস হয়েছে। গাজার ওপর আগ্রাসন এবং বেসামরিক মানুষ, মসজিদ ও গির্জায় হামলার বিরুদ্ধে ইসলামিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। আরেক খবরে বলা হয়েছে, গতকাল সকালে দক্ষিণ গাজার শহর খান ইউনিসে ইসরায়েলের বিমান হামলায় অন্তত ১১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার বিমান হামলায় এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৬৫১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১৩ হাজারের  বেশি। গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার মধ্যে এরই মধ্যে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ১০ লাখ। এরপর সকালের বিমান হামলা চালিয়ে খান ইউনিসে আরও ১১ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হলো। একটি গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, অধিকৃত গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ২৪৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দক্ষিণ গাজায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫৬ জন। গাজায় হামাস পরিচালিত সরকারের দফতর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় ফিলিস্তিনিদের মৃত্যুর সারি লম্বা হয়েছে। ৪ হাজার ৪৬৫১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ১ হাজার ৭৫৬ শিশু ও ৯৬৭ নারী রয়েছেন। ১৩ হাজার ৫৬১ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, গাজার দক্ষিণের শহর রাফাহর ওপরে বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। সকালে খান ইউনিসে হামলা শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার আহ্বান জানান ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি। তিনি বলেন, ‘আমরা গাজা শহরে হামলা চালাতে থাকব এবং এর তীব্রতা বাড়াব।’ প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, এরই মধ্যে ইসরায়েলকে সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্র দুটি রণতরী, আরও কিছু জাহাজ ও ২ হাজার সেনা পাঠিয়েছে। 

ইসরায়েলি ট্যাংক ধ্বংস : লেবাননের দক্ষিণ সীমান্তে হিজবুল্লাহর ট্যাংক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে গতকাল একটি ইসরায়েলি ট্যাংক ধ্বংস এবং এর আরোহী এক ইসরায়েলি রিজার্ভ সেনা নিহত হয়েছে। লেবানন থেকে এ ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। এতে নিহত ২২ বছর বয়সী সেনার নাম স্টাফ সার্জেন্ট (আবাসিক) ওমের বলভা। বলভা ছিলেন সন্ত্রাসী ইসরায়েলি বাহিনীর আলেক্সান্দ্রোনি ব্রিগেডের ৯২০৩ ব্যাটালিয়নের কমান্ডার।

হিজবুল্লাহর হামলায় ইসরায়েলি সেনা নিহত হওয়ার পর দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়ায়োভ গ্যালান্ট হুঁশিয়ারি দিয়েছেন  যে, এই হামলার জন্য হিজবুল্লাহকে ‘চড়া মূল্য’ দিতে হবে।

গাজা হবে ইসরায়েলি সেনাদের কবরস্থান : ইসরায়েলি সেনারা অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় স্থল অভিযান চালালে ফিলিস্তিনিরা এই উপত্যকাকে দখলদার সেনাদের জন্য কবরস্থানে পরিণত করবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে লেবাননের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহ। হিজবুল্লাহর উপ-মহাসচিব শেখ নাঈম কাসেম শনিবার রাতে টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত এক বক্তব্যে বলেন, ‘আমাদের বিজয় ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই এবং দখলদারদের পরাজয় ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। ইসরায়েলিদের কোনো অপরাধই বিনা জবাবে পার পাবে না।’ হিজবুল্লাহর এই সিনিয়র কর্মকর্তা আরও বলেন, শত্রুরা আজ প্রতিরোধ অক্ষের সক্ষমতা নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে। হামাসের ৭ অক্টোবরের আল-আকসা তুফান অভিযান ছিল ‘ইসরায়েল নামক কফিনে একটি পেরেক।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এখন যুদ্ধের ঠিক মাঝখানে ঢুকে পড়েছি এবং এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আর সুযোগ  নেই। যারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে তাদের আমরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি, আগে দখলদার সেনাদের আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে, তবেই এ যুদ্ধের বিস্তার রোধ করা যাবে।’

গাজা খালি করার হুমকি : অবরুদ্ধ গাজাসহ উপত্যকার উত্তর অংশে অবস্থিত ২০টি হাসপাতাল এবং বাড়িঘর খালি করে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। অন্যথায় সবকিছু নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। তেল আবিব বলেছে তাদের নির্দেশ অমান্য করে যারা উত্তর গাজা বিশেষ করে গাজা সিটিতে থাকবে তাদের ‘সন্ত্রাসী’ বলে বিবেচনা করা হবে। খবরে বলা হয়, ইসরায়েল যেসব হাসপাতাল খালি করার নির্দেশ দিয়েছে সেগুলোতে আহত মানুষের চিকিৎসা ছাড়াও হাজার হাজার মানুষ ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ থেকে রক্ষা পেতে আশ্রয় নিয়ে আছে। তারা ইসরায়েলি নির্দেশ পালন করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

মধ্যপ্রাচ্যে ‘থাড’ পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র : ইসরায়েলকে সহায়তায় মধ্যপ্রাচ্যে আরও সমরাস্ত্র পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এবার এ অঞ্চলে ‘টার্মিনাল হাই অ্যালটিটিউড এরিয়া ডিফেন্স’ বা ‘থাড’ নামে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন। এ ছাড়া সেখানে অতিরিক্ত ‘প্যাট্রিয়ট’ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাও মোতায়েন করা হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গত শনিবার এক বিবৃতিতে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন মধ্যপ্রাচ্যে থাড ও প্যাট্রিয়ট পাঠানোর ঘোষণা দেন। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘মধ্যপ্রাচ্যে অতিরিক্ত মার্কিন সেনা মোতায়েনের জন্য প্রস্তুত রাখা আছে।’ তবে তাদের সংখ্যা কত, তা জানানো হয়নি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর