শুক্রবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বাণিজ্য সংগঠনের সদস্যদের রিটার্ন বাধ্যতামূলক

শাহেদ আলী ইরশাদ

এখন থেকে যে কোনো ধরনের বাণিজ্য সংগঠনের সদস্য হতে বা সদস্যপদ ধরে রাখতে বাধ্যতামূলকভাবে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। আয়কর আইন ও অর্থ আইনে এসব সদস্যপদ পেতে ও তা হালনাগাদ রাখতে আয়কর রিটার্ন দাখিলের আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানা হচ্ছিল না। তাই আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) তালিকাভুক্ত সব চেম্বার অ্যাসোসিয়েশন ও তার সদস্যদের করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) গ্রহণ, আয়কর রিটার্ন দাখিল নিশ্চিত করতে বলেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

এফবিসিসিআই সভাপতিকে লেখা কেন্দ্রীয় কর জরিপ অঞ্চল ঢাকার কমিশনার কবীর উদ্দিন মোল্লা এক চিঠিতে চলতি বছরের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সারা দেশে এফবিসিসিআইয়ের সদস্য ৪৮৫টি চেম্বার এবং অ্যাসোসিয়েশনকে আয়কর রিটার্ন জমা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মগুলোর নিবন্ধকের কার্যালয়ের তথ্যমতে, দেশে সরকারি-বেসরকারি ২ লাখ ৮২ হাজার ৫৩৮টি নিবন্ধিত কোম্পানি রয়েছে। কিন্তু এনবিআরের তথ্যমতে, এসব কোম্পানির মধ্যে করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর ছাড়াই ব্যবসা করছে প্রায় ৪০ শতাংশ বা ১ লাখ ৮ হাজার ৩৬০টি কোম্পানি। ১ লাখ ৬৭ হাজার প্রাতিষ্ঠানিক করদাতা শনাক্তকরণ নম্বরধারী থাকলেও গত পাঁচ বছরে মাত্র ৩০ হাজার কোম্পানি তাদের বার্ষিক আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছে।

এফবিসিসিআইকে লেখা চিঠিতে বলা হয়েছে : আয়কর আইন-২০২৩ অনুসারে শিল্প বাণিজ্য সংগঠন, ফাউন্ডেশন, সমিতি, সমবায় সমিতি এবং যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কোম্পানি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাদের অবশ্যই করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর গ্রহণ করতে হবে এবং আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে। একইভাবে অর্থ আইন-২০২২ মোতাবেক ট্রেড বডি বা পেশাজীবী সংস্থার সদস্যপদ প্রাপ্তি বা বহাল রাখার জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণক জমার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু জাতীয় রাজস্ব বোর্ড দেশের সব চেম্বারের তথ্য সংগ্রহ করে জানতে পেরেছে অনেক চেম্বারের সদস্যদের করদাতা শনাক্তকরণ নম্বরই (টিআইএন) নেই। আবার অনেকের টিআইএন আছে কিন্তু আয়কর রিটার্ন জমা দেন না। এ অবস্থায় দেশের ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সব সদস্য এবং তালিকাভুক্ত বাণিজ্য সংগঠন, অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের টিআইএন, আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া নিশ্চিত করতে বলেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। জানা যায়, এফবিসিসিআইয়ের অধীনে মোট ৫২৩টি চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন রয়েছে। এর মধ্যে ৭৩টি বিভাগীয় চেম্বার, ২০টি যৌথ চেম্বার, ১৫টি নারী চেম্বার এবং ৪১৫টি তালিকাভুক্ত অ্যাসোসিয়েশন। এসব বাণিজ্য সংগঠনের সদস্য ২ হাজারের বেশি ব্যবসায়ী। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় কর জরিপ অঞ্চল ঢাকার কমিশনার কবীর উদ্দিন মোল্লা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা দেখেছি অনেক বাণিজ্য সংগঠনের টিআইএন নেই। অনেকের টিআইএন আছে কিন্তু তারা কোনো আয়কর রিটার্ন জমা দেননি। রিটার্ন জমা দেওয়ার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে সক্ষম করদাতার উচিত কর দেওয়া। এজন্য আমরা সবার আয়কর রিটার্ন জমা নিশ্চিত করতে এফবিসিসিআইয়ের সহায়তা চাই।’ জানা যায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৫৯৯ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে ৪ লাখ ৩৫ হাজার ৯৪৩ জন ব্যক্তিগত করদাতা এবং ৩ হাজার ১২৫ জন প্রাতিষ্ঠানিক করদাতা। মোট ৯০ লাখ ৩১ হাজার করদাতা শনাক্তকরণ নম্বরধারীর মধ্যে গত পাঁচ বছরে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছেন। সরকার ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে আয়কর শাখার লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৫৪ হাজার কোটি টাকা।

সর্বশেষ খবর