শুক্রবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

লিঙ্গ পরিবর্তন করে প্রেম ও খুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

জামালপুরের নারায়ণপুর এলাকার মো. নওশাদ। ১১ বছর আগে স্ত্রীর মৃত্যুর পর এক সন্তানকে নিয়ে আর্থিক অনটনে তার জীবন কাটছিল। দেলু হিজড়া নামে এক ব্যক্তির প্রলোভনে লিঙ্গ পরিবর্তন করে চম্পা ওরফে স্বপ্না হিজড়া বনে যান। একপর্যায়ে রাকিব হাসান শাওন নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। সম্পর্কের টানাপোড়েনে ২০২১ সালের ১ জুন রাকিবকে খুন করে স্বপ্না। ঘটনার দুই বছর পর গত ১৭ অক্টোবর গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থানা এলাকার হিজড়া পল্লী থেকে স্বপ্নাকে গ্রেফতার করে পিবিআই ঢাকা জেলা। এরপরই বেরিয়ে আসে লিঙ্গ পরিবর্তনকারী হিজড়া চক্রের চাঞ্চল্যকর তথ্য। এই ঘটনায় চক্রের আরেক সদস্য দেলু হিজড়াকেও গত ২৩ অক্টোবর জামালপুরের নারায়ণপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়।

গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত আইজি বনজ কুমার মজুমদার। তিনি বলেন, ২০২১ সালের ৭ জুন আশুলিয়া থানার এনায়েতপুর গ্রামে ফাঁকা জমিতে বস্তাবন্দি অজ্ঞাতনামা পুরুষের (৩৫) অর্ধগলিত একটি লাশ পাওয়া যায়। পরদিন আশুলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা হয়। থানা পুলিশ মামলাটি দুই মাস তদন্ত করে কোনো রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। পরে মামলাটি তদন্ত করে পিবিআই ঢাকা জেলা। তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থলের পার্শ্ববর্তী পঞ্চম তলা একটি ভবনের মালিকের কাছ থেকে জানতে পারেন লাশ উদ্ধারের পরের দিন তার বাসার নিচতলার ভাড়াটিয়া চম্পা নামে এক তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তি তার বাবার অসুস্থতার কথা বলে গ্রামের বাড়ি জামালপুরের নারায়ণপুরে চলে যান।

এরপর তদন্ত অন্যদিকে মোড় নেয়। তদন্ত কর্মকর্তা জানতে পারেন, ওই ঠিকানায় চম্পা হিজড়া নামে একজনের বাড়ি আছে যার পূর্বের নাম নওশাদ। প্রায় ২০ বছর আগে নওশাদের পিতা-মাতা মারা গেছেন এবং তিনি ঢাকায় বসবাস করেন। মাঝে মধ্যে গ্রামে যান। পিতা-মাতা না থাকা সত্ত্বেও লাশ পাওয়ার পরের দিন পিতার অসুস্থতার কথা বলে নওশাদ ওরফে চম্পা হিজড়া বাসা ত্যাগ করে গ্রামে চলে যাওয়ায় সন্দেহ হয়। পরে খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে বরগুনার বামনা থানার ভাইজোড়ার মো. রাকিব হাসান শাওন নামে খুন হওয়া মো. রাকিব হাসান শাওন-এর একটি ঠিকানা পাওয়া যায়। তার পিতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার ছেলে রাকিব ঢাকার আশুলিয়ায় এক হিজড়ার সঙ্গে বসবাস করেন। কিন্তু কোথায় থাকে সেই ঠিকানা তিনি বা পরিবারের কেউ জানেন না। রাকিব হাসান শাওনের নামে রেজিস্ট্রেশনকৃত একটি মোবাইল নম্বর চিনতে পারলেও ছেলের লাশ শনাক্ত করতে পারেননি। পরে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে ছেলের লাশের পরিচিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হন। পিবিআই প্রধান বলেন, নওশাদ ওরফে চম্পা হিজড়া তার নাম পরিবর্তন করে স্বপ্না হিজড়া নামে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থানা এলকার হিজড়া পল্লীতে আত্মগোপন করেন। গত ১৭ অক্টোবর সেখানে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। হিজড়া হওয়ার পর স্বপ্না ঢাকার আশুলিয়ার এনায়েতপুরে গিয়ে বসবাস শুরু করেন। সেখানে রাকিব হাসান শাওনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং স্বামী-স্ত্রী হিসেবে তারা একসঙ্গে ভাড়া বাসায় বসবাস করতে শুরু করেন। ২০২১ সালে ১ জুন ঘটনার দিন রাকিব চম্পার কাছে ১ হাজার টাকা চায়। টাকা না দেওয়ায় রাকিব খারাপ ব্যবহার করে। পরে রাকিব মোবাইল ফোনটি বাসায় রেখে বাইরে যায়। এ সময় রাকিবের মোবাইলে রিপা নামে তৃতীয় লিঙ্গের এক ব্যক্তি ফোন করেন। চম্পা ফোনটি রিসিভ করে জানতে পারে, রিপার সঙ্গেও রাকিবের প্রেমের সম্পর্কসহ শারীরিক সম্পর্ক রয়েছে। চম্পা রাকিবের কাছে রিপার বিষয়ে জানতে চান। এই নিয়ে তাদের মধ্যে বাকবিতন্ডা হলে চম্পা রাকিবের গলায় গামছা পেঁচিয়ে তাকে হত্যা করে।

সর্বশেষ খবর