বৃহস্পতিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী আবুল হোসেন আর নেই

রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর শোক

নিজস্ব প্রতিবেদক ও মাদারীপুর প্রতিনিধি

সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী আবুল হোসেন আর নেই

সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী ও মাদারীপুর-৩  আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, বিশিষ্ট শিক্ষা অনুরাগী, সমাজসেবক বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আবুল হোসেন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মঙ্গলবার বিকালে ঢাকায় তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দিনগত রাত ২টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তিনি স্ত্রী খাজা নার্গিস, দুই মেয়ে সৈয়দা রুবাইয়াত হোসেন ও সৈয়দা ইফফাত হোসেনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

আওয়ামী লীগের সাবেক এই আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাদারীপুর-৩ আসন থেকে চারবার জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। মৃত্যুর খবরে তাঁর নির্বাচনী এলাকা মাদারীপুরের কালকিনি-ডাসারে শোকের ছায়া নেমে আসে।

রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ আবুল হোসেনের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া শোক প্রকাশ করেছেন রাজনীতিবিদ, মন্ত্রিসভা ও জাতীয় সংসদের সদস্যসহ সমাজের বিশিষ্টজনরা। শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন সৈয়দ আবুল হোসেন।

মরহুম সৈয়দ আবুল হোসেনের প্রথম জানাজা আজ বৃহস্পতিবার বাদ জোহর গুলশান আজাদ মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে। বিকাল তিনটায় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় জানাজা। মরহুমের লাশ কাল শুক্রবার নেওয়া হবে তাঁর শ্বশুরবাড়ি সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে। সেখানে জানাজা শেষে নেওয়া হবে জন্মস্থান মাদারীপুরের ডাসারে। ডাসারে তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।

সৈয়দ আবুল হোসেন ১৯৫১ সালে মাদারীপুরের ডাসারে জন্মগ্রহণ করেন। পেশাগত জীবনে একজন সফল ব্যবসায়ী সৈয়দ আবুল হোসেন ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাদারীপুর-৩ আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি সপ্তম, অষ্টম ও নবম সংসদ নির্বাচনেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের এলজিইআরডি প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। ২০০৯ থেকে ২০১২ পর্যন্ত যোগাযোগমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের শুরুর কাজটি তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের হাত দিয়েই হয়। কিন্তু অনাকাক্সিক্ষতভাবে ঋণদাতা গোষ্ঠী বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিতর্ক ও সমালোচনার মুখে ২০১২ সালে মন্ত্রিত্ব থেকে সরে দাঁড়ান সৈয়দ আবুল হোসেন। তবে বরাবরই তাঁর দাবি ছিল, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। একটা সময় কানাডার আদালতে প্রমাণ হয় সৈয়দ আবুল হোসেনসহ অন্যদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছিল সেগুলো অসত্য ও ভিত্তিহীন। বাংলাদেশেও দুদকের তদন্তে একই ফল আসে। অনেক টানাপড়েনের পর বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংক সরে গেলেও থেমে থাকেনি সেতু নির্মাণ প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় সিদ্ধান্তের ফলে পদ্মা সেতু নির্মিত হয় নিজস্ব অর্থায়নে। তবে সৈয়দ আবুল হোসেনের আর রাজনীতিতে ফেরা হয়নি। স্বপ্নের সেতুটি সক্ষম বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি হিসেবে এখন বাস্তব। ১১ বছর ধরে সৈয়দ আবুল হোসেন অনেকটাই দৃশ্যপটের বাইরে ছিলেন। দলের কোনো পদেও ছিলেন না এক সময়ের কর্মঠ এই মন্ত্রী। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঠিক পাশে ছিলেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। এর আগে ও পরে নিভৃতচারী এই কর্মযোগীকে তেমন একটা দেখা যায়নি।

রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন ও শিক্ষা প্রসারের পাশাপাশি দুর্যোগ-দুর্বিপাকেও সবসময় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে ছিলেন সৈয়দ আবুল হোসেন। দেশে শিক্ষা বিস্তারে যারা কাজ করেছেন সৈয়দ আবুল হোসেন তাদের মধ্যে অন্যতম। সৈয়দ আবুল হোসেন ছিলেন জনকল্যাণে নিবেদিত একজন রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক। তিনি একজন যুগশ্রেষ্ঠ শিক্ষা-উদ্যোক্তা ও বরেণ্য লেখক ছিলেন। দেশের শিক্ষার প্রসার ও মানবতার সেবায় তাঁর অবদান ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে। শিক্ষাসমৃদ্ধ আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে তিনি ছিলেন এক পথিকৃত ব্যক্তিত্ব। তাঁর মৃত্যুতে ডাসার-কালকিনি-মাদারীপুরের মানুষ তাদের একজন অভিভাবক এবং দেশ একজন বরেণ্য ব্যক্তিত্ব ও রাজনীতিবিদকে হারাল।

নিজস্ব অর্থায়নে তিনি নিজ এলাকা মাদারীপুরে ছয়টি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন। এর মধ্যে ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ। এ ছাড়াও প্রতিষ্ঠা করেছেন অনেক মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ ১৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পরে সরকারিকরণ করা হয় এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। মাদরাসা ও মসজিদ নির্মাণেও করেছেন আর্থিক সহায়তা। নগদ টাকা, জমিসহ নানা সাহায্য-সহযোগিতা করায় দানবীর হিসেবেও খ্যাতি রয়েছে তাঁর। সরকারি অনুদানের বাইরেও নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করেছেন অসংখ্য রাস্তাঘাট-ব্রিজ। ব্যবসার ব্যস্ততার মাঝেও তিনি করতেন লেখালেখি। নানা বিষয়ে লিখেছেন বেশ কিছু বই। সমাজসেবা, উন্নয়ন ও শিক্ষায় অসামান্য অবদানে সৈয়দ আবুল হোসেন শেরেবাংলা পদক, অতীশ দীপঙ্কর পদক এবং মোতাহার হোসেন পদকসহ এ পর্যন্ত ২৩টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর শোক : সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী এবং মাদারীপুর-৩ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ সৈয়দ আবুল হোসেনের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপ্রধান মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন ও তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

অন্য এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, শিক্ষানুরাগী, সমাজসেবক এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ আবুল হোসেনের মৃত্যুতে দেশ ও জাতির এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো। তিনি শিক্ষা বিস্তারে দেশে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমাদের গৌরবের পদ্মা সেতু নির্মাণে তাঁর অনন্য অবদান জাতি চিরদিন স্মরণ রাখবে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আবুল হোসেনের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, বীরপ্রতীক, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বেগম ফজিলাতুন নেছা, ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম এবং পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম।

এ ছাড়াও শোক প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা, বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামী জোটের সভাপতি হাফেজ মওলানা জিয়াউল হাসান, প্রগতিশীল ইসলামী জোটের চেয়ারম্যান এম এ আউয়াল প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর