রবিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

মাঠে ছিল জামায়াতও

নিজস্ব প্রতিবেদক

পূর্বঘোষিত কর্মসূচি পালন করতে নানা তৎপরতা চালায় জামায়াত। গতকাল সকালে শাপলা চত্বরে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে দলটির নেতা-কর্মীরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে নেতা-কর্মীদের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় করতে দেখা যায়। সকাল ৮টায় জামায়াত-শিবির সমর্থিত নেতা-কর্মীদের ভিড় জমার পর ধাওয়া ও লাঠিচার্জ করে সরিয়ে দেয় পুলিশ। সকাল পৌনে ১০টায় ঘটনাস্থল থেকে এস এম মিজানুর রহমান নামে জামায়াতে ইসলামীর এক সমর্থককে আটক করা হয়। শাপলা চত্বরে জামায়াতের মহাসমাবেশ ঠেকাতে কঠোর অবস্থান নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দেখা গেছে। বিপুলসংখ্যক র‌্যাব-পুলিশের অবস্থানের পাশাপাশি লোহার ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে রাখা হয় এ এলাকা। তবে কর্মসূচি সফল করতে মতিঝিলের আশপাশে জড়ো হতে থাকেন জামায়াতের নেতা-কর্মীরা। গতকাল সকাল ৯টায় দলটির অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী জড়ো হন শাপলা চত্বরের দক্ষিণ পাশে। এ সময় পুলিশ দলটির নেতা-কর্মীদের সরিয়ে দেয়। তারা একটু দূরে গলিতে অবস্থান নেয়। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সকাল ১০টায় আরামবাগের নটর ডেম কলেজের উত্তরদিকে জড়ো হয় কয়েক শ জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মী। তারা শাপলা চত্বরে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেন। তবে পুলিশ তাদের নটর ডেম কলেজ ফুটওভার ব্রিজের সামনে আটকে দেয়। এর আগে শুক্রবার রাত থেকেই রাজধানীর মতিঝিল শাপলা চত্বরে কঠোর অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

মতিঝিল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, টিকাটুলি মোড়, দৈনিক বাংলা মোড়, শাপলা চত্বর এলাকা, নটের ডেম কলেজের গলি, বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনের গলিসহ পুরো এলাকায় মোতায়েন করা হয় আনসার ব্যাটালিয়ন, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), র?্যাব ও পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অর্ধশতাধিক টহল গাড়ি সতর্কাবস্থায় চলাচল করতে দেখা যায়।

মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, ডিএমপির পক্ষ থেকে অনুমতি দেওয়া হয়নি বিষয়টি জানানোর পরও জামায়াত চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছে, যে কোনো মূল্যে তারা শাপলা চত্বরে সমাবেশ করবে। বেলা ১১টার দিকে জামায়াতের আট সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আরামবাগে আল হেলাল পুলিশ বক্সে বৈঠক করে পুলিশ। 

বৈঠক শেষে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা এস এম মোবারক হোসেন বলেন, পুলিশ আমাদের জায়গা পরিবর্তন করতে বলেছে, একই সঙ্গে বিশৃঙ্খলা না করতে বলেছে। আমরা কোনো বিশৃঙ্খলা করছি না। আমরা সমাবেশ করব এটা তাদের জানিয়েছি। বেলা সাড়ে ১২টায় সমাবেশের মৌখিক অনুমতি পাওয়ার খবরের পর রাজধানীর মতিঝিলের পেট্রোল পাম্পের পাশের ব্যারিকেড ভেঙে আরামবাগে প্রবেশ করে জামায়াত নেতা-কর্মীরা। মতিঝিলে ফুটবল ফেডারেশন গলি হয়ে দলে দলে সমাবেশস্থলে যোগ দেন তারা। এ সময় উত্তপ্ত পরিস্থিতি দেখা দেয় মতিঝিল এলাকাজুড়ে। সমাবেশে যোগ দেওয়া জামায়াত নেতা-কর্মীরা আরামবাগ থেকে নটর ডেম কলেজের রাস্তা পর্যন্ত অবস্থান নেয়। অন্যদিকে র?্যাব ও পুলিশ সদস্যরা মতিঝিলের কালভার্ট রোডের সামনে ব্যারিকেড দিয়ে কঠোর অবস্থানে থাকে। পরে জানা যায়, মহাসমাবেশে যোগ দেওয়ার সময় পুলিশের গুলিতে নওয়াব আলী শেখ (৬০) নামে জামায়াতের এক কর্মী গুলিবিদ্ধ হন। তাকে দুপুর ১টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। আরামবাগে মৌখিক অনুমতি পাওয়ার পর সরকারবিরোধী নানা স্লোগান আর প্রতিবাদী সংগীত পরিবেশন করতে থাকেন জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীরা। দুপুরে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙেই ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চ বানিয়ে সমাবেশ শুরু করে জামায়াত। বক্তব্য রাখেন দলের ভারপ্রাপ্ত আমির মুজিবুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।

মুজিবুর রহমান পুলিশকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, অনেক দিন পরে মুক্ত আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে সমাবেশ করতে পারছি। তার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। মানুষের ভোটাধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বে না জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা। আমাদের আন্দোলন চলবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। জীবন দিয়ে হলেও আমাদের দাবি আদায় করব।

বিকাল সোয়া ৩টায় সমাবেশ শেষ করে জামায়াত। এ সময় তারা নতুন কোনো কর্মসূচি দেয়নি। অনেকটা তড়িঘড়ি করেই মহাসমাবেশ শেষ করেন দলটির নেতারা। এরপর কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে আরামবাগ থেকে বেরিয়ে কমলাপুর হয়ে শাহজাহানপুরের দিকে মিছিল নিয়ে বের হয়ে যান দলটির নেতা-কর্মীরা।

সর্বশেষ খবর