বৃহস্পতিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

হামুনে অচল কক্সবাজার নিহত ৪

প্রতিদিন ডেস্ক

হামুনে অচল কক্সবাজার নিহত ৪

ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে অচল হয়ে পড়েছে কক্সবাজার। নেই বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক। একই সঙ্গে সড়ক-উপসড়কে গাছ উপড়ে বন্ধ রয়েছে যানবাহন চলাচল। দেয়াল ও গাছ চাপায় প্রাণ গেছে চারজনের। শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলী এলাকার আবদুল খালেক (৪০), মহেশখালীর হারাধন দে (৪৫), চকরিয়ার বদরখালীর আসকর আলী (৪৭) ও বাঁশখালীতে মমতাজ বেগম (৭০)। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য-

কক্সবাজার : মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার পরই ঘূর্ণিঝড় হামুন আঘাত হানে। এতে উপড়ে যায় গাছপালা ও ঘরবাড়ি। কক্সবাজার শহরের হলিডে মোড়, সদর হাসপাতাল সড়কেই উপড়ে পড়েছে ১৫টির বেশি গাছ। একই সঙ্গে বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছে বৈদ্যুতিক তার। ফলে বন্ধ যানবাহন চলাচল। শুধু এ সড়কই নয়; কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে উপড়ে পড়েছে বিশালাকৃতির শতবর্ষী একটি গাছ। বৈদ্যুতিক খুঁটিও উপড়ে পড়েছে সড়কে। শহরের পাশাপাশি উপজেলাগুলোরও একই অবস্থা। চরম দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ। তৈরি হয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকার দৃশ্য। জেনারেটর থেকে টাকার বিনিময়ে মোবাইল ফোন চার্জ দেওয়া হচ্ছে। বিপাকে পড়ছে নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ সাধারণ মানুষ। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জীবন। প্রকাশ হয়নি কক্সবাজারের ২০টি পত্রিকার কোনোটি। ভেঙে গেছে দোকানপাট। তবে টেকনাফ-সেন্টমার্টিনে হামুনের প্রভাব পড়েনি।

গত রাত ৮টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়নি। তবে সীমিত আকারে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক চালু হয়েছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানান, ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। জেলা শহর ছাড়াও উপজেলাগুলোয় সড়ক-উপসড়কে গাছপালা উপড়ে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে বৈদ্যুতিক খুঁটি। বিদ্যুৎ নেটওয়ার্ক না থাকায় কক্সবাজারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। কক্সবাজার অনেকটা অচল হয়ে পড়েছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কাজ চলছে। উপড়ে পড়া গাছপালা সরাতে বা বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে এখনো মাঠে নামেনি কর্তৃপক্ষ। ফলে মানুষের দুর্ভোগ চরমে। চকরিয়া : ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে চকরিয়া-পেকুয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দুই উপজেলায় ২৫ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার অন্তত ৭০০ কাঁচা ঘর ভেঙে গেছে। উপড়ে গেছে গাছপালা ও কাঁচা ঘরবাড়ি। পানির তোড়ে ব্রিজ ও কালভার্ট ভেঙে ব্যাহত হচ্ছে যোগাযোগব্যবস্থা। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ৫০-৬০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের টিনের চালা উপড়ে গেছে। দমকা হওয়ার পাশাপাশি ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বিভিন্ন ছড়াখালের দুই কূল উপচে পড়ে একাধিক সড়ক তলিয়ে গেছে। গাছ চাপা পড়ে বদরখালী ইউনিয়নের গোরস্থানপাড়ার মোস্তাক আহমদের ছেলে আসকর আলী (৫৫) নামে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। বিভিন্ন এলাকায় ঘরের ওপর গাছপালা পড়ে ৩০-৩৫ জন আহত হয়েছে। আহতরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ১০ স্থানে গাছ পড়ে সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হয়। এ সময় যানবাহনের দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। দুর্ভোগে পড়ে পর্যটকসহ সাধারণ যাত্রীরা। সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিমুল হক জানান, মানিকপুর ফাইতংছরা ব্রিজ ভেঙে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এদিকে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূর্বিতা চাকমা বলেন, উপজেলার সাত ইউনিয়নের অন্তত ২০০ কাঁচাঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে বেশির ভাগ চিংড়িঘের। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পুরো উপজেলা এখনো বিদ্যুৎবিহীন।

চট্টগ্রাম : ঘূর্ণিঝড় হানুমের তান্ডবে উপকূলীয় উপজেলা বাঁশখালী, আনোয়ারা, সন্দ্বীপ, মিরসরাই, সীতাকুন্ড ও কর্ণফুলীতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। লন্ডভন্ড হয়ে গেছে বাঁশখালীর উপকূল। গাছচাপায় বাঁশখালীর সরল ইউনিয়নের ৭০ বছর বয়সী এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এদিকে ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাব কাটিয়ে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে চট্টগ্রাম বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম। ইতোমধ্যে আবহওয়া অধিদফতরের জারি করা সতর্কসংকেত উঠিয়ে দেওয়ায় বন্দর কর্তৃপক্ষের জারি করা অ্যালার্ট-৩ প্রত্যাহার করা হয়েছে। এদিকে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ আফতাব উদ্দিন জানিয়েছেন, বুধবার সকাল ১০টার পর আর বৃষ্টি হয়নি। আবহাওয়া স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ৫৮.৬ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়।

নোয়াখালী : ঘূর্ণিঝড় হামুন-পরবর্তী পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। এদিকে নোয়াখালীর চেয়ারম্যানঘাট থেকে হাতিয়া উপজেলায় যাত্রীবাহী ট্রলারগুলো প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে চলছে। তবে উপকূলে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে। মানুষের মধ্যে কোনো আতঙ্ক নেই। হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুরাইয়া আক্তার লাকি জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে যাত্রীবাহী ট্রলার চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়নি। হাতিয়ার উত্তরাঞ্চলে ইসলামপুর ও জনতা বাজার এলাকায় বেড়িবাঁধ না থাকায় আতঙ্কে থাকে সেখানকার বাসিন্দারা। বড় ধরনের ঝড়-জলোচ্ছ্বাস হলে বাড়িঘর তলিয়ে যায়। দ্রুত তারা বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর