মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বেশি ঋণ আমানত রংপুর বিভাগে

শাহেদ আলী ইরশাদ

বেশি ঋণ আমানত রংপুর বিভাগে

এক সময়ের অবহেলিত রংপুর এখন কৃষি সম্ভাবনাময় অঞ্চল হিসেবে রূপ নিয়েছে, বেড়েছে আনুষ্ঠানিক ঋণ প্রবাহ। দেশের উত্তরাঞ্চলের আটটি জেলা নিয়ে গঠিত রংপুর বিভাগের মানুষ কয়েক বছর আগেও ব্যাংক ঋণ পাওয়ার জন্য মরিয়া ছিল। কিন্তু গত এক দশকে এ বিভাগের ভৌত অবকাঠামো, সড়ক, সেতুর উল্লেখযোগ্য উন্নয়নের কারণে বদলে যেতে শুরু করেছে অর্থনীতির চিত্রও। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে বিভাগ হিসেবে যাত্রা শুরুর পর ১৬ হাজার ৩১৭ বর্গকিলোমিটারের রংপুরে আমানতের চেয়ে বেশি ব্যাংক বিনিয়োগ হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত রংপুর বিভাগে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের (ঋণ ও অগ্রিম) পরিমাণ ৩৭ হাজার ৬১৫ কোটি টাকা। একই সময়ে ব্যাংক ব্যবস্থায় আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা বলেছেন, কয়েক বছর ধরে রংপুর বিভাগে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম বেড়েছে, যা আঞ্চলিক বৈষম্য কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এক বছর আগেও রংপুর থেকে আমানত ব্যাংকগুলো নিজেদের সুবিধাজনক এলাকায় বিনিয়োগ করত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক সড়ক ও সেতুর উন্নয়ন হওয়ায় মানুষের অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক কর্মকান্ড বাড়তে শুরু করেছে। পরিসংখ্যান বলছে, রংপুর এখন এমন একটি বিভাগে পরিণত হচ্ছে যেখানে অগ্রিম আমানত হার (এডিআর) সর্বোচ্চ ১ দশমিক ১৬ শতাংশ। সবচেয়ে কম সিলেটে ০ দশমিক ২৭ শতাংশ। ঢাকায় এডিআর ০ দশমিক ৯৪ শতাংশ, রাজশাহীতে ০ দশমিক ৯০ শতাংশ, খুলনায় ০ দশমিক ৮১ শতাংশ, ময়মনসিংহে ০ দশমিক ৭৬ শতাংশ, চট্টগ্রামে ০ দশমিক ৭২ শতাংশ এবং বরিশালে ০ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

রংপুরের ব্যবসায়ী নেতারা বলেছেন, গত কয়েক বছরে সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়েছে। জনগণের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের গতি বৃদ্ধির সঙ্গে ব্যাংকগুলো আরও বেশি বিনিয়োগে মনোযোগী হওয়ায় এই অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এক সময়ের অবহেলিত রংপুরবাসী তাদের অর্থনৈতিক চিত্র ঘুরে দাঁড় করাতে কাজ শুরু করেছে। তারা বলেন, একটা সময় ছিল, যখন আমরা ঋণ পাওয়ার জন্য ব্যাংকগুলোতে ঘুরেছি। আর এখন ব্যাংক কর্মকর্তারা আমাদের প্রকল্প পরিদর্শন করে ঋণ দিচ্ছেন। ব্যাংকারদের মতে, রংপুর বিভাগ দেশের সবচেয়ে কম সঞ্চয় এবং রেমিট্যান্স সংগ্রহকারী অঞ্চলগুলোর একটি। আমানত ও প্রবাসী আয়ে কম অবদান থাকা সত্ত্বেও অঞ্চলটি ঋণ বৃদ্ধি পাচ্ছে শুধুমাত্র কৃষিঋণ প্রবাহের কারণে। তারা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি বছর কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়। রংপুর বিভাগ একটি কৃষি সম্ভাবনাময় এলাকা। ব্যাংকগুলো সে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য কৃষিঋণ বিতরণে রংপুর বিভাগে বিশেষ নজর দিয়েছে। সম্ভবত এ কারণেই রংপুর অঞ্চল অগ্রিমের পরিমাণে সর্বোচ্চ। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক আগের অর্থবছরের চেয়ে ঋণের পরিমাণ ৪ হাজার ১৮৯ কোটি বাড়িয়েছে। ফলে চলতি অর্থবছরে কৃষকদের জন্য ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ দে?বে ব?লে বরাদ্দ রেখেছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। এ বরাদ্দ গত অর্থবছরের চেয়ে ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছর কৃষিঋণের লক্ষ্য ছিল ৩০ হাজার ৮১১ কোটি টাকা। রংপুর বিভাগে শিল্প বিকাশে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছেন বিশেজ্ঞরা। তারা মনে করেন, সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি এ অঞ্চলে অনেক ডিজিটাল উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। প্রচলিত বাণিজ্যের পাশাপাশি তারা বৈচিত্র্যময় অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে  যুক্ত হচ্ছেন। টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য এটি একটি শুভ লক্ষণ। তবে এর জন্য সারা দেশের মানুষের জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।

 

সর্বশেষ খবর