রবিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

রাজধানীতে গণপরিবহন অচল

চরম ভোগান্তিতে নগরবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীতে গণপরিবহন অচল

আওয়ামী লীগ-বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে গতকাল ঢাকার সড়ক থেকে উধাও হয়েছিল গণপরিবহন। কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই সকাল থেকে রাজধানী ঢাকার সড়কে গণপরিবহন চলাচল প্রায় বন্ধ ছিল। হাতেগোনা কয়েকটি বাস চোখে পড়েছে, তার সংখ্যা দু-তিন শতাংশের বেশি নয়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন রাজধানীতে চলাচলকারী জনসাধারণ। যাত্রীদের অভিযোগ- সমাবেশকে কেন্দ্র করে গণপরিবহন সংকটে পড়েছিলেন তারা। গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মহাসমাবেশ ছিল বিএনপির। এ ছাড়া জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ ছিল। এ ছাড়া ছোট ছোট আরও ১১টি রাজনৈতিক দল বিভিন্ন জায়গায় সমাবেশে করে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সদরঘাট থেকে কোনো পথেই (রুট) বাস চলেনি। মিরপুর থেকে কিছু বাস চললেও যাত্রীর সংখ্যা ছিল অনেক বেশি। সাতমসজিদ সড়কের জিগাতলা থেকে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ঘুরে পাঁচ-ছয়টি বাস চোখে পড়েছে। যেসব বাস দেখা গেছে সেগুলোতে যাত্রীসংখ্যাও খুব বেশি ছিল না। তবে বাস, অটোরিকশা, ব্যক্তিগত যানবাহন চলতে দেখা যায়। অন্যদিকে জেলা শহরগুলো থেকে তেমন কোনো বাস সকালে ঢাকায় ঢুকতে দেখা যায়নি। ঢাকা সিটিতে চলাচলকারী কিছু বাস রাস্তায় দেখা গেছে। সেগুলোর সংখ্যা খুবই নগণ্য। আর যেসব গাড়ি সিটির ভিতরে চলছে, তার অনেক বাসে ছিল যাত্রী কম। আবার অনেক বাসে পা ফেলার জায়গা ছিল না। অসংখ্য মানুষ রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন বাসের অপেক্ষায়। জরুরি কাজে বের হওয়া অনেকেই বাড়তি ভাড়ায় রিকশা ও বাইকে চলাচল করতে বাধ্য হয়েছেন। মিরপুর ১০ নম্বরে কথা হয় বাসের অপেক্ষায় থাকা আলী আশরাফের সঙ্গে। তিনি বলেন, সদরঘাটে যাব বলে অপেক্ষা করছি। বাসের পরিমাণ খুবই কম ছিল। আধা ঘণ্টা বা তার বেশি সময় পরপর একটি করে বাস পাওয়া যাচ্ছে। এটা চরম ভোগান্তির। মোহাম্মদপুর-আবদুল্লাহপুর রুটের কিছু বাস চলছে। তবে বাসের চালকরা জানিয়েছেন, মালিক সাবধানে বাস চালাতে বলেছেন। রাস্তা দেখলাম ফাঁকা, তাই কিছুটা ভয় ছিল। সকাল ১১টা পর্যন্ত মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, কলাবাগান এলাকা ঘুরে গণপরিবহন চলাচল তুলনামূলক কম দেখা গেছে। কিছু ব্যক্তিগত গাড়ি, রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলছিল। সড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাও ছিল ঢিলেঢালা। সকালে কলাবাগান বাসস্ট্যান্ডে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায় শরিফুল ইসলামকে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) এক স্বজনকে দেখতে যাবেন। কিন্তু ২০ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো বাস পাচ্ছেন না। কলাবাগানে ভাড়ায় যাত্রী পরিবহনের জন্য মোটরসাইকেল নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন আলম সরকার। সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত তিনি একজন যাত্রীই পেয়েছেন। তিনি বের হয়েছিলেন সকাল ৯টায়। তিনি বলেন, লোকজন কম পাবেন, সেটা ধরে নিয়েই বের হয়েছিলেন।

গাবতলীতে বাস প্রবেশে বাধা থাকলেও ঢাকা থেকে ছেড়ে যেতে কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু যাত্রীশূন্য গাবতলীতে কেবল দেখা গেছে চালক ও হেলপারদের। দেখা গেছে, একজন যাত্রী এলে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ছে। যাত্রী শূন্যতার কারণে গাবতলী থেকেও বাস ছেড়ে যায়নি। এ ছাড়া ঢাকায় যেসব বাস প্রবেশ করছে, সেসব বাস কয়েকটি স্থানে তল্লাশির মুখে পড়ছে। ফলে ঢাকায় দূরপাল্লার বাস প্রবেশে নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে।

গাবতলীর কাউন্টারের কর্মীরা জানান, সকাল থেকে কাউন্টার বন্ধ রাখতে হয়েছিল। রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে যাত্রী আসেনি। ভয়ে আর আতঙ্কে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। ঢাকার ভিতরেও যানবাহন কম। যে কারণে অনেক যাত্রীর প্রয়োজন হলেও গাবতলী আসতে পারছেন না। সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জের উদ্দেশে কমফোর্ট পরিবহন ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যাত্রী না পাওয়ায় বাসটি ছেড়ে যায়নি। অধিকাংশ কাউন্টার ছিল বন্ধ।

সর্বশেষ খবর