মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের ভাঙচুর সড়ক অবরোধ

গাজীপুর প্রতিনিধি

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বেতন বাড়ানোর দাবিতে কর্মবিরতি, বিক্ষোভ ও ভাঙচুর করেছে স্থানীয় কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা প্রায় ৫ ঘণ্টা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এসময় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ টিয়ার সেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। অপরদিকে, বিভিন্ন দাবিতে মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে আন্দোলনে নামে গাজীপুর সদরের লক্ষ্মীপুরা এলাকার স্টাইল ক্র্যাফট লিমিটেড ও ইয়াং ওয়ান্স (বিডি) লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা। বকেয়া বেতন-ভাতা, ঈদ বোনাস, অর্জিত ছুটি ও মাতৃত্বকালীন সুবিধার টাকা পরিশোধ এবং বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে গতকাল দুপুরে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ফটকের সামনে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেন। 

পুলিশ, শ্রমিক ও স্থানীয়রা জানান, কালিয়াকৈর উপজেলার তেলিরচালা এলাকার পূর্বাণী গ্রুপের করিম টেক্সটাইল কারখানার শ্রমিকরা সর্বনিম্ন মূল বেতন ১৫ হাজার টাকা করার দাবিতে গতকাল সকাল ৯টার দিকে কাজ বন্ধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে তারা কারখানা থেকে রাস্তায় বের হয়ে আসে। এ সময়ে আশপাশের লগোজ অ্যাপারেলস, হাইড্রো অক্সাইড সোয়েটার কারখানা, এপিএস অ্যাপারেলস ও বে-ফুটওয়ার কারখানার শ্রমিকরা তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বে-ফুটওয়ার কারখানায় দরজা-জানালার কাচসহ বিভিন্ন মালামাল ভাঙচুর করে। পরে শ্রমিকরা পার্শ্ববর্তী ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এতে ওই মহাসড়কের উভয় দিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে কয়েক কিলোমিটারব্যাপী দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে দুর্ভোগে পড়েন ওই পথে চলাচলকারীরা। পুলিশ অবরোধকারীদের ওপর লাঠিচার্জ করে। শ্রমিকরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে পাল্টা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এতে দুই পক্ষে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এতে পুলিশসহ অন্তত ১০-১২ জন আহত হয়। এসময় পুলিশ টিয়ার সেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। 

কালিয়াকৈরের মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির ইন্সপেক্টর শহীদুল ইসলাম বলেন, দুপুরের দিকে পুলিশ মহাসড়কের ওপর থেকে অবরোধকারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এসময় দুই পক্ষের মাঝে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।  গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মইনুল ইসলাম বলেন, শ্রমিকদের ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে পুলিশের কয়েক সদস্য আহত হন। একপর্যায়ে পুলিশ প্রায় ৩০ রাউন্ড টিয়ার সেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দুপুর ২টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আন্দোলনরত একাধিক শ্রমিক বলেন, ২০১৮ সাল থেকে হেলপারের বেতন ৮ হাজার এবং সুপারভাইজারের বেতন ১১ হাজার টাকা। এরপর আর কোনো বেতন বাড়ানো হয়নি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে আমাদের জীবন চলছে না। চাল, তরকারি, কাপড়, গ্যাসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব কিছুর মূল্য বেড়েছে। বেড়েছে বাসাভাড়াও। এ অবস্থায় আমাদের বেতন বাড়ানোর জন্য আমরা আন্দোলনে নেমেছি।  এদিকে, গাজীপুর সদর থানাধীন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান গেটের সামনে লক্ষ্মীপুরা এলাকার স্টাইল ক্র্যাফট লিমিটেড ও ইয়াং ওয়ান্স (বিডি) লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে আসছেন। তাদের গত জুলাই ও আগস্ট মাসের বকেয়া বেতন-ভাতা, ঈদুল আজহার আংশিক বোনাস, পাঁচ বছরের অর্জিত ছুটির টাকা ও পাঁচ বছর ধরে জমা রাখা নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন সুবিধার টাকাসহ বিভিন্ন ভাতাদি পাওনা রয়েছে। শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধ না করেই কারখানা দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। শ্রমিকরা তাদের পাওনাদি পরিশোধের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়ে আসছেন। কারখানা কর্তৃপক্ষ একাধিকবার আশ্বাস দিয়ে দিন তারিখ নির্ধারণ করলেও শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধ করেনি। এ নিয়ে শ্রমিকরা ইতিপূর্বে একাধিকবার বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করে। শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কারখানার মালিকপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি হলেও শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধ করা হয়নি। সর্বশেষ রবিবার শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু এদিন শ্রমিকরা দিনভর কারখানার সামনে অবস্থান করলেও পাওনাদি পরিশোধ করা হয়নি। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বিকালে কারখানার সামনে ঢাকা-গাজীপুর সড়ক দীর্ঘসময় অবরোধ করে রাখে। আন্দোলনরত শফিকুল ইসলাম ও হারুন সরকারসহ কয়েক শ্রমিক বলেন, কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধ না করেই হঠাৎ কারখানা বন্ধ রেখেছে। এতে শ্রমিকরা অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তারা প্রায় ৬৬ দিন ধরে লাগাতার আন্দোলন করে আসছেন। কোনো সমাধান হয়নি। অন্য কোথাও কাজ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এখন মরা ছাড়া আর কোনো পথ নেই। তাই শ্রমিকরা মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে আন্দোলনে নেমেছেন। গাজীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলাম জানান, এ কারখানায় তিন সহস্রাধিক শ্রমিক কাজ করেন। তারা কিছুদিন ধরেই বকেয়া বেতন-ভাতা ও ঈদবোনাস পরিশোধের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। শ্রমিক অসন্তোষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে।

 

সর্বশেষ খবর