রবিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

দ্বার খুলল বঙ্গবন্ধু টানেলের

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

দ্বার খুলল বঙ্গবন্ধু টানেলের

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন করেন। চট্টগ্রামের আনোয়ারায় সমাবেশে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান -বাংলাদেশ প্রতিদিন

খরস্রোতা কর্ণফুলী নদীর বুক চিরে নির্মিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’-এর দ্বার উন্মোচন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সকালে বঙ্গবন্ধু টানেলের পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তিনি। টানেল উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে নদীর তলদেশে টানেল যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। আজ সকাল থেকে টানেল সর্বসাধারণের জন্য উন্মুুক্ত করে দেওয়া হবে। বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন ও কর্ণফুলী উপজেলার কোরিয়ান ইপিজেড মাঠের জনসভায় যোগ দিতে বেলা পৌনে ১১টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে হেলিকপ্টার ঢাকা থেকে নেভাল একাডেমিতে পৌঁছায়। প্রধানমন্ত্রী পতেঙ্গায় টানেল উদ্বোধনস্থলে পৌঁছালে মন্ত্রিপরিষদের কয়েকজন সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। এ সময় সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক আয়োজন উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। ১১টা ৪০ মিনিটে টানেল উদ্বোধন করে মোনাজাতে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। টানেল উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদসহ আওয়ামী লীগের নেতা ও মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। টানেল উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও ৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও দুটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ ভবন, রাঙ্গুনিয়া জেলা পরিষদ ডাকবাংলো, আনোয়ারা জেলা পরিষদ ডাকবাংলো, পটিয়ায় শেখ কামাল অডিটরিয়াম কাম মাল্টিপারপাস হল, রাউজানে শেখ কামাল কমপ্লেক্স ভবন, পতেঙ্গা এয়ারপোর্ট রোডের মোড়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল এবং বিমানবন্দর থেকে বঙ্গবন্ধু টানেল পর্যন্ত ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা সড়ক’ এবং পটিয়ার শিকলবাহা খালের ওপর ৩৯০ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার ব্রিজ, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘর চট্টগ্রাম এবং নগরীর দক্ষিণ হালিশহরে ‘সিম্যান্স হোস্টেল কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ’ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন।

টানেল উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর দুপুর ১২টা ২ মিনিটে টানেলের পতেঙ্গা প্রান্তের টোল প্লাজায় গিয়ে থামে। চালকের পাশের আসনে বসা প্রধানমন্ত্রী নিজেই টোল তুলে দেন ঝুমুর আক্তারের হাতে। এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে ঝুমুরের সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বলভাবে কথা বলতে দেখা যায়। টোল পরিশোধ করার পর প্রধানমন্ত্রী সেটি আবার নিরাপত্তাকর্মীদের দেখান। টোল পরিশোধ করার পর মাত্র ৩ মিনিটে সাড়ে ৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে টানেল পাড়ি দিয়ে দক্ষিণ প্রান্তে পৌঁছান। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে টোল আদায়কারী ঝুমুর আক্তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে কাছ থেকে দেখতে পেয়েছি। টানেলের সঙ্গে আমার নিজেরও একটি স্বপ্নপূরণ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী টানেলের প্রথম টোল প্রদানকারী। তাঁর কাছ থেকে টোল নিতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।’

চীনের সাংহাইয়ের ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’র আদলে চট্টগ্রাম শহর ও আনোয়ারাকে একসূত্রে যুক্ত করতে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৫ সালের নভেম্বরে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। ২০১৬ সালে প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি টানেলের নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। প্রকল্পের ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা। বাংলাদেশের অর্থনীতির ‘গেম চেঞ্জার’ হতে চলেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। এ টানেলের মাধ্যমে দেশের শিল্পায়ন, পর্যটন, অর্থনীতিসহ অন্যান্য খাতে নতুন মাত্রা যুক্ত হচ্ছে। টানেল চালু হওয়ার ফলে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হবে শূন্য দশমিক ১৬৬ শতাংশ। এ ছাড়া ফিন্যান্সিয়াল এবং ইকোনমিক্যাল ‘বেনিফিট কস্ট রেশিও (বিসিআর)’-এর পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াবে ১ দশমিক ০৫ এবং ১ দশমিক ৫০।

সর্বশেষ খবর