মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

সবজির বাজারে ফের উত্তাপ বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ

রাশেদ হোসাইন

সবজির বাজারে ফের উত্তাপ বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ

কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে না নিত্যপণ্যের বাজার। আলু, পিঁয়াজ, ডিমে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামও কার্যকর হচ্ছে না। এর মধ্যে নতুন করে বেড়েছে মাছ ও মুরগিসহ সব ধরনের সবজির দাম। অভিযান আর জরিমানা করেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামবৃদ্ধি ঠেকানো যাচ্ছে না। নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়তে থাকায় অসহায় ক্রেতারা। রাজধানীর মালিবাগ বাজার, রায়েরবাগ বাজার ও বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

ব্যবসায়ীদের দাবি, বাজারে সবজির সরবরাহে টান পড়েছে। ফলে দাম বেড়েছে। অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, সবজি আমদানি করতে হয় না। তবু ব্যবসায়ীরা নানা ছুতায় দাম বাড়িয়েই যাচ্ছেন। বাজারে শীতকালীন সবজি উঠতে শুরু করেছে, তবুও আগের মতোই উত্তপ্ত সবজির বাজার। এতে বিপাকে পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষ। তবে বিক্রেতারা বলছেন, শীতকালে বাজারে সাধারণত লাউ, মিষ্টি কুমড়া, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লালশাক, পালংশাক, পটোল, ঢেঁড়সসহ বিভিন্ন ধরনের সবজিতে ভরপুর থাকে। তবে এ বছর টানা বৃষ্টির কারণে সবজি উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হয়েছে।

খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়, যা কয়েকদিন আগেও ৪৫ টাকা ছিল। বিক্রেতারা জানান, কয়েকদিন পরপর পণ্যটির দাম কেজিতে ৫ টাকা ওঠানামা করছে। রাজধানীর কাঁচাবাজারে প্রতি কেজি গোল বেগুন ১২০-১৪০ ও লম্বা বেগুন ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। করলা, কচুরমুখি, বরবটি, টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকা করে। ঢেঁড়শ, পটোল, ঝিঙা, চিচিঙ্গা ৮০-১০০ টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে। তুলনামূলক কম দামের মধ্যে প্রতি কেজি মুলা ৫০-৬০ টাকা ও পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়।

বাজারে পণ্য কিনতে আসা হারুনুর রশিদ বলেন, প্রত্যেকটি পণ্যের দাম অনেক বেশি। সবজি কিনব, কিন্তু ৮০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। মাছ-মাংসের দামেও আগুন। আলু, পিঁয়াজ ও ডিমের দাম এখনো কমেনি। বাজার তদারকি সংস্থা কী করছে তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। কয়েক মাস হলো ডিমের বাজারে চলছে অস্থিরতা। শেষ এক সপ্তাহে প্রতি হালি ডিমের দাম পাঁচ টাকা বেড়ে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বড়বাজারে কিনলে ডিমের ডজন পড়ছে ১৬০ টাকা, যা পাড়া-মহল্লার খুচরা দোকানে ১৬৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা গেছে। অর্থাৎ সাধারণ মানুষের একটি ডিম খেতে গুনতে হচ্ছে প্রায় ১৫ টাকা। অথচ সরকার প্রতি পিস ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। সরকারের বেঁধে দেওয়া আরেক পণ্য পিঁয়াজ। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি যার দাম বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত। এখন দেশি ভালোমানের পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা। আর আমদানি করা পিঁয়াজ ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। সবজির অস্বাভাবিক দর বাড়ার চিত্র উঠে এসেছে সরকারি হিসাবেও। কৃষিপণ্যের দাম নিয়ে প্রতিদিন প্রতিবেদন তৈরি করে কৃষি বিপণন অধিদফতর। সংস্থাটির খুচরা বাজারদরে দেখা গেছে, গত বছরের চেয়ে বেগুনের দাম বেড়েছে ৬৭ শতাংশ। এ ছাড়া কাঁচামরিচ ১৯২, পটোল ১১৩, আলু ৭৩, করলা ৪৩, চিচিঙ্গা ৩৬, লাউ ৫০, ঢেঁড়স ৫২ ও কাঁচা পেঁপের ৪০ শতাংশ দাম বেড়েছে। যদিও কৃষি বিপণন অধিদফতরের এ দরের সঙ্গে বাজারের দামের কিছুটা তারতম্য রয়েছে। বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮০-১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতি কেজি সোনালি জাতের মুরগি ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা দরে ক্রেতাকে কিনতে হচ্ছে। দেশি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকা। আর প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০ টাকা থেকে  ৮০০ ও খাসির মাংস ১১০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া সীমিত আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি কেনেন পাঙাশ, চাষের কই ও তেলাপিয়া জাতীয় মাছ। বাজারে এসব মাছের কেজি ২২০-২৮০ টাকা। প্রতি কেজি রুই, কাতলা, কালিবাউশ ও মৃগেল বিক্রি হচ্ছে আকারভেদে ৩৮০-৪৫০ টাকায়।

 

 

সর্বশেষ খবর