রবিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

মুহুর্মুহু বোমাবর্ষণ গোটা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন গাজা

প্রতিদিন ডেস্ক

জঙ্গি ও বোমারু বিমানের ছত্রচ্ছায়ায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী অবরুদ্ধ গাজায় স্থল অভিযান শুরু করেছে। তারা গত শুক্রবার দিনগত গভীর রাত থেকে এ অভিযান শুরু করে। তবে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে ইসরায়েলি সেনারা তেমন একটা সাফল্য লাভ করেনি। এমতাবস্থায় তাদের জঙ্গি ও বোমারু বিমানগুলো গাজার ওপর মুহুর্মুহু বোমা বর্ষণ করে চলেছে। এতে ধ্বংস, আগুন ও ধোঁয়ায়  ঢাকা পড়ে কার্যত গাজা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ইন্টারনেট, স্যাটেলাইট, টেলিফোনসহ কোনোরকম যোগাযোগব্যবস্থা সেখানে চলছে না। সূত্র : সিএনএন, রয়টার্স, বিবিসি, আলজাজিরা, তাসনিম নিউজ, পার্সটুডে।

খবরে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় বিস্তৃত পরিসরে স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। শুক্রবার রাত থেকে বিমান হামলা বাড়ানোর পাশাপাশি স্থল হামলা জোরদার করে ইসরায়েল। এমন পরিস্থিতিতে ভেঙে পড়েছে গাজার টেলিফোন ও ইন্টারনেট যোগাযোগব্যবস্থা। ফলে অবরুদ্ধ এ ভূখন্ডটি পৃথিবী থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির পরিচালক মারওয়ান জিলানি অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লা থেকে জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ গাজায় তাদের দলের সঙ্গে সম্পূর্ণ যোগাযোগ হারিয়েছে। জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ ও আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা অ্যাকশনএইডও জানিয়েছে, তারা গাজায় কর্মরত কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়েছে। গাজার খান ইউনিস এলাকায় কর্মরত সাংবাদিক তারেক আবু আজজুম বলেন, গাজার মানবিক পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়েছে। এখানকার ২৩ লাখ মানুষ বর্তমানে পুরো পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তারা আত্মীয় বা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না। এদিকে হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসেম ব্রিগেড জানিয়েছে, তারা বেইত হানুন ও বুরেজের পূর্বে ইসরায়েলি স্থল অনুপ্রবেশকে ঠেকিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। তবে সংঘর্ষ চলছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেন, আমরা গাজায় হামলার মাত্রা বাড়িয়েছি। বিমান বাহিনী মাটির নিচের নিশানা ও সন্ত্রাসী অবকাঠামোর ওপর ব্যাপক বোমা বর্ষণ করছে।

অন্যদিকে ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস বলেছে, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ওপর ইসরায়েল তাদের সন্ত্রাসী আগ্রাসন জোরদার করে নিজেদের বিজয়ী শক্তি হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে- এই যুদ্ধে হামাস বীরত্বের মহাকাব্য রচনা করার পথে রয়েছে। সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা ওসামা হামদান এক বিবৃতিতে বলেন, ‘সন্ত্রাসী, অপরাধী নেতানিয়াহু গাজার জনপ্রিয় এই সংগঠনের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং উপত্যকার জনগণের বিরুদ্ধে তার সন্ত্রাসী আগ্রাসন জোরদার করে বিজয়ের একটি চিত্র তৈরির চেষ্টা করছেন। কিন্তু সময় ঘনিয়ে আসছে, সারা বিশ্ব গাজায় প্রতিরোধ যোদ্ধাদের লড়াইয়ের বীরত্বপূর্ণ মহাকাব্যের প্রভাব দেখতে পাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অপরাধী নেতানিয়াহু গাজাবাসীর বিরুদ্ধে তার সন্ত্রাসী অপরাধের চিত্র বহির্বিশ্বে যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, সে জন্য গাজাকে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করছে, কিন্তু ইনশাআল্লাহ তিনি তাতে সফল হবেন না।’

আরেক খবরে বলা হয়, গাজায় সাংবাদিকদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়া যাচ্ছে না। আরও ভারী বোমা বর্ষণ শুরু করেছে ইসরায়েল। বেশির ভাগ বোমা হামলা চালানো হচ্ছে বিমান থেকে।

জাতিসংঘের তরফ থেকে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় ২৪ ঘণ্টায় জাতিসংঘের অন্তত ১৪ জন কর্মী নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত তিন সপ্তাহে গাজায় জাতিসংঘের নিহত কর্মীর সংখ্যা ৫৩ জনে পৌঁছেছে। গতকাল জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সহায়তা বিষয়ক সংস্থা ইউনাইটেড নেশনস রিলিফ ওয়ার্ক এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইন রিফিউজি (আনরোয়া) এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর ২১ দিনের বোমা বর্ষণে গাজায় ঘরবাড়ি হারিয়ে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন অন্তত ১৪ লাখ ফিলিস্তিনি ও তাদের মধ্যে প্রায় ৬ লাখ ৪০ হাজার উপত্যকার ১৫০টি শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। এ শিবিরগুলো পরিচালনা করে আনরোয়া।

আরেক খবর অনুযায়ী, গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধের মধ্যেই বিশাল মহড়া শুরু করেছে ইরানি সেনারা। নিজেদের স্থল সেনার সব ইউনিটকে নিয়ে দেশটির মধ্যাঞ্চলীয় ইফফাহান প্রদেশে শুক্রবার এই বিশাল মহড়া শুরু করে দেশটি। দুই দিনব্যাপী চলবে এই মহড়া। ইরানি বার্তা সংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, শুক্রবার মহড়ার প্রধান ধাপে সেনাবাহিনীর মোবাইল অ্যাসাল্ট ব্রিগেড, সাঁজোয়া বিভাগ এবং হেলিকপ্টারের স্কোয়াড্রন আপডেট ভার্সনের শাফাক, আলমাস এবং দেহলাভিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র ৮ থেকে ২০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুকে লক্ষ্য করে আঘাত হানে। ইরানের বিমান বাহিনীর কমান্ডার ইউসুফ ঘোরবানি মহড়ার ফাঁকে জানান, মিলিটারি হেলিকপ্টার এ মহড়ায় অংশ নিয়েছে। যেগুলো জ্যামিং সিস্টেম, নাইট ভিশন ক্যাপাবিলিটিস, দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এবং নির্ভুল আঘাত হানার অস্ত্রে সজ্জিত ছিল। এর মাধ্যমে পশ্চিম এশিয়ায় আর্মির আকাশ শক্তিকে ‘অবিসংবাদিত হেলিকপ্টার শক্তিতে’ পরিণত করা হয়েছে বলে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে হামাসের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে ইরান। দেশটি হুঁশিয়ারি দিয়েছে, ইসরায়েল যদি ফিলিস্তিনের গাজায় বোমা হামলা ও  বেসামরিকদের হত্যা বন্ধ না করে তাহলে এই যুদ্ধ অন্যত্র ছড়িয়ে পড়তে পারে।

অন্যদিকে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে ইসরায়েলকে সমর্থন দেওয়া যুক্তরাষ্ট্র আশঙ্কা করছে, ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো যুদ্ধে জড়িয়ে যেতে পারে। যার পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ। এ কারণে তারা ইরান ও তাদের মিত্রদের যুদ্ধ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছে।

এদিকে গাজায় মানবিক সহায়তার জন্য অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। গত শুক্রবার মধ্যপ্রাচ্যের দেশ জর্ডান পরিষদের অধিবেশনে ওই প্রস্তাব দেয়, যার পক্ষে বিপুল ভোট পড়ে। প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় পরিষদের ১২০ সদস্য। বিপক্ষে ভোট দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ ১৪টি সদস্যরাষ্ট্র এবং ভোটদান থেকে বিরত থেকেছে ভারতসহ ৪৫ সদস্যরাষ্ট্র। সাধারণ পরিষদে তোলা ওই প্রস্তাবে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের বেসামরিক মানুষের বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাস ও নির্বিচার হামলাসহ’ সব সহিংস কর্মকান্ডের নিন্দাও জানানো হয়। একই সঙ্গে বেসামরিক লোকজনের সুরক্ষা ও বাধাহীন ত্রাণসহায়তার আহ্বান জানানো হয়।

উল্লেখ্য, শুক্রবার পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ৭ হাজার ৩২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ৬৬ শতাংশই নারী ও শিশু। একই সময়ে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের অভিযানে ১১০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। অন্যদিকে, হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছে।

সর্বশেষ খবর