শিরোনাম
সোমবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

কঠিন ছক, তারপরও ধরা

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ৪৮ লাখ টাকা ডাকাতি, ভাগাভাগি করে কেউ দিয়েছেন বাড়ি ভাড়া কেউ কিনেছেন স্ত্রীর গহনা, কেউ খেলেছেন জুয়া আইনজীবীর জন্যও রাখা হয়েছে ভাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বহুল আলোচিত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে র‌্যাব পরিচয়ে গাড়ি থামিয়ে ৪৮ লাখ টাকা ডাকাতির ঘটনায় সাতজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাদের কাছ থেকে ডাকাতিতে ব্যবহৃত প্রাইভেট কার, র‌্যাবের জ্যাকেট, হ্যান্ডকাপ, খেলনা পিস্তল, ওয়ারলেস সেট, মোবাইল ফোন ও ডাকাতির টাকায় কেনা ২৩ ভরি স্বর্ণালংকার এবং ছিনিয়ে নেওয়া ২৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। ঢাকা ও পটুয়াখালীতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গত ১০ অক্টোবর বিকালে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাওলা অংশে এই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। গতকাল রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, এই চক্রটি ৪৮ লাখ টাকা ডাকাতির পরে সে টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়। তবে এর মধ্য থেকে তারা আইনজীবীদের জন্য আলাদা করে একটা খরচ রেখে দেয়। কোনো কারণে ধরা পড়ে গেলে সে টাকায় আইনজীবী তাদের মুক্ত করার ব্যবস্থা করবে। তিনি আরও জানান, ভাগে পাওয়া টাকা দিয়ে তাদের কেউ বাড়ি ভাড়া দিয়েছে, কেউ স্ত্রীর গহনা কিনেছে, কেউ আবার জুয়া খেলেছে। তিনি বলেন, ডাকাত দলটি দীর্ঘদিন ধরে ‘কাটআউট’ পদ্ধতিতে ডাকাতি করে আসছিল। ডাকাতি শেষে গাড়ির নম্বর প্লেট পরিবর্তন ও ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলত তারা। ডিবি প্রধান হারুন আরও বলেন, আমরা আগে বিভিন্ন ডাকাত দলের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাবেক সদস্যদের জড়িত থাকার প্রমাণ পেলেও এই দলে এমন কেউ নেই। তবে দলটিতে একজন মহুরিকে পাওয়া গেছে। সাগর নামে ওই ব্যক্তি অনার্স-মাস্টার্স পাস করে আইনজীবীর সঙ্গে কাজ করত। ওই আনজীবীর মাধ্যমে ডাকাত দলের একজনকে জামিন করানোর সময় ডাকাত দলের সঙ্গে পরিচয় হয় এবং এক সময় মহুরি পেশা ছেড়ে ডাকাত দলের ইনফরমার হয়ে কাজ শুরু করে। তার দায়িত্ব ছিল বিভিন্ন ব্যাংকে রেকি করে বড় অঙ্কের টাকা উত্তোলনকারী গ্রাহকের তথ্য সরবরাহ করা। তিনি জানান, তারা পেশাদার ডাকাত। এই চক্রের প্রত্যেক সদস্যের নামে ডিএমপিসহ দেশের ১৫ জেলায় ১০ থেকে ১৫টি করে ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি এবং মাদক মামলা রয়েছে। এর আগেও তারা গ্রেফতার হয়েছিল। জামিনে বেরিয়ে আবার ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে রয়েছে- সবুজ মিয়া ওরফে শ্যামল, সাহারুল ইসলাম ওরফে সাগর, আবু ইউসুফ, দিদার মুন্সী, ফেরদৌস ওয়াহীদ, আলামিন দুয়ারী দিপু ও দাউদ হোসেন মোল্যা। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গুলশান বিভাগ তাদের গ্রেফতার করে। জানা যায়, গত ১০ অক্টোবর বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে মাদার টেক্সটাইল নামে একটি কোম্পানির দুই কর্মকর্তা অনিমেশ চন্দ্র সাহা ও মো. শাহজাহান মিয়া আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের উত্তরা মডেল টাউন শাখার কোম্পানির অ্যাকাউন্ট থেকে ৮৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা তোলেন। সেখান থেকে ব্যাংকে বসেই তারা পাওনাদার মো. রাজনকে ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা বুঝিয়ে দেন। বাকি ৪৮ লাখ টাকা নিয়ে তারা কোম্পানির প্রাইভেট কারে বনানীর দিকে রওনা দেন। বিকাল ৪টার দিকে গাড়িটি ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে খিলক্ষেত প্রাইম ডেন্টাল কলেজ বরাবর এলে পেছন থেকে আরেকটি প্রাইভেট কার ওভারটেক করে সামনে গিয়ে তাদের গাড়ির গতিরোধ করে। এরপর কালো রঙের সেই গাড়ি থেকে র‌্যাবের জ্যাকেট পরিহিত পাঁচ থেকে ছয়জন ব্যক্তি নেমে আসেন। নিজেদের র‌্যাবের পরিচয় দিয়ে তারা গাড়িতে অবৈধ অস্ত্র আছে অভিযোগে গাড়িতে থাকা অনিমেশ ও শাহজাহানকে হাতকড়া পরায় এবং চোখ বেঁধে ফেলে। এরপর ব্যাংক থেকে তোলা টাকা, কোম্পানির একটি ব্লাংক চেক ও তিনটি মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়।

চোখ বাঁধা অবস্থায় অনিমেশ, শাহজাহান ও কোম্পানির গাড়ি চালক আবুল বাশারকে বিভিন্ন স্থানে ২৫ মিনিট ঘুরিয়ে ৩০০ ফিট এলাকার বোয়ালিয়া ব্রিজের ওখানে ফেলে দিয়ে কাঞ্চন ব্রিজের দিকে চলে যায় ডাকাতরা। এই ঘটনায় সোহেল আহম্মেদ সুলতান বাদী হয়ে খিলক্ষেত থানায় একটি মামলা করেন। মামলাটি ডিবি গুলশান বিভাগের একটি টিম তদন্ত শুরু করে। মামলার বাদীর বক্তব্য, সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় র‌্যাব পরিচয়ে অপহরণ ও ডাকাতিতে জড়িত দলটিকে শনাক্ত করা হয়।

সর্বশেষ খবর