সোমবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

মশা নিয়ন্ত্রণে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার অনন্য দৃষ্টান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রশস্ত সড়ক, পর্যাপ্ত উন্মুক্ত জায়গা, নামকরা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থাসহ নানা নাগরিক সুবিধার কারণে বসবাসের জন্য রাজধানীবাসীর অন্যতম পছন্দের জায়গা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা। তবে দুই বছর আগেও এই এলাকার বাসিন্দাদের অন্যতম অভিযোগ ছিল মশার উৎপাত নিয়ে। তবে বদলে গেছে সেই দিন। আবাসিক এলাকার মশা নিয়ন্ত্রণে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষ। বাসিন্দাদের অনেকেই এখন মশারি ছাড়া ঘুমান। ব্যবহার করতে হয় না কয়েল, ব্যাট বা স্প্রে।

বসুন্ধরা ডি-ব্লকের একটি বাসার তত্ত্বাবধায়ক নজরুল বলেন, তার ভবনের অনেকে মতিঝিল অফিস করেন, কিন্তু বাসা রেখেছেন বসুন্ধরায়। কারণ, এখানে পরিবার রেখে নিশ্চিন্তে যাওয়া যায়। বাচ্চাদের স্কুল নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। পানি ভালো। কিন্তু এখানে খুব মশার উপদ্রব ছিল। সন্ধ্যার সময় বাইরে দাঁড়ানো যেত না। অনেক দিন ধরে মশা তেমন দেখা যাচ্ছে না। কেন হঠাৎ মশা কমে গেছে সেটা বলতে পারব না। আই-ব্লকের বাসিন্দা মিসেস রঞ্জনা কাশেম বলেন, এক বছর আগেও মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ থাকতাম। ব্যাট, কয়েল, স্প্রে ও মশারি ব্যবহার করেও নিস্তার মিলত না। এখন মশা নেই বললেই চলে। এ ব্যাপারে জানতে বসুন্ধরা ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সহসভাপতি গোলাম সরোয়ারকে ফোন দিলে তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘তিন বছর ধরে ধারাবাহিক কয়েকটি উদ্যোগে আমরা মশা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছি। খাল ও জলাশয়গুলো নিয়মিত পরিষ্কার করে প্রবহমান রাখা হয়েছে। ফলে মশা সহজে ডিম পাড়তে পারছে না। খালি প্লটগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হচ্ছে। উন্নতমানের মশার ওষুধ দিয়ে সকালে মশার প্রজননস্থলে লার্ভা ধ্বংস করা হচ্ছে, বিকালে ফগার মেশিন দিয়ে উড়ন্ত মশা নিধন করছি। এতেই সৃষ্টিকর্তা সুফল দিয়েছেন। আমি এখন মশারি ছাড়াই ঘুমাই।’ এদিকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নানা কর্মসূচি গ্রহণ ও শত শত কোটি টাকা খরচ করেও মশা মারতে হিমশিম খাচ্ছে। প্রতি বছরই বাড়ানো হচ্ছে মশা মারার বাজেট। গত অর্থবছরে এ খাতে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে দুই সিটি করপোরেশন। চলতি অর্থবছরে (২০২৩-২৪) মশা নিয়ন্ত্রণে ১৬৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে সংস্থা দুটি। কিছুদিন পরপর ওষুধ বদলাচ্ছে। জলাশয় পরিষ্কারের নামে বিপুল অর্থ খরচ করা হচ্ছে। নর্দমায় গাপ্পি মাছ, জলাশয়ে হাঁস, সড়ক ও ফুটপাতে কদম গাছ রোপণ, ড্রোন প্রযুক্তি দিয়ে মশার উৎসস্থল পরিদর্শন, বাড়ি বাড়ি অভিযান চালিয়ে মশার লার্ভা পেলে বাসিন্দাদের জরিমানা করেও মশা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না নগরপিতারা। উল্টো এডিস মশার উপদ্রব বৃদ্ধিতে চলতি বছর সর্বকালের রেকর্ড ভেঙেছে ডেঙ্গু। চলতি বছরে গতকাল পর্যন্ত ঢাকা শহরে ৯৫ হাজার ৫৩০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, মারা গেছেন ৭৬৯ জন। যেখানে ঢাকার বাইরে সারা দেশে মারা গেছেন ৪৮৬ জন। সেখানে বসুন্ধরায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) স্বাস্থ্য বিভাগ।

একই শহরে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার মশা নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন মশক-বিশেষজ্ঞরা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা মশা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে এটা ভালো সংবাদ। তাদের অনুসরণ করে অন্য হাউজিং সোসাইটিগুলোও উদ্যোগী হতে পারে। বসুন্ধরা এ কার্যক্রম অব্যাহত রাখুক। আগামী ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাস কিউলেক্স মশার মৌসুম। তখনো মশা নিধনে তৎপর থাকতে হবে। চারটি ব্লক নিয়ে ১৯৮৭ সালে গড়ে ওঠে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা। বর্তমানে এলাকাটি ২০টি ব্লকে উন্নীত হয়েছে। বসবাস করছেন প্রায় ৮ লাখ মানুষ। অন্যদিকে ১৯৯০ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশন হয়। নাগরিক সেবা সহজ করতে সরকার ২০১১ সালে করপোরেশনকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ নামে দুই সিটিতে ভাগ করে। কিন্তু গত কয়েক বছরে মশা নিয়ন্ত্রণে সফলতার গল্প নেই বললেই চলে। তবে অজ্ঞাত কারণে করোনার দুই বছর কমে যায় মশার উৎপাত। ছিল না ডেঙ্গুর দাপট। বসুন্ধরা গ্রুপের প্রেস উপদেষ্টা আবু তৈয়ব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রায় তিন বছর ধরে বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষ মশা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। বসুন্ধরা চেয়ারম্যান নিজে মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করছেন। তিন বছরের তৎপরতার ফলাফল এখন পাওয়া যাচ্ছে। মশার প্রজননক্ষেত্র চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়াতে সাফল্য মিলেছে। এখানে সরকার অনুমোদিত ও পরিবেশবান্ধব ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে খালগুলোকে প্রবহমান করা হয়েছে। প্রবহমান খালে মশা ডিম পাড়ে না। খালি প্লটগুলোর মালিকদের চিঠি দিয়ে পরিষ্কার করানো হয়েছে। যারা করেনি বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষ সেগুলো পরিষ্কার করেছে।

সর্বশেষ খবর